ইসলাম যে সহানুভূতি, পরস্পর মমত্ববোধ ও সাম্য–মৈত্রীর শিক্ষা দিয়েছে তার বাস্তবায়ন দেখা যায় রোজার মাসে। একটি দল ধনরত্ন ও ঐশ্বর্যের প্রাচুর্যে ডুবে থাকবে, অপর দল দারিদ্র্যের কশাঘাতে জর্জরিত হয়ে বিপর্যস্ত দিন কাটাবে তা ইসলাম চায় না। রোজার মাসে কঠিন সিয়াম সাধনার মাধ্যমে ভাগ্যবান ধনীরাও উপবাসের মর্মযাতনা উপলব্ধির সুযোগ পায়। গরিবের দুঃখপীড়িত জীবন ও ক্ষুধার কষ্ট ধনীরাও উপলব্ধি করে এই রোজার মাসে। সারা বছর গরিবেরা অর্ধাহারে অনাহারে থেকে জীবনযন্ত্রণায় ভোগে, এই রোজার মাসে সিয়াম সাধনা দ্বারা ধনী রোজাদাররাও গরিবের কষ্ট হাড়ে হাড়ে টের পায়। সিয়াম সাধনা ধনী গরিব সবার জন্য সমভাবে প্রযোজ্য। ধনী গরিব একইভাবে সারাদিন উপোস থাকে। একই সময় শেষ রাতে সাহরির জন্য ওঠে, রাতে তারাবির নামাজে ও তাহাজ্জুদ নামাজে একাকার হয়ে যায়। সন্ধ্যা হওয়ার আগেই সবাই ইফতারের জন্য একই টেবিলে জড়ো হয়। এটাই মূলত রোজার সাম্য মৈত্রী ও সমপ্রীতির শিক্ষা। ধনী রোজাদাররা এই মাসে গরিবদের প্রতি সহানুভূতিশীল হয়ে উঠেন এবং তাদের মাঝে গরিবদের প্রতি দরদ ও মমত্ববোধ জেগে ওঠে– এটাই সিয়াম সাধনার তাৎপর্য ও দর্শন। অন্যদিকে বিত্তবান রোজাদাররা এ রোজার মাসে যাকাত–ফিতরা, দান সদকাহ অনুদান দিয়ে গরিবদের পাশে দাঁড়ায়। এভাবে সমাজে মানুষে মানুষে সাম্য ও ভারসাম্য প্রতিষ্ঠিত হয়। কেউ অনাহারে কষ্টে দিন কাটাবে, আবার বিত্তবানরা প্রাচুর্যে ডুবে থাকবে এটা ইসলামের শিক্ষা নয়। ধনী–দরিদ্রের মাঝে থাকা পর্বতসম বৈষম্য ও দূরত্ব ঘুচে যায় এ রোজার মাসে। এই মাসে গরিবরাও হাসিখুশিতে ও সচ্ছলতার সঙ্গে দিন যাপনের সুযোগ পায় বিত্তবানদের দান–অনুদানের মাধ্যমে। পবিত্র রমজান বিশেষভাবে মুসলমানদেরকে পরোপকারের, সহানুভূতির, অপরের প্রতি মমত্ববোধ প্রকাশ করার শিক্ষা দেয়। এতেই রোজার মাহাত্ম্য ও তাৎপর্য নিহিত। রোজাকে বিশেষভাবে আল্লাহপাকের সঙ্গে সম্পর্কিত করার কারণ এই যে, অন্যান্য ইবাদতে লোক দেখানোর সম্ভাবনা থাকে, কিন্তু রোজায় এ সম্ভাবনা নেই। রোজা শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য রাখা হয়। রোজাতে আল্লাহ পাকের গুণের প্রকাশ পায়। আল্লাহপাক পানাহার ও অন্যান্য যাবতীয় প্রয়োজন থেকে মুক্ত ও পবিত্র। রোজাদারও ক্ষণিকের জন্য এ গুণটি অর্জনে সচেষ্ট হয়। সিয়াম সাধনা দ্বারা কঠিন ধৈর্য ও সবরের প্রকাশ পায়। আর প্রিয় নবী (দ.) বলেছেন, ধৈর্যের প্রতিদান হচ্ছে জান্নাত। আজ থেকে মাহে রমজানের শেষ দশক শুরু হয়েছে। নাজাত তথা জাহান্নাম থেকে পরিত্রাণ লাভের অবারিত সুযোগ লাভ করতে পারেন রোজাদাররা। নিবিষ্টভাবে সিয়াম সাধনা, তারাবির নামাজ, কোরআন তেলাওয়াত, তাহাজ্জুদ নামাজ, দুআ দুরুদ শরিফ পাঠ, জাকাত–ফিতরা দান সদকাহ ইত্যাদিতে রত থেকে আমরা মহান আল্লাহর নৈকট্য ও সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারি। আপনার চারপাশে থাকা দরিদ্র অভাবী সুবিধা বঞ্চিত মানুষের মাঝে বেশি বেশি দান সদকাহ করুন। গরিব পরিবারের ছেলে–মেয়েদের ঈদের নতুন জামা কাপড় কিনে দিয়ে রোজার সহমর্মিতা ও সাম্যের শিক্ষায় উজ্জীবিত হোন।