রাঙ্গুনিয়ার বিভিন্ন বাজারে ৩০–৪০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে কাচা মরিচ। তাই ভালো ফলনেও হতাশ চাষিরা। তবে হাইব্রিড মরিচ চাষে ভালো আয়ের প্রত্যাশা করছেন কৃষকরা। মরিচগুলো শুকিয়ে বিক্রি করে এই সফলতার প্রত্যাশা করেন তারা। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এবার উপজেলার তিন হাজার কৃষককে হাইব্রিড অনল জাতের মরিচ বীজ দেয়া হয়েছে। তারা ৬০ হেক্টর জমিতে এই বীজগুলো লাগিয়েছেন। সবমিলিয়ে এবার রাঙ্গুনিয়ায় ২৫৫ হেক্টরের অধিক জমিতে মরিচ আবাদ হয়েছে। এরমধ্যে আবাদের ৪৫ শতাংশ জমিতে হাইব্রিড জাতের মরিচ আবাদ হয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। আবাদকৃত জাতের মধ্যে ১২০ হেক্টর জমিতে হাটহাজারী ভেরাইটি এবং ২২ হেক্টর জমিতে স্থানীয় জাতের আবাদ হয়েছে। এছাড়া হাইব্রিড জাতের মধ্যে ২৮ হেক্টর জমিতে বিজলী এবং ৮৫ হেক্টর জমিতে ইন্দ্রিরা জাতের মরিচ আবাদ হয়েছে। তিন হাজার কৃষককে হাইব্রিড অনল জাতের বীজ দেয়া হয়েছে। তারা ৬০ হেক্টর জমিতে এই বীজগুলো লাগিয়েছেন।
সরেজমিনে উপজেলার বেতাগী ইউনিয়নে গিয়ে দেখা যায়, অসাধারণ ফলন হয়েছে হাইব্রিড মরিচের। যেখানে স্থানীয় মরিচের চাষ করে কৃষকরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, সেখানে হাইব্রিড মরিচ চাষ করে অধিক লাভের আশায় আছেন এতদ এলাকার চাষিরা। প্রতিটি মরিচ গাছেই দেড় থেকে দুই কেজি পরিমাণ মরিচ ধরেছে। রাঙ্গুনিয়া উপজেলার বেতাগী ইউনিয়ের রামগতির হাট সংলগ্ন কৃষি জমিতে মরিচ আবাদ করেছেন দিদারুল আলম চৌধুরী। এক বিঘা জমিতে হাইব্রিড (শুকনা মরিচ) জাতের চাষ করেছেন তিনি। ইতিমধ্যেই প্রতিটি গাছে দুই কেজি করে মরিচ ধরেছে। তিনি আশা করছেন প্রতিটি গাছে আরও অনেকদিন পর্যন্ত নতুন করে ফলন আসবে। তিনি জানান, সাধারণত ৫ কেজি কাঁচা মরিচ শুকালে এক কেজি শুকনা মরিচ পাওয়া যায়। হাইব্রিড জাতের মরিচ থেকে চার কেজি কাঁচা মরিচ শুকালে এক কেজি শুকনা মরিচ পাওয়া যায়। এই হিসেবে তিনি প্রতি গাছ থেকে ৫০০ গ্রাম শুকনা মরিচ পেতে পারেন। সব মিলিয়ে তিনি তার জমি থেকে শুকনা মরিচ পেতে পারে প্রায় ৮০০ থেকে ১০০০ কেজি পর্যন্ত। প্রতি কেজি চারশত টাকা হারে ধরলে তার তিন লাখ ২০ হাজার টাকা থেকে চার লাখ টাকা পর্যন্ত পেতে পারেন তিনি।
এ বিষয়ে উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা উত্তম কুমার শীল বলেন, কৃষক দিদারুল আলম চৌধুরী আমার সাথে যোগাযোগ করলে উনাকে ইন্দিরা মরিচ এবং অনন্ত প্লাস জাতের মরিচ চাষাবাদের পরামর্শ প্রদান করি। বর্তমানে তিনি তার এলাকায় একজন আদর্শ কৃষক হিসেবে সুপরিচিত। তার আশেপাশে যারা স্থানীয় জাতের মরিচের চাষাবাদ করেছেন তারা খুবই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। কিন্তু কৃষক দিদারুল আলম চৌধুরী হাইব্রিড ইন্দিরা এবং অনন্ত প্লাস জাতের মরিচ চাষ করে বেশ লাভবান হবেন দেখে হাইব্রিড জাতের মরিচ চাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন কৃষকরা।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইমরুল কায়েস বলেন, কৃষি অফিসে কঠোর তদারকি এবং আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার মরিচের ভালো ফলন হয়েছে। বাজারেও প্রচুর মরিচ আসায় দাম কম। তবে যারা হাইব্রিড মরিচ আবাদ করেছেন তারা শুকনো মরিচ বিক্রি করে ভালো লাভের মুখ দেখবেন। কারণ হাইব্রিড জাতের মরিচের রোগ এবং পোকার আক্রমণ স্থানীয় জাতের চাইতে কম এবং ফলন অনেক বেশি। তাই আমরা কৃষকদেরকে হাইব্রিড জাতের মরিচ চাষাবাদে উদ্বুদ্ধ করছি।