ট্রাম্পের তহবিল কমানোর প্রশংসায় চীন

ভয়েস অব আমেরিকা

| বুধবার , ১৯ মার্চ, ২০২৫ at ৪:৩৭ পূর্বাহ্ণ

যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় সরকারের অর্থায়নে চলা গণমাধ্যম ভয়েস অব আমেরিকার (ভিওএ) তহবিল কমিয়ে এর আকার ছোট করে ফেলতে ট্রাম্পের দেওয়া নির্বাহী আদেশের প্রশংসা করেছে চীনের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম। ‘ভিওএকে নিজেদের সরকারই নোংরা ন্যাকড়ার মতো ছুড়ে ফেলেছে’ বলে মন্তব্য করেছে চীনের রাষ্ট্রীয় পত্রিকা গ্লোবাল টাইমস।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের গত শুক্রবারের ওই সিদ্ধান্তে সরকারি তহবিল হারাচ্ছে ভয়েস অব আমেরিকা (ভিওএ) ও রেডিও ফ্রি এশিয়া (আরএফএ)-সহ বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক সমপ্রচারমাধ্যম। হোয়াইট হাউজ বলছে, এ সিদ্ধান্ত যুক্তরাষ্ট্রের করদাতাদের অর্থের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করবে এবং চরমপন্থি প্রচারণার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা হিসেবে কাজ করবে। তবে সমালোচকরা একে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর আঘাত হিসেবে দেখছেন।

ট্রাম্পে তহবিল কাটছাঁটের সিদ্ধান্তে গণমাধ্যমগুলোর কয়েক হাজার কর্মী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। কেবল ভয়েস অব আমেরিকারই প্রায় ১,৩০০ কর্মীকে গত শুক্রবারের নির্বাহী আদেশের পর থেকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। এই সিদ্ধান্তকে গণতন্ত্রের জন্য বিপর্যয় বলে সমালোচনা করেছেন অনেকে। তবে চীনের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম গ্লোবাল টাইমস একে স্বাগত জানিয়ে বলেছে, ভিওএ দীর্ঘদিন ধরে চীনের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়েছে। গণমাধ্যমটির সাবেক সম্পাদক হু শিজিন বলেছেন, ভয়েস অব আমেরিকা এবং রেডিও ফ্রি এশিয়া, যারা চীনের বিরুদ্ধে বিষোদগার করত, তারা এখন কার্যত অচল হয়ে গেছে। এটি সত্যিই ভাল খবর। খবর বিডিনিউজের।

চীন, ক্যাম্বোডিয়া, রাশিয়া এবং উত্তর কোরিয়ার মতো দেশে যেখানে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা মারাত্মকভাবে দমন করা হয়, সেখানে ভয়েস অব আমেরিকা, রেডিও ফ্রি এশিয়া ও রেডিও ফ্রি ইউরোপের মতো গণমাধ্যমগুলো তাদের প্রতিবেদনের জন্য আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি পেয়েছে এবং পরিচিতি অর্জন করেছে। যদিও এই দেশগুলোর কোনও কোনওটিতে এই গণমাধ্যমগুলো নিষিদ্ধ হয়েছে। যেমন: ভয়েস অব আমেরিকা (ভিওএ) চীনে নিষিদ্ধ। তারপরও চীনের মানুষ শর্টওয়েভ রেডিও কিংবা ভিপিএন এর মাধ্যমে ভয়েস অব আমেরিকার সমপ্রচার শুনতে পায়।

রেডিও পরিষেবা ভয়েস অব আমেরিকা (ভিওএ) ২০২২ সালে চীনে কোভিড লকডাউনের বিরুদ্ধে বিরল প্রতিবাদের ঘটনা নিয়ে প্রতিবেদন করে গতবছর ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। কিন্তু এবছর ভিওএ’র তহবিল কমানোর ট্রাম্পের পদক্ষেপের পর চীনে একে স্বাগত জানিয়েছে এবং ভিওএকে ‘মিথ্যার কারখানা’ আখ্যা দিয়েছে। তবে ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের ফলে যুক্তরাষ্ট্রের বৈশ্বিক সমপ্রচার সংস্থার অধীনে থাকা ভয়েস অব আমেরিকা, রেডিও ফ্রি এশিয়া ও রেডিও ফ্রি ইউরোপের মতো সংস্থাগুলোর ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। ভিওএ এবং আরএফএ দীর্ঘদিন ধরে চীনের সংখ্যালঘু উইঘুর মুসলিমদের ওপর নিপীড়ন কিংবা উত্তর কোরিয়ার পক্ষত্যাগ করে পালিয়ে যাওয়াদের কাহিনী নিয়ে প্রতিবেদন করে এসেছে।

ভিওএএর সাংবাদিক, যিনি ট্রাম্পের আদেশের ফলে চাকরি হারিয়েছেন, তিনি বলেন, ভিওএএর মতো সংবাদমাধ্যমের অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়লে নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার বদলে একমুখী প্রচারই প্রতিষ্ঠিত হবে। ভিওএএর পরিচালক মাইকেল আব্রামোভিৎস বলেছেন, আমেরিকা যখন স্বাধীন গণমাধ্যমের বাজেট কমাচ্ছে, তখন চীন, রাশিয়া ও ইরানের মতও দেশগুলো মিথ্যা প্রচারণায় কোটি কোটি ডলার ঢালছে।

চেক প্রজাতন্ত্র ইতোমধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়নের কাছে হস্তক্ষেপ চেয়ে আবেদন করেছে যেন তারা রেডিও ফ্রি ইউরোপ চালিয়ে যেতে পারে। রেডিও ফ্রি এশিয়ার প্রধান নির্বাহী বে ফাং বলেন, ট্রাম্পের আদেশ স্বৈরশাসকদের জন্য এক বড় জয়, যারা চায় সত্য লুকিয়ে রাখতে। চীনের সরকারনিয়ন্ত্রিত গণমাধ্যম এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানালেও সাধারণ নাগরিকদের প্রতিক্রিয়া জানা কঠিন, কারণ দেশটির ইন্টারনেট কঠোরভাবে সেন্সর করা হয়। তবে চীনের বাইরে থাকা অনেকে এ সিদ্ধান্তে হতাশ।

বেলজিয়ামে নির্বাসিত এক চীনা ভিন্নমতাবলম্বী ডু ওয়েন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন, ভিওএ এবং আরএফএ শুধু সংবাদমাধ্যম নয়, বরং হাজারো মানুষকে সত্য জানার সুযোগ দিয়েছে। যদি স্বাধীন বিশ্ব চুপ করে থাকে, তাহলে একদিন কেবল স্বৈরশাসকদের কণ্ঠই শোনা যাবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধদীর্ঘ ক্যারিয়ারে নতুন প্রাপ্তি জয়ার
পরবর্তী নিবন্ধহন্ডুরাসে বিমান দুর্ঘটনায় নিহত ৬