ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ২০২০ সালের নির্বাচনে ফজলে নূর তাপসকে বিজয়ী ঘোষণার ফল বাতিল করে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করেছে আদালত। ঢাকার প্রথম যুগ্ম জেলা জজ ও নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. নুরুল ইসলাম গতকাল বৃহস্পতিবার এ রায় দেন। সেই নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত শেখ ফজলে নূর তাপসকে মেয়র ঘোষণা করে সরকারের জারি করা গেজেটও বাতিল করা হয়েছে। সেই সঙ্গে ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী ইশরাক হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করা হয়েছে। সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার ছেলে এবং বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির সদস্য ইশরাক হোসেন রায়ের সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন। তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, মহান আল্লাহ দরবারে শুকরিয়া আদায় করছি। আমি ন্যায়বিচার পেয়েছি। আমি মেয়র হত পারব বা মেয়র হিসেবে শপথ নেব কি না সেটা সম্পূর্ণ দলীয় বিষয়। এসময় সাবেক তিন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা, কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ এবং কাজী হাবিবুল আউয়ালকে তাদের সাংবিধানিক দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন না করে পক্ষপাতদুষ্ট নির্বাচন করার জন্য বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান ইশরাক। খবর বিডিনিউজের।
২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন হয়। তাতে উত্তরে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম এবং দক্ষিণে ফজলে নূর তাপস মেয়র নির্বাচিত হন। নির্বাচন কমিশন ২ ফেব্রুয়ারি ভোটের গেজেট প্রকাশ করে। তারা শপথ গ্রহণ করে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। গতবছর আগস্টে আওয়ামী সরকারের পতনের পর দেশের সব সিটি করপোরেশনের মত ঢাকার দুই মেয়রের পদও শূন্য ঘোষণা করা হয়। সেই নির্বাচনে ঢাকা দক্ষিণের মেয়র পদে তাপস পেয়েছিলেন সোয়া চার লাখ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির ইশরাক পান ২ লাখ ৩৬ হাজার ভোট। নির্বাচনে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ফল বাতিল চেয়ে ২০২০ সালের ৩ মার্চ মামলা করেছিলেন ইশরাক।
তৎকালীন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদা, রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আবদুল বাতেন ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপসসহ মোট আটজনকে বিবাদী করা হয়েছিল সেখানে। ইশরাকের আইনজীবী তাহেরুল ইসলাম তৌহিদ বলেন, মামলায় ইশরাক হোসেনকে মেয়র ঘোষণার আবেদন করেছিলাম। আদালত আজ আমাদের পক্ষে রায় দিলেন। ইশরাক হোসেনকে মেয়র হিসেবে ঘোষণা দিলেন।
নির্বাচনী আইন অনুযায়ী ফলাফলের গেজেট প্রকাশের ৩০ দিনের মধ্যে নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে আবেদন করতে পারেন সংক্ষুব্ধ প্রার্থী বা তার মনোনীত ব্যক্তি। মামলার পর ১৮০ দিনের মধ্যে তা নিষ্পত্তি করার নিয়ম থাকলেও ইশরাকের ক্ষেত্রে সময় লাগল পাঁচ বছর। ওই নির্বাচনে জিতে ঢাকা উত্তরের মেয়র হওয়া আতিকুল ইসলামকে গত বছর ১৬ অক্টোবর রাতে রাজধানীর মহাখালী ডিওএইচএস এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ। পরে তাকে বিভিন্ন মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয় এবং রিমান্ডে নেওয়া হয়। বর্তমানে তিনি কারাগারে আছেন। অন্যদিকে দক্ষিণের সাবেক মেয়র তাপসের কোনো হদিস নেই। তিনি শেখ হাসিনা সরকারের পতনের আগেই দেশ ছেড়েছেন বলে গুঞ্জন রয়েছে।
সাবেক তিন সিইসির বিচার চান ইশরাক : ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের ফল নিয়ে মামলায় আদালতের রায় পক্ষে পাওয়ার পর সাবেক তিন প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন ইশরাক হোসেন। তিনি বলেছেন, সাংবিধানিকভাবে তাদের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল– তারা কোনো চাপে না পড়ে এবং কোনো কিছুর বশবর্তী না হয়ে কাজ করবে। কিন্তু সেটিতে তারা ব্যর্থ হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে বিচারিক প্রক্রিয়া শুরু করা উচিত।
২০২০ সালের নির্বাচনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে ইশরাক বলেন, সারা বাংলাদেশ, জাতি দিন–দুপুরে দেখেছেন ভোট ডাকাতি হয়েছে। প্রথম থেকে আমরা অভিযোগ করে আসছিলাম, বিভিন্নভাবে আমাদের প্রচার বাধাগ্রস্ত করা হচ্ছে। তখনকার বিএনপির কাউন্সিলর প্রার্থীদের বিনা মামলায় গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাওয়া হয়। আমাদের মিছিলের ওপর হামলা করা হয়। বহু নেতাকর্মীকে মেরে রক্তাক্ত করা হয়েছে। সর্বশেষ নির্বাচনের দিন মিডিয়ার ভাইদের নিয়ে সমস্ত কেন্দ্র যাই। সকাল সাড়ে ৯টা পর্যন্ত তারা কেন্দ্রই খোলেনি। এরপর এক থেকে দেড় ঘণ্টার মত কয়েকটা কেন্দ্র খোলা ছিল। পরবর্তীতে সমস্ত কেন্দ্র বন্ধ করে দেওয়া হয়।