নগরের লালখান বাজার, মেহেদীবাগ, পাঁচলাইশসহ প্রায় ২১৮০ হেক্টর এলাকার পানি নিষ্কাশনে ভূমিকা রাখে হিজরা খাল। ১৯৯৫ সালের ড্রেনেজ মাস্টার প্ল্যানে ‘ড্রেনেজ এরিয়া–৫’ এ অন্তর্ভুক্ত খালটির গুরুত্ব বিবেচনায় জলাবদ্ধতা নিরসনে গৃহীত সিডিএ’র মেগা প্রকল্পেও অর্ন্তভুক্ত করা হয়। তবে শেষ মুহূর্তে এসে সিডিএ’র আর্থিক সংকট থাকায় মেগা প্রকল্প থেকে বাদ যাচ্ছে খালটি।
শুধু হিজরা খাল নয়, মেগা প্রকল্পে থেকে বাদ যাচ্ছে ১২টি সিল্ট ট্র্যাপ (বালি আটকানোর ফাঁদ), ড্রেন পরিষ্কার ও মেরামত, ড্রেন সম্প্রসারণ, খাল পাড়ে ফুটপাত নির্মাণ, খাল পাড়ে রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণ, স্ট্রিট লাইট স্থাপন এবং ভূমি অধিগ্রহণসহ মোট ৮ ধরনের উন্নয়ন কাজ।
প্রকল্প থেকে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ বাদ যাওয়ার কারণ হিসেবে জানা গেছে, মেগা প্রকল্পটির আরডিপিপি (সংশোধিত উন্নয়ন প্রস্তাবনা) অনুযায়ী ব্যয় বেড়েছে ৩ হাজার ১২ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। যার ৫০ শতাংশ বা ১ হাজার ৫০৬ কোটি ২৮ লাখ টাকা সিডিএ’র নিজস্ব তহবিল ও সরকার থেকে ঋণ নিয়ে সিডিএ’র ব্যয় করার নির্দেশনা আছে। যা খরচের সামর্থ্য নেই সিডিএ’র। তাই ১ হাজার ৫০৬ কোটি ২৮ টাকা সমপরিমাণ অর্থের কাজ প্রকল্প থেকে বাদ যাচ্ছে। এ বিষয়ে সম্প্রতি গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছেন সিডিএ চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. নুরুল করিম। ওই চিঠি সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালের আগস্ট মাসে চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল পুনঃখনন, সমপ্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন শীর্ষক মেগা প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদন পায় ৫ হাজার ৬১৬ কোটি ৪৯ লাখ টাকায়। পরবর্তীতে সংশোধন করে প্রকল্প ব্যয় ধরা হয় ৮ হাজার ৬২৬ কোটি ৬২ লাখ টাকা। বর্ধিত ৩ হাজার ১২ কোটি ৫৭ লাখ টাকার ৫০ শতাংশ বা ১ হাজার ৫০৬ কোটি ২৮ লাখ টাকা দিচ্ছে সরকার। বাকি ১ হাজার ৫০৬ কোটি ২৮ লাখ টাকা সিডিএ’র নিজস্ব তহবিল ও সরকার থেকে ঋণ নিয়ে সিডিএ’কে খরচ করতে হবে। এর মধ্যে ৭৫৩ কোটি ১৪ লাখ সিডিএ’র নিজস্ব তহবিল এবং সমপরিমাণ অর্থ জিওবি ঋণ নিতে হবে। কিন্তু এ অর্থ খরচের সামর্থ্য নেই সিডিএ’র। তাই ১ হাজার ৫০৬ কোটি ২৮ লাখ টাকার পুরোটাই সরকারি অনুদান হিসেবে দেয়ার অনুরোধ জানান সিডিএ চেয়ারম্যান। অন্যথায় জিওবি ঋণ ও সিডিএ অর্থায়নের সমপরিমাণ কাজ অসমাপ্ত রেখেই প্রকল্পটি সমাপ্ত করতে হবে বলে মন্ত্রণালয়কে দেয়া চিঠিতে জানান তিনি। এদিকে পত্র প্রেরণের প্রায় দুই মাস পার হলেও সাড়া দেয় দেয়নি মন্ত্রণালয়। তবে মৌখিকভাবে সরকারি অনুদান দেয়া হবে না বলে মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানিয়ে দেয় সিডিএ’কে। এই অবস্থায় প্রকল্পের অঙ্গ কমানোর প্রস্তাব করেছে সিডিএ।
এ বিষয়ে সিডিএ চেয়ারম্যান মো. নুরুল করিম বলেন, চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল পুনঃখনন, সমপ্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় সিডিএকে নিজস্ব তহবিল থেকে সাড়ে সাতশ’ কোটি টাকা এবং ঋণ হিসেবে সাড়ে সাতশ’ কোটি টাকা খরচ করতে হবে। কিন্তু এই সামর্থ্য সিডিএর নেই। তাই অনুদান হিসেবে দিতে হবে। যদি টাকা পাওয়া না যায় তাহলে গুরুত্বপূর্ণ কাজ বাদ দিতে হবে।
উল্লেখ্য, মেগা প্রকল্পের এখন পর্যন্ত ৮০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। আগামী বর্ষার আগে ৮৫ শতাংশ কাজ শেষ করতে চায় প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা।
বাদ যাবে যেসব কাজ :
সিডিএ’র প্রস্তুতকৃত তালিকা অনুযায়ী, হিজরা খালের উন্নয়নে মেগা প্রকল্পে প্রস্তাবিত ৬টি অঙ্গ বাদ যাবে। এগুলো হচ্ছে ভূমি অধিগ্রহণ, স্থাপনার ক্ষতিপূরণ, রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণ, খালের মাটি খনন ও গভীরতা বৃদ্ধি, পিটসি গার্ডার ব্রিজ স্থাপন ও আরসিসি কালভার্ট স্থাপন। এতে ব্যয় সাশ্রয় হবে ৬৩১ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। তবে খালটি শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত উল্লেখ করে পৃথক কোনো প্রকল্প নিয়ে খালটির কাজ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়।
এদিকে হিজরা খাল ছাড়াও ২৮৩ কোটি টাকা ৪৮ লাখ টাকার ১২টি সিল্ট ট্রাপ নির্মাণও বাদ যাবে প্রকল্প থেকে। একইভাবে ১৯৮ কোটি ৪ লাখ টাকার নতুন সাইড ড্রেন নির্মাণ, ৩১৭ কোটি ১ লাখ টাকার স্থিত রোড সাইড ড্রেন পরিষ্কার ও মেরামত, ১৫৮ কোটি ৩২ লাখ টাকার ড্রেন সম্প্রসারণ, ১০ কোটি টাকায় খাল পাড়ে ৫ ফুট চওড়া ফুটপাত নির্মাণ, ৩৬৩ কোটি ৫৫ লাখ টাকায় বিভিন্ন খাল পাড়ে রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণ, ৩ কোটি টাকা ৯০ লাখ টাকার স্ট্রিট লাইট স্থাপন বাদ যাবে প্রকল্প থেকে।
এ বিষয়ে জানার জন্য মেগা প্রকল্পের পরিচালক সিডিএ’র প্রকৌশলী আহমেদ মঈনুদ্দিনকে একাধিকভাবে কল দিলেও রিসিভ করেন নি। প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা সেনাবাহিনীর প্রকল্প পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফেরদৌস আহমেদ আজাদীকে বলেন, শহরের চার–পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ খালের একটি হিজরা খাল। শহরের জলাবদ্ধতার মেজর পার্ট হিজরা খালের জন্য হয়। খালটির কাজ শেষ না হলে জলাবদ্ধতার কিছুটা সমস্যা তো থাকবেই।