রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে জাতিসংঘকে আরো জোরালো ভূমিকা রাখতে হবে

| শনিবার , ৫ এপ্রিল, ২০২৫ at ১০:২৮ পূর্বাহ্ণ

রোহিঙ্গাদের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা ও বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের দ্রুত মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের মাধ্যমে চলমান সংকট সমাধান সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে গৃহীত হয়েছে। ২৬ মার্চ মালয়েশিয়া এবং ফিনল্যান্ডের পৃষ্ঠপোষকতায় মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলিম ও অন্যান্য সংখ্যালঘু পরিস্থিতির ওপর উচ্চস্তরের সম্মেলনের পরিধি, পদ্ধতি, বিন্যাস এবং সংগঠন সম্পর্কিত একটি প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে এ তথ্য জানানো হয়।

পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে বলা হয়, জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি, রাষ্ট্রদূত মো. সালাহউদ্দিন নোমান চৌধুরী, উন্মুক্ত বিতর্ক অধিবেশনে হস্তক্ষেপ করেন এবং এ প্রস্তাবের ওপর ভোটের প্রস্তাব করেন। কারণ রাশিয়া বেশ কয়েকটি সংশোধনী প্রস্তাব করেছিল যা বাংলাদেশ গ্রহণ করেনি। সাধারণ পরিষদের সভাপতি ভোট আহ্বান করেন এবং ১৪১ ভোটের পক্ষে প্রস্তাবটি গৃহীত হয়। প্রস্তাবের বিরুদ্ধে কোনো ভোট পড়েনি। তবে ১০টি দেশ ভোটদানে বিরত থাকে।

ভবিষ্যতে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে এ প্রস্তাব গ্রহণ একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক, কারণ এটি এমন এক সময়ে এসেছে যখন ঢাকা সেপ্টেম্বরে নিউইয়র্কে রোহিঙ্গা সংকটের ওপর একটি বিশেষ শীর্ষ সম্মেলন আয়োজনের পরিকল্পনা করছে।

মানব সভ্যতার ক্রমবর্ধমান বিকাশের জন্য জাতিসংঘ গঠন ছিলো একটি সুখবর। দু’টি বিশ্বযুদ্ধের বিভীষিকার পর তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ সংঘটিত না হওয়াটাই জাতিসংঘের সবচেয়ে বড় সাফল্য। রোহিঙ্গা সমস্যা আমাদের সক্ষমতা ও সরলতার ওপর বড় আঘাত। এই সমস্যা সমাধানে জাতিসংঘ যে ভূমিকা পালন করছে, তা আগামীতে আরো জোরালো ভূমিকা রাখবে বলে বিশ্বনেতৃবৃন্দ আশা প্রকাশ করেন।

জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস যখন বাংলাদেশ সফরে এসেছেন, তখন কক্সবাজারের উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন শেষে তিনি বলেছিলেন, বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী নিজ দেশ মিয়ানমারে ফিরে যেতে চায়। এই জনগোষ্ঠীকে ফেরত পাঠাতে মিয়ানমারের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠা হওয়া জরুরি। তিনি বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করে আমি দুটি স্পষ্ট বার্তা পেয়েছি। প্রথমত, রোহিঙ্গারা নিজ দেশে ফিরে যেতে চায়। এটি তাদের অধিকার, তারা বঞ্চনার শিকার। আর ‘দ্বিতীয়ত, রোহিঙ্গারা আরও ভালো পরিবেশ চায় ক্যাম্পে। দুর্ভাগ্যবশত যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য অনেক দেশ সম্প্রতি নাটকীয়ভাবে মানবিক সহায়তা কমিয়ে দিয়েছে। এই কারণে আমাদের মানবিক সহায়তার মধ্যে খাবারের রেশন কমাতে হয়েছে। আমি প্রতিশ্রুতি দিয়েছি, আমি আমার জায়গা থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করব। যত সম্ভব আমি কথা বলব, যাতে করে ফান্ড পাওয়া যায় এবং এর থেকে আরও খারাপ পরিস্থিতি না আসে।

আসলে রোহিঙ্গা সংকটের চূড়ান্ত সমাধান হলো মর্যাদাপূর্ণ ও স্থায়িত্বশীল প্রত্যাবাসন এবং তা নিশ্চিত করতে মিয়ানমার সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগে আন্তর্জাতিক শক্তিগুলোর তৎপরতা আরও বহুগুণে বৃদ্ধি করতে হবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর টেকসই প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করার মূল দায়িত্ব মিয়ানমারের। বাংলাদেশ তাদেরকে মানবিক সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। এখন শুধু মানবিক সহায়তা দিলেই হবে না, আন্তর্জাতিক সমপ্রদায়কে মিয়ানমারের ওপর চাপ প্রয়োগের প্রচেষ্টা দ্বিগুণ করতে হবে।

ইতোপূর্বে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস দীর্ঘদিনের অমীমাংসিত রোহিঙ্গা সংকটকে একটি তাজা টাইম বোমা অভিহিত করে এটি যে কোনো সময় বিস্ফোরিত হতে পারে বলে আন্তর্জাতিক সমপ্রদায়কে সতর্ক করে দিয়েছিলেন। মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পুরো বিশ্বের জন্য উদ্বেগের বিষয় হলো, এটি যে কোনো সময় বিস্ফোরিত হতে পারে। যৌথ প্রচেষ্টার মাধ্যমে রোহিঙ্গা সংকটের দ্রুত ও আন্তর্জাতিক সমাধানের ওপর গুরুত্ব আরোপ করে তিনি বলেন, এ সমস্যার সমাধান বাংলাদেশের হাতে নয়, আন্তর্জাতিক সমপ্রদায়ের হাতে। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমরা বিষয়টি উত্থাপন করতে থাকব, আমরা অনির্দিষ্টকালের জন্য অপেক্ষা করতে পারি না। এটি এমন এক বিষয় যা আমাদের যত দ্রুত সম্ভব সমাধান করতে হবে। তিনি আরো বলেন, এটি বাংলাদেশের একার সমস্যা নয়, মালয়েশিয়ারও সমস্যা। আমাদের এই সমস্যার সমাধান খুঁজে বের করতে হবে এবং আমরা আসিয়ান, মালয়েশিয়ার সরকার ও আন্তর্জাতিক সমপ্রদায়ের মাধ্যমে একসঙ্গে কাজ করব।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যার সুদূরপ্রসারী সমাধানে আন্তর্জাতিক সমপ্রদায় যখন দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগছে, ঠিক এ সময়ে জাতিসংঘের এ প্রস্তাব গ্রহণ একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। এই সমস্যা সমাধানে জাতিসংঘ আরো জোরালো ভূমিকা রাখবে বলে তাঁরা আশা করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে