ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে স্থাপিত ওজন স্কেল প্রত্যাহার করুন

| রবিবার , ১৬ মার্চ, ২০২৫ at ৪:৩৩ পূর্বাহ্ণ

খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ এসোসিয়েশনের এক সভায় ঢাকাচট্টগ্রাম মহাসড়কে স্থাপিত ওজন স্কেল প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন। গত ১২ মার্চ আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, ‘খাতুনগঞ্জ শুধু চট্টগ্রাম নয় বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম প্রাণকেন্দ্র। তবে এটি ঠিক নানা কারণে খাতুনগঞ্জের আগের মতো জৌলুস নেই। এক সময় এই খাতুনগঞ্জ থেকে সারাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে পণ্য পরিবহন করা হতো। খাতুনগঞ্জে ব্যবসায়ীরা আবার বৈষম্যের শিকারও হয়েছে। বিশেষ করে ঢাকাচট্টগ্রাম মহাসড়কে ওজন নিয়ন্ত্রণ স্কেলের কারণে এখানকার ব্যবসায়ীরা ট্রাকে ১৩ টনের বেশি পণ্য পরিবহন করতে পারছেন না। অথচ ঢাকাচট্টগ্রাম মহাসড়ক ছাড়াও দেশের আর কোনো মহাসড়কে ওজন নিয়ন্ত্রণ স্কেল নেই। পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রীএমপিদের দুয়ারে দুয়ারে খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা ধর্ণা দিয়েও কোনো সুরাহা পায়নি।’

ঢাকাচট্টগ্রাম মহাসড়কের ওজন স্কেল ব্যবসার জন্য ‘বিষফোঁড়া’সে কথাটি অনেক আগে থেকে দাবি করে আসছেন ব্যবসায়ী নেতারা। এমনকি বিগত সরকারের মন্ত্রী নেতারাও বলেছিলেন, ঢাকাচট্টগ্রাম মহাসড়কে ওজন স্কেল নিয়ে ভিন্ন নিয়ম থাকা উচিত নয়। বলেছিলেন, ‘ঢাকাচট্টগ্রাম মহাসড়কের এক্সেল লোড নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের আপত্তি শুনছি। ওজন স্কেল নিয়ে সারাদেশের জন্য এক নিয়ম আর ঢাকাচট্টগ্রাম মহাসড়কের জন্য ভিন্ন নিয়ম, এটা আসলে থাকা উচিত নয়। কারণ আমাদের পরিশেষে ভোক্তাদের বিষয়টি দেখতে হবে। ট্রাকে পণ্য পরিবহনে যদি এভাবে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়, তাহলে পণ্যের দামের ওপর প্রভাব পড়বে। এতে জিনিসপত্রের দাম বাড়বে। যা সাধারণ মানুষের জন্যে হবে কষ্টকর। আবারো বলবো, এই সিস্টেমটা পরিবর্তন করতে। সারাদেশে যেভাবে আছে, সেভাবেই ঢাকাচট্টগ্রাম মহাসড়কে করা হোক। এখন অনেক বড় এক্সেলের গাড়ি হচ্ছে। এতে লোড ডিস্ট্রিবিউট হয়ে যাচ্ছে। সায়েন্টিফিকভাবে দেখে শুনে একটা চিন্তা করা উচিত বলে আমরা মনে করি।’

চাক্তাই খাতুনগঞ্জ আড়ত সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, চট্টগ্রামের চাক্তাই খাতুনগঞ্জে বিশেষ করে ছোলা, মশুর ডাল, সাদা মটর এবং গম জাতীয় পণ্যগুলো আনলোড হয়ে গুদামজাত করা হতো। এরপর সরবরাহ হতো সারাদেশে। কিন্তু এখন ঢাকাচট্টগ্রাম মহাসড়কে ওজন স্কেলের কারণে চাক্তাই খাতুনগঞ্জের ব্যবসা চলে যাচ্ছে নারায়ণগঞ্জে। আমদানিকারকরা এখন আর চট্টগ্রামে পণ্য আনলোড করতে চান না। সরকারের সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, মহাসড়কের সুরক্ষার জন্য ওজন নিয়ন্ত্রণ আইন করা হয়েছে। তাহলে শুধুমাত্র ঢাকাচট্টগ্রাম মহাসড়কের জন্য কেন এই আইন? দেশে তো মহাসড়ক আরো আছে। মহাসড়ক যদি ওজনের চাপে নষ্ট হয়ে যায় তাহলে সরকারের উচিত আধুনিক নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করে সড়কের উন্নয়ন করা। ওজন নিয়ন্ত্রণের কারণে চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা বারবার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

চাক্তাই খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা ইতোপূর্বে অনেকবার ঢাকাচট্টগ্রাম মহাসড়কের সীতাকুণ্ডের দারোগারহাট এবং কুমিল্লার দাউদকান্দিতে স্থাপিত ওজন স্কেল প্রত্যহারের দাবি জানিয়েছেন। সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ব্যবসায়ীরা তাঁদের বক্তব্য তুলে ধরেছেন। বলেছেন, চাক্তাই খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীদের প্রধান সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে ঢাকাচট্টগ্রাম মহাসড়কের সীতাকুণ্ডের দারোগাহাট এবং কুমিল্লার দাউদকান্দিতে স্থাপিত ওজন স্কেল। এই ওজন স্কেলের কারণে বর্তমানে চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা ছয় চাকার একটি ট্রাক কিংবা কাভার্ডভ্যানে ১৩ টনের বেশি পণ্য আনতে পারছেন না। ঢাকাচট্টগ্রাম মহাসড়ক ছাড়াও দেশের আর কোনো মহাসড়কে ওজন স্কেল নেই। ফলে চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। এক দেশে কখনো দুই আইন চলতে পারে না। দেশের আমদানি রপ্তানি বাণিজ্যের সিংহভাগ চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে পরিচালিত হয়। এই বন্দর দিয়ে আমদানিকৃত বিভিন্ন শিল্পের কাঁচামাল ও সকল ধরনের পণ্য দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পরিবহন করা হয়ে থাকে। তাই ব্যবসা বাণিজ্যের প্রতিবন্ধক এই ওজন নিয়ন্ত্রণ স্কেল প্রত্যাহার করা জরুরি। তাঁরা বলেন, ‘ওজন স্কেলের কারণে আমরা দিন দিন পিছিয়ে পড়ছি। তাই আমরা ওজন স্কেল প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি।’

ওজন স্কেলে কাউকে হয়রানি করা না হলেও এ ধরনের উদ্যোগ স্বাভাবিক গতিপথ বাধাগ্রস্ত করে। বিষয়টি নিয়ে ভাববার জন্য আমরা অন্তর্বর্তী সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে