চট্টগ্রামের চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ও বিচারকের নাম ব্যবহার করে জাল সিল ও স্বাক্ষর জালিয়াতি করে ভুয়া হলফনামা তৈরির অভিযোগে এক নারীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। তার নাম রোজী আক্তার। আকবরশাহ থানাধীন ফিরোজশাহ এলাকার বাসিন্দা তিনি। গতকাল মঙ্গলবার নগরীর কোতোয়ালী থানায় চট্টগ্রামের চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের নাজির মো. আবুল কালাম আজাদ মামলাটি দায়ের করেন।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, ১৩ মার্চ দুপুরে চট্টগ্রামের চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের নেজারত শাখায় রাফিউল আজিম নামে একজন আইনজীবী তার মোবাইলে রাখা একটি হলফনামার ৩টি ননজুডিসিয়াল স্ট্যাম্পের ছবি নাজির আবুল কালাম আজাদকে দেখিয়ে বলেন, তিনি একইরকম একটি হলফনামা সম্পাদন করতে চান। তখন নাজির তার মোবাইলে প্রদর্শিত ৩টি ছবি দেখে ও পড়ে বুঝতে পারেন, হলফনামাটি চট্টগ্রামের চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সম্পাদিত না হলেও আদালত এবং চট্টগ্রামের অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সরকার হাসান শাহরিয়ারের ৫টি সিল বানিয়ে জাল স্বাক্ষর দিয়ে হলফনামাটি বানানো হয়েছে। আবুল কালাম উক্ত হলফনামাটি রেজিস্টারের সাথে যাচাই করেন। এতে দেখা যায়, জাল–জালিয়াতির মাধ্যমে বানানো হলফনামার ক্রমিক নং–১৩৮০/২৫, তারিখ–২৬/০২/২০২৫ এবং হলফকারী বিবাদী রোজী আক্তার হলেও প্রকৃত হলফনামা রেজিস্টারে ১৩৮০/২৫ ক্রমিকে হলফকারীর নাম রয়েছে মো. ইয়ামিন রহমান।
এজাহারে আরো বলা হয়, বিষয়টি বুঝতে পেরে নাজির আবুল কালাম আজাদ আইনজীবী রাফিউল আজিমের মোবাইলে রক্ষিত উক্ত ভুয়া হলফনামাটি তার মোবাইলে পাঠানোর জন্য বলেন। আইনজীবী রাফিউল নাজিরের হোয়াটসঅ্যাপে ছবিগুলো পাঠান। এছাড়া আইনজীবী রাফিউল আজিম জানান, ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনে উক্ত ভুয়া হলফনামাটি দাখিল করা হয়েছে এবং ওয়ারিশ সনদ সংক্রান্তে একই ধরনের হলফনামা সম্পাদনের জন্য তার মক্কেলকেও বলা হয়েছে।
এজাহারে বলা হয়, পরবর্তীতে উক্ত ভুয়া হলফনামার ছবিগুলো চট্টগ্রামের অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সরকার হাসান শাহরিয়ারকে দেখালে তিনি জানান, ওই হলফনামার সিল ও স্বাক্ষরগুলো তার নয়। প্রকৃতপক্ষে উক্ত বিবাদী রোজী আক্তার ও অজ্ঞাতনামা ৪/৫ জন পরস্পর যোগসাজসে সিটি কর্পোরেশনসহ অন্যান্য কাজে অবৈধ সুবিধা লাভের উদ্দেশ্যে জাল–জালিয়াতির আশ্রয়ে প্রতারণার মাধ্যমে চট্টগ্রামের চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের ৫টি ভুয়া সিল, বিচারকের ৩টি ভুয়া স্বাক্ষর ও ভুয়া ক্রমিক নম্বর ব্যবহার করে জাল হলফনামাটি তৈরি করেছেন।
নাজির আবুল কালাম আজাদ আজাদীকে বলেন, আদালত ও বিচারকের নাম ব্যবহার করে জাল সিল ও স্বাক্ষর জালিয়াতি করে ভুয়া ও জাল হলফনামা তৈরি করা হয়েছে। রোজী আক্তারসহ অন্য কোনো সক্রিয় চক্র কিংবা কোনো ব্যক্তি এই অবৈধ কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত কিনা তা খুঁজে বের করে তাদের আইনের আওতায় আনা আবশ্যক। এজন্য থানায় মামলা করা হয়েছে।
কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রহিম আজাদীকে বলেন, আদালত ও বিচারকের নাম ব্যবহার করে জাল সিল ও স্বাক্ষর জালিয়াতি করে ভুয়া ও জাল হলফনামা তৈরি সংক্রান্ত একটি অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগটি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।