মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম জোরদার করতে হবে বাড়াতে হবে জনসচেতনতা

| বুধবার , ১৯ মার্চ, ২০২৫ at ৪:৩০ পূর্বাহ্ণ

প্রতি বছর মশা নির্মূলে কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ পায় সিটি করপোরেশন। কিন্তু মশা কমে না, দিন দিন মশার প্রকোপ বাড়ছে। এই বিপুল পরিমাণ অর্থের সঠিক ব্যবহার হলে তো নগরীতে এভাবে মশা থাকার কথা না। হয়তো সমস্যা আছে কোথাও। সমস্যা চিহ্নিত করতে হবে। এলাকায় এলাকায় ওষুধ ঠিকঠাক মতো ছিটায় কিনা তার মনিটরিং করতে হবে। মশা ঠেকাতেই হবে, নইলে নিস্তার নেই।

গত ১৬ মার্চ দৈনিক আজাদীতে ‘নগরে তিন কারণে বেড়েছে মশার উপদ্রব’ শীর্ষক এক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, মশক নিধনে নগরের প্রতিটি ওয়ার্ডে দৈনিক ২০ লিটার করে কীটনাশক স্প্রে করলেও বছরে প্রয়োজন ৩ লাখ লিটার। বিপরীতে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) প্রতি বছর গড়ে মাত্র ২৫ থেকে ৩০ হাজার লিটার কীটনাশক সংগ্রহ করে। ফলে প্রতিদিন পরিপূর্ণভাবে মশক নিধনে কীটনাশক স্প্রে করা সম্ভব হয় না। এদিকে মশার জীবনচক্র অনুযায়ী, লার্ভা থেকে পিউপা হয়ে পরিপূর্ণ মশায় রূপ নিতে সময় লাগে আট থেকে ১০ দিন। ফলে চাহিদার বিপরীতে ঘাটতি থাকায় চসিক প্রতিদিন কীটনাশক স্প্রে করতে না পারায় মশার উপদ্রব বেড়ে যায় নগরে। যেমন পূর্ণাঙ্গ মশা ধ্বংসকারী ‘এডাল্টিসাইড’ সংকট থাকায় এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে স্প্রে বন্ধ রয়েছে। ফলে সমপ্রতি শহরজুড়ে বেড়েছে মশার উৎপাত। এতে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন নগরবাসী। দিনরাত মশার কামড়ে অসহনীয় যন্ত্রণায় আছেন তারা।

কীটতত্ত্ববিদরা বলছেন, এখন শহরে যে মশার উপদ্রব বেড়েছে তা কিউলেঙ মশা। এ মশার জন্ম হয় শুষ্ক মৌসুমে। অর্থাৎ ডিসেম্বর মাস থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত এর প্রকোপ বেশি থাকে। এরপর বর্ষা শুরু হলে বাড়ে ডেঙ্গুর প্রকোপ। আবার তাপমাত্রা বাড়লে বৃদ্ধি পায় কিউলেঙ মশার উপদ্রব। সাধারণত তাপমাত্রা ২৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি হলে কিউলেক্সের উপদ্রব বৃদ্ধি পায়। সমপ্রতি তাপমাত্রাও বেড়েছে। গতকালও নগরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩১ দশমিক ৮ ডিগি সেলসিয়াস। ফলে প্রাকৃতিকভাবেও মশার উপদ্রব বৃদ্ধির জন্য উপযুক্ত সময় এখন। এছাড়া কিউলেক্স মশা সাধারণত দূষিত পানিতে জন্মায়। এদিকে শহরের নালানর্দমাগুলো ময়লাআবর্জনায় ভরে আছে; যা কিউলেক্স মশা বৃদ্ধির জন্য সহায়ক। শহরের প্রধান খালগুলো ছাড়াও সেকেন্ডারি ড্রেনগুলোও আবর্জনায় পূর্ণ; যা কিউলেক্স মশার লার্ভা বিস্তারে ভূমিকা রাখছে। খালনালাগুলো ভরাট থাকায় বন্ধ আছে স্বাভাবিক পানি প্রবাহও। অথচ পানি প্রবাহ ঠিক থাকলে খাল হয়ে মশার লার্ভা চলে যায় নদী বা সমুদ্রে। অর্থাৎ তাপমাত্রাজনিত কারণে প্রাকৃতিকভাবে মশার বংশ বিস্তার যেমন হচ্ছে, তেমনি মনুষ্য সৃষ্ট কারণেও খালনালা বন্ধ থাকায় বাড়ছে মশার উপদ্রব। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে চসিকের মশক নিধন কার্যক্রমের ধীরগতি। সব মিলিয়ে শহরে বেড়েছে মশার উপদ্রব।

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন এর আগে বলেছেন, যে কোনো উপায়ে মশা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। তিনি নতুন নতুন কৌশল উদ্ভাবনের নির্দেশ দেন। নতুন ওষুধের সন্ধানের পাশাপাশি কিউলেক্স মশা নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনে লার্ভা খেতে পারে এমন মাছ বা কীটপতঙ্গ ব্যবহারের পরামর্শ দেন। এবার তিনি বলেন, মশা নিয়ন্ত্রণে কিছু বিকল্পের কথা ভাবছি। যে সমস্ত পরিচ্ছন্নকর্মী মশার স্প্রে করার ক্ষেত্রে গাফেলতি করবে তাদেরকে অবশ্যই পানিশমেন্টের আওতায় আনব।

মশক নিধনের ব্যাপারে সিটি মেয়র ডা. শাহাদাতের যেমন দৃঢ়তাপূর্ণ অবস্থান নিয়েছেন, তাকে স্বাগত জানান নগরবাসী। তাঁর প্রশংসা করে তাঁরা বলেন, মশার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ নগরজীবন। ঘরেবাইরে বাসা কিংবা অফিস সব জায়গাতেই মশার উপদ্রব। মশক নিধনে সিটি করপোরেশনের নামমাত্র ওষুধ ছিটানো ছাড়া তেমন কোনো কার্যক্রম ইতোপূর্বে পরিলক্ষিত হয়নি। ফলে সিটি মেয়র মশার ব্যাপারে যেভাবে জিরো টলারেন্সের ঘোষণা দিলেন, তাতে আমরা আনন্দিত।

জনস্বাস্থ্যবিদদের মতে, মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম জোরদার করার পাশাপাশি জনগণের সচেতনতা ও সম্পৃক্ততা বাড়াতে হবে। কিন্তু জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে সিটি করপোরেশনের কার্যক্রমে ঘাটতি রয়েছে। এক্ষেত্রে জনগণকে সচেতন করার কোনো বিকল্প নেই। কীটতত্ত্ববিদরা মশা নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত মশক ব্যবস্থাপনার কথা বলেন। একদিকে মশা নিধনের ওষুধ ছিটাতে হবে, অন্যদিকে ডোবা, নালা, জলাশয় পরিষ্কার রাখতে হবে। মশার হাত থেকে রেহাই পেতে হলে উভয় দায়িত্ব সমভাবে করতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে