‘ডেড-এন্ড জব’ : ১২টি লক্ষণ ও করণীয়

এম. এ. মুকিত চৌধুরী | সোমবার , ১৭ মার্চ, ২০২৫ at ৪:৫০ পূর্বাহ্ণ

কর্মজীবনে অগ্রগতি সবারই কাম্য। কিন্তু অনেক সময় আমরা বুঝতে পারি না যে, আমরা এমন একটি চাকরিতে আটকে গেছি যেখানে ভবিষ্যতের কোনো সম্ভাবনা নেই। এই ধরনের চাকরিকে বলা হয় ‘ডেডএন্ড জব’। চাকরির শুরুতে হয়তো বোঝা যায় না, তবে কিছু লক্ষণ স্পষ্টভাবে ইঙ্গিত দেয় যে, এটি আপনার ক্যারিয়ারের জন্য কোনো ভালো জায়গা নয়।

নিবন্ধে ১২টি লক্ষণের কথা বলব, যা বুঝতে পারলে আপনি আগে থেকেই সতর্ক হতে পারবেন এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে পারবেন। তবে মনে রাখবেন, যদি আপনার পদক্ষেপগুলো দ্রুত কোনো পরিবর্তন না আনে, তাহলে ক্যারিয়ার বাঁচানোর সবচেয়ে কার্যকর উপায় হচ্ছে চাকরি পরিবর্তনের পরিকল্পনা করা।

) উন্নতির কোনো সুযোগ নেই : কোনো পদোন্নতি নেই, নতুন স্কিল শেখার সুযোগ নেই, ক্যারিয়ারের কোনো স্পষ্ট দিকনির্দেশনাও নেই? এটি সবচেয়ে বড় সংকেত যে আপনার চাকরির ভবিষ্যৎ খুব একটা উজ্জ্বল নয়। অনেক প্রতিষ্ঠান কর্মীদের শুধুমাত্র একটি নির্দিষ্ট পর্যায়ে রাখতেই আগ্রহী থাকে, ফলে তারা তাদের দক্ষতা বা নতুন প্রযুক্তি শেখার সুযোগ দেয় না।

করণীয়: নতুন চ্যালেঞ্জের খোঁজ করুন, নিজে থেকেই দায়িত্ব নেওয়ার চেষ্টা করুন। যদি আপনার প্রতিষ্ঠান সুযোগ না দেয়, তবে অনলাইন কোর্স, ওয়ার্কশপ বা নেটওয়ার্কিংয়ের মাধ্যমে নিজের দক্ষতা বাড়ান। পাশাপাশি, নিজের প্রতিষ্ঠানেই নতুন দায়িত্ব চেয়ে আবেদন করুন।

) বেতন বৃদ্ধি নেই : আপনার বেতন যদি দীর্ঘদিন ধরে অপরিবর্তিত থাকে বা খুব সামান্য বৃদ্ধি পায়, তাহলে বুঝতে হবে কোম্পানি আপনার মূল্যায়ন করছে না। বাজারের তুলনায় যদি আপনার বেতন কম হয়, তাহলে এটি আরও বেশি চিন্তার কারণ হতে পারে।

করণীয়: বাজারদর সম্পর্কে জানুন, নিজের সাফল্য নথিভুক্ত করুন, এবং আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বেতন বৃদ্ধির আলোচনা করুন। যদি প্রতিষ্ঠান আপনাকে সঠিক মূল্যায়ন করতে না চায়, তাহলে নতুন চাকরির সন্ধান করা উত্তম। প্রয়োজনে চাকরির অফার সংগ্রহ করে বর্তমান চাকরিতে বেতন আলোচনার একটি কৌশল হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন।

) অদূরদর্শী নেতৃত্ব : আপনার বস যদি সুস্পষ্ট ভিশন না দেখান, কিংবা প্রতিষ্ঠানের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা অস্পষ্ট হয়, তাহলে সেটি আপনার জন্য দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতিকর হতে পারে। শক্তিশালী নেতৃত্ব ছাড়া প্রতিষ্ঠান বা কর্মচারীদের উন্নতি সম্ভব নয়।

করণীয়: বাইরে ভালো মেন্টর খুঁজুন, নিজে নেতৃত্বের গুণাবলি অর্জন করুন। বিভিন্ন নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের অভিজ্ঞতা পড়ুন এবং প্রয়োজনে তাঁদের সাথে যোগাযোগ করুন। নিজেদের টিমে নেতৃত্ব নেওয়ার চেষ্টা করুন, যাতে আপনার গুরুত্ব বাড়ে।

) সবসময় ক্লান্তি আর কাজের চাপে থাকেন : কাজের পরিমাণ কমছে না, কিন্তু আপনি প্রতিদিন ক্লান্ত হয়ে যাচ্ছেন? এটি সুস্পষ্ট লক্ষণ যে কাজের ভারসাম্য ঠিক নেই। দীর্ঘদিন অতিরিক্ত চাপ নিয়ে কাজ করলে মানসিক ও শারীরিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারেন।

করণীয়: কাজের অগ্রাধিকার ঠিক করুন, সীমা নির্ধারণ করুন, প্রয়োজনে ‘না’ বলতে শিখুন। প্রয়োজনে বসের সাথে আলোচনা করুন যাতে কাজের ভারসাম্য ঠিক রাখা যায়। কর্মদিবসের সময়সীমা মেনে চলার চেষ্টা করুন।

) স্বীকৃতির অভাব : আপনার কঠোর পরিশ্রম কেউ দেখে না, প্রশংসাও করে না? কর্মক্ষেত্রে স্বীকৃতি পাওয়া কেবল বেতন বৃদ্ধির জন্যই নয়, বরং এটি আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধির জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। যদি প্রতিষ্ঠান আপনার অবদানের মূল্যায়ন না করে, তাহলে এটি আপনার ভবিষ্যৎ উন্নতির পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে।

করণীয়: সহকর্মীদের সাফল্য উদযাপন করুন, নিজের কাজের কথা উর্ধ্বতনদের জানান। স্বেচ্ছায় উপস্থাপনা বা রিপোর্টিং করার সুযোগ নিন যাতে কর্তৃপক্ষ আপনার অবদান বুঝতে পারে। সোশ্যাল মিডিয়ায় পেশাদার নেটওয়ার্কিং চালিয়ে যান।

) দক্ষতা ব্যবহারের সুযোগ নেই : আপনার দক্ষতা থাকলেও বারবার একই ধরনের পুনরাবৃত্তিমূলক কাজ করতে হচ্ছে? দীর্ঘদিন একই কাজ করলে আপনার কর্মস্পৃহা কমে যেতে পারে এবং ক্যারিয়ার বিকাশের সুযোগও বাধাগ্রস্ত হয়।

করণীয়: নতুন স্কিল শেখার সুযোগ খুঁজুন, বাড়তি প্রকল্পে যুক্ত হওয়ার চেষ্টা করুন। যদি প্রতিষ্ঠান এসবের সুযোগ না দেয়, তাহলে বাইরে থেকে দক্ষতা বাড়ানোর উদ্যোগ নিন। ফ্রিল্যান্সিং বা পার্টটাইম প্রজেক্ট নিন।

) কর্মক্ষেত্রে বিষাক্ত পরিবেশ : অফিসের রাজনীতি, পক্ষপাতিত্ব, ভয়ভীতির সংস্কৃতি? এগুলো কর্মক্ষেত্রের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।

করণীয়: এসব এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন, প্রয়োজনে সমস্যা নথিভুক্ত করুন এবং নিজের মানসিক শান্তি বজায় রাখুন। যদি পরিবেশ অতিরিক্ত খারাপ হয়, তবে চাকরি পরিবর্তনের পরিকল্পনা করুন। কর্মক্ষেত্রের বাইরে পেশাদার নেটওয়ার্ক তৈরি করুন।

) স্বচ্ছতার অভাব : কোম্পানির পরিকল্পনা সম্পর্কে আপনাকে কখনো কিছু জানানো হয় না? এটি কর্মীদের প্রতি প্রতিষ্ঠানের অবজ্ঞার পরিচায়ক।

করণীয়: সোজাসাপ্টা প্রশ্ন করুন, ইঙ্গিত বোঝার চেষ্টা করুন। নিজে থেকে তথ্য সংগ্রহ করে কৌশল নির্ধারণ করুন।

) ফিডব্যাকের অভাব : আপনার কাজে কোনো প্রতিক্রিয়া নেই, আপনার পরামর্শও কেউ শোনে না? ফিডব্যাক ছাড়া কর্মীর দক্ষতা বিকাশ অসম্ভব।

করণীয়: সরাসরি ফিডব্যাক চেয়ে নিন, নিজেই নিজের কাজ মূল্যায়ন করুন। নিজের দক্ষতা বৃদ্ধি করে অন্য জায়গায় নতুন সুযোগ খুঁজুন।

১০) সহকর্মীরা অনুপ্রেরণা হারিয়ে ফেলেছে : আপনার সহকর্মীদের মধ্যে কাজের প্রতি উদ্দীপনার অভাব থাকলে বুঝতে হবে প্রতিষ্ঠান কর্মীদের অনুপ্রাণিত করতে পারছে না।

করণীয়: সহকর্মীদের সঙ্গে কথা বলুন, নিজেদের কাজের প্রতি আগ্রহ বাড়ানোর চেষ্টা করুন। প্রয়োজনে নতুন কিছু শিখুন এবং অন্যদেরও অনুপ্রাণিত করুন।

১১) পরিবর্তনের প্রতি অনীহা : কোম্পানি পুরনো পদ্ধতির ওপরই নির্ভর করছে, নতুন কিছু শেখার বা পরিবর্তনের আগ্রহ নেই?

করণীয়: আধুনিক টুল ও কৌশল শিখুন, নিজের উদ্যোগে ছোটখাটো পরিবর্তন আনার চেষ্টা করুন। প্রতিষ্ঠান যদি নতুনত্বকে স্বাগত না জানায়, তবে এটি চিন্তার বিষয়।

১২) আপনার মনের কথা : আপনার ভেতর থেকে কি মনে হচ্ছে, এই চাকরি আপনাকে কোনো দিকে এগিয়ে নিচ্ছে না?

করণীয়: নিজের অনুভূতিকে গুরুত্ব দিন। অনেকদিন থাকলে চাকরি ছাড়ার সিদ্ধান্ত আরও কঠিন হয়ে যাবে। তাই সঠিক সময়েই পদক্ষেপ নিন।

পরবর্তী ধাপে কী করবেন?

জীবন খুব ছোট। তাই এমন একটি চাকরিতে আটকে থাকার কোনো মানে নেই, যেখানে আপনার দক্ষতা, সময় ও স্বপ্নের অপচয় হচ্ছে। তাই দেরি না করে নিজের ক্যারিয়ারের সঠিক সিদ্ধান্ত নিন।

লেখক: সিনিয়র ম্যানেজার, স্ট্র্যাটেজিক সেলস, এলিট পেইন্ট এন্ড কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রীজ লিঃ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধস্মৃতিতে ৬৯’র গণঅভ্যুত্থান ও আবদুল্লাহ আল নোমান
পরবর্তী নিবন্ধবর্জ্য ব্যবস্থাপনায় হাঁস-মুরগির খাবার