আমাদের হামজা

ইয়াকুব রাসেল | শনিবার , ২২ মার্চ, ২০২৫ at ৯:১৫ পূর্বাহ্ণ

স্কুলে কায়ুম স্যারের হাতে মার খেয়ে রাস্তার পাশে গাছতলায় প্রিয় বন্ধু রহমতের সাথে গেজাচ্ছিল হামজা, সাথে স্যারের চৌদ্দ গোষ্ঠী উদ্ধার তো আছেই। হামজার অপরাধ, এমন পাখির বাসার মতো চুল নিয়ে স্কুলে আসতে বারবার নিষেধ করেছেন কায়ুম স্যারকিন্তু শখের চুল বলে কথা! মার খাবে, কিন্তু চুল কাটবে না হামজা। এদিকে বাবাকেও কিছু বলতে পারছে না ভয়ে। গেল সপ্তাহে বাবা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, ‘এলাকার দুই মুরুব্বী খুব বিরক্ত হামজার এই চুল নিয়ে। তাকে দেখে নাকি তাদের সন্তানরা খারাপ হয়ে যাচ্ছে।’ হামজা কোনোভাবেই বুঝে উঠতে পারে না, চুলের সাথে খারাপ হয়ে যাওয়ার কী সম্পর্ক! তার উপর এলাকার ফুটবল ম্যাচের দুই সিনিয়রের এন্ট্রি ফি সে না দিলে একাদশে তার জায়গা হবে না বলে জানিয়েছে রবিন ভাই। এসব নিয়ে কথা বলতে বলতে হঠাৎ তাদের চোখে পড়ে স্কুল থেকে বের হয়ে নিজের ডাইনোসর আমলের সাইকেলটা নিয়ে সোজা তাদের দিকেই আসছে কায়ুম স্যার। পালাতে যাবে, এমন সময় স্যারের জোরে ডাক, ‘এই হামজা, দাঁড়া! এক পাও নড়বি না, দাঁড়া!’ দুইজন পিছনে হাত দিয়ে জায়গাতেই স্টিল! কাছে এসেই স্যার সরাসরি হামজাকে বললেন, ‘এই, সাইকেলের পেছনে উঠ!’ হামজা রহমতের দিকে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করে, কী করবে। রহমত চোখের ইশারায় বুঝিয়ে দেয়, ‘কোনোভাবেই ওঠা যাবে না!’ এদিকে স্যার অলরেডি দ্বিতীয় দফায় চেঁচিয়ে উঠলেন, ‘এই হামজা, ওঠ! ওঠ, তারাতারি! ওঠ বলছিবাবার ‘ওঠ! ওঠ!’ শব্দে বিরক্ত হয়ে ঘুম ভেঙে যায় রহমতের। সেহরির সময় শেষ হতে তখন মাত্র ১৫ মিনিট বাকি! ফোনটা হাতে নিয়ে সরাসরি ফেসবুকে ঢুকল সে। রাতে দেওয়া স্ট্যাটাসটায় কে কে কমেন্ট করেছে, চেক করাটা জরুরি! এরই মাঝে সামনে এলো কোনো এক টিভি চ্যানেলের একটা ভিডিও ‘ভিডিওতে হামজা চৌধুরী কথা বলছেন সাংবাদিকদের সাথে। হামজা আজই এসেছেন বাংলাদেশে। বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলে খেলার জন্য কাল যোগ দেবেন দলের সাথে।’ আগ্রহ নিয়ে রহমতের চোখ সেই ভিডিওতে। এক সাংবাদিকের প্রশ্ন, ‘সাকিব আল হাসান এবং আপনার মধ্যে বেশ কিছুদিন ধরে তুলনা করা হচ্ছে, আসলে কে সেরা?’ এটা শুনেই রহমত ফোনের স্ক্রিন লক করে দিল। কোনোরকম উঠে মুখে একটু পানি দিয়ে খেতে বসলো। পাশেই তার বাবা মাকে উদ্দেশ্য করে বলছেন, ‘জীবনে এই প্রথম দেখলাম, কোনো জিনিসের দাম বেড়ে আবার কমতে! বিশেষ করে ডিমের দাম কমেছে এটা কোনোভাবেই মানতে পারছি না!’ এসব শুনছে আর খাচ্ছে রহমত। হুট করে মনে পড়ল, একটু আগেই ঘুমের মাঝে কী যেন স্বপ্ন দেখেছিল সে। কী যেনকোনোভাবেই মনে করতে পারছে না! তার মাঝেই মসজিদের মাইকে আজানের শব্দ।

লেখক : মীরাক্কেল তারকা, জি বাংলা

পূর্ববর্তী নিবন্ধনারীরা থেমে গেলে থেমে যাবে দেশ
পরবর্তী নিবন্ধআবির রাঙা মেয়ে