এখন চলছে মাহে রমজানের দ্বিতীয় পর্ব মাগফেরাতের দশক। বারোটি রোজা আমরা পার করে এসেছি। আজ তেরটি রোজা পার করছি। মাহে রমজানে আমাদেরকে গরিব দুখী মানুষের মাঝে বেশি বেশি দান সদকাহ করে যেতে হবে। কেননা পরোপকারিতা, দানশীলতা ও বদান্যতা বড় একটি মানবিক গুণ–বৈশিষ্ট্য। মানুষের উপকার করা এবং মানুষের কল্যাণ করা ইসলামের দৃষ্টিতে বড় পুণ্যময় কাজ। তেমনি রোজার মাসে অভাবক্লিষ্ট দরিদ্র অসহায় মানুষের মাঝে বেশি বেশি দান সদকাহ প্রদান করাও অতীব পুণ্যময় আমল। মাহে রমজানে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দানশীলতা অনেক গুণ বেড়ে যেত। সারা বছর তো প্রিয় নবীজী (দ.) কে এমনিতে দানশীল, পরোপকারী ও পরকল্যাণে উৎসর্গীত দেখা যেত, রোজার মাস এলে তাঁর দানশীলতার মাত্রা বাতাসের গতিশীলতার চেয়েও বেড়ে যেত বলে হাদিসগ্রন্থে উল্লেখ রয়েছে। দানশীলতা ও একে অন্যের প্রতি সহমর্মিতা মানুষের বড় একটি গুণ। সহমর্মিতা, সৌহার্দ্য ও দানশীলতার চর্চা রোজার মাসে বেশি বেশি করা প্রয়োজন। কেননা এ মাসে একটি পুণ্যের প্রতিদান মেলে ৭০ থেকে ৭০০ গুণ পর্যন্ত। আপনার চারপাশে অনেক অভাবগ্রস্ত দরিদ্র অসহায় মানুষ আছেন, যারা এই রোজার মাসেও আর্থিক অক্ষমতা ও অসচ্ছলতার দরুণ ভালোভাবে হাসিখুশিতে দিন যাপন করতে পারেন না। অনুরূপভাবে আপনার আত্মীয়স্বজনের মধ্যেও হয়তো অনেক গরিব ও দরিদ্র ব্যক্তি আছেন, যারা চক্ষুলজ্জায় কারো কাছে হাত পাতেন না। কারো কাছে সাহায্য সহায়তা চাইতে তারা কুণ্ঠা বা লজ্জাবোধ করেন। এমন গরিব আত্মীয়স্বজন পাড়া পড়শী খুঁজে খুঁজে তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে আপনাকে। এটা আপনার ওপর নৈতিক, মানবিক ও দ্বীনি দায়িত্ব। কোরআন মজিদে আল্লাহপাকের নির্দেশনা-‘ফা’তি যাল কুরবা হাক্কাহু’–অর্থাৎ ‘তোমরা নিকটাত্মীয়ের হক আদায় করো।’ (সুরা রুম, ৩৮ নং আয়াত)। ইসলামের মধ্যে উত্তম কাজ কোনটি এর উত্তরে প্রিয় নবী (দ.) বলেন, মানুষকে খাওয়ানো এবং পরস্পর সালাম বিনিময় করা। এভাবে কোরআন–হাদিস শরিফের বহু স্থানে গরিব আত্মীয়স্বজন ও পাড়া প্রতিবেশীসহ গরিব অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর দিক নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। হযরত আয়েশা (রা.) হতে বর্ণিত হাদিসে রয়েছে, প্রিয় নবীর (দ.) কাছে সকালে যদি ওহুদ পাহাড় পরিমাণ ধন সম্পদ থাকতো, দিন শেষে মাগরিবের আগেই তা তিনি মানুষের মাঝে বণ্টন করে দিতেন। হাদিসে বলা হয়েছে, ‘দানশীলতা জান্নাতের একটি বৃক্ষ। যা তাকে জান্নাতে পৌঁছে দেবে’ (মিশকাতুল মাসাবিহ)। অন্য হাদিসে আছে, ‘প্রিয় নবী (দ.) রোজার মাসে সাহায্যপ্রার্থীদের বেশি বেশি দান সদকাহ করতেন।’ (ইমাম বায়হাকি, শুয়াবুল ঈমান)। রোজার মাসে গরিব অসচ্ছল জনসাধারণের মাঝে ইফতার ও সাহরি সামগ্রী বণ্টনের বর্তমানে যে ইতিবাচক প্রবণতা দেখা যায় তা অবশ্যই প্রশংসনীয়। এতে ইসলামী মানবিক নির্দেশনাও প্রতিফলিত হচ্ছে। এই মহিমান্বিত ফজিলতপূর্ণ মাহে রমজানে গরিব দুখীদের মাঝে বেশি বেশি দান সদকাহ, সাহরি ও ইফতার সামগ্রী বিতরণের মাধ্যমে আমরা মানবিক ও দ্বীনি দায়িত্ব পালন করতে পারি।