৬ কন্যার এখন কী হবে

মেয়েদের ঈদের কাপড়ও কিনে দিয়ে যেতে পারলেন না রিকশা চালক রুহুল আমিন

মুহাম্মদ এরশাদ, চন্দনাইশ | শুক্রবার , ১৪ মার্চ, ২০২৫ at ৫:১৪ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রামকক্সবাজার মহাসড়কের দোহাজারী পৌরসদরে বাস চাপায় নিহত ব্যাটারি রিকশা চালক রুহুল আমিনের ৬ কন্যা সন্তানের এখন কি হবে? এমন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে স্থানীয় জনমনে। স্ত্রী, ৬ কন্যা সন্তানের ভরণপোষণের একমাত্র ভরসা ছিলেন রুহুল আমিন। সারাদিন রিকশা চালিয়ে যা আয় হতো তা দিয়ে চলতো সংসার ও কন্যাদের পড়ালেখার খরচ। এবার ৬ মেয়েকে ঈদের নতুন জামাকাপড়ও কিনে দিয়ে যেতে পারলেন না রুহুল আমিন।

এলাকাবাসী জানান, একটি ছেলে সন্তানের আশায় একে একে ৬টি কন্যা সন্তানের জন্ম হলো রুহুল আমিনের সংসারে। এরমধ্যে সর্ব কনিষ্ট কন্যার বয়স মাত্র ২৫ দিন। এখনও তার নামও রাখা হয়নি।

দুর্ঘটনার পর গতকাল নিহত রুহুল আমিনের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, জরাজীর্ণ দুই কক্ষের ছোট্ট একটি সেমিপাকা ঘর রুহুল আমিনের। ওই দুই রুমে বসবাস করতো পরিবারের সবাই। পিতার শোকে ৬ কন্যা সন্তানের কান্না যেন থামছেই না। মাত্র ২৫ দিনের কন্যা শিশুটিও যেন বুঝে গেছে এ পৃথিবীতে তার সবচেয়ে বড় আশ্রয়স্থল পিতা চলে গেছেন না ফেরার দেশে। রুহুল আমিনের ৬ কন্যা সন্তানের মধ্যে বড় মেয়ে উম্মে সুলতানা বিজ্ঞান বিভাগ নিয়ে পড়ছে গাছবাড়িয়া সরকারি কলেজে ইন্টার ১ম বর্ষে, দ্বিতীয় মেয়ে তাসফিয়া সুলতানা রিপা পড়ছে দোহাজারী জামিজুরী গার্লস হাই স্কুলের নবম শ্রেণিতে, তৃতীয় মেয়ে আলিফা পড়ে জামিজুরী মাদ্ররাসার ৪র্থ শ্রেণিতে আর ৪র্থ মেয়ে ওয়াকিয়া পড়ে ২য় শ্রেণিতে। তার ৬ কন্যা সন্তান ঘরের এক পাশে দাঁড়িয়ে কাঁদছেন পিতার শোকে। বড় বোনের কোলে অঝোরে কেঁদে যাচ্ছে মাত্র ২৫ দিন বয়সী শিশুটিও। আড়াই বছরের শিশু মা ফাতেমা, ২য় শ্রেণি পড়ুয়া ওয়াকিয়া এবং ৪র্থ শ্রেণির আলিফাও কাঁদছে বড়বোন উম্মে সুলতানার পাশে দাঁড়িয়ে। এই মর্মান্তিক দৃশ্য যারাই দেখছেন চোখের পানি ধরে রাখতে পারছেন না কেউ।

নিহত রুহুল আমিনের ছোট ভাই রুহুল কাদের জানান, তার বড় ভাই বিগত দুই আড়াই বছর ধরে রিকশা চালিয়ে পরিবারের ভরণপোষণ ও মেয়েদের পড়ালেখার খরচ বহন করে আসছিল। বৃহস্পতিবার সকাল ৮টার দিকে ভাড়া নিয়ে দোহাজারী সদরে গিয়েছিল। ঘাতক বাস তার ভাইয়ের রিকশার পেছনে চাপা দিলে ঘটনাস্থলে সে মারা যায়। এখন তার ছোট ছোট ৬ মেয়ের ভবিষ্যৎ কি হবে, কিভাবে পড়ালেখা করে বড় হবে কিছুই যেন জানা নেই তাদের। সাজানোগোছানো একটি সংসার ছিল। সবকিছু তছনছ করে দিয়ে গেছে। ৬ কন্যা সন্তানের পুরো ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। ৬ মেয়ের জন্য ঈদের জামাকাপড়ও কিনে দিয়ে যেতে পারল না। একটি বাস তাদের সবার ঈদের আনন্দও কেড়ে নিয়েছে। স্থানীয় সাইফুল ইসলাম জানান, খুব ভালো মনের মানুষ ছিলেন রুহুল আমিন। ভাড়া দিক না দিক পথে যাকেই পান তুলে নিতেন নিজের রিকশায়।

এদিকে খবর পেয়ে চন্দনাইশ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও দোহাজারী পৌর প্রশাসক ডিপ্লোমেসি চাকমা নিহত রুহুল আমিনের পরিবারে গিয়ে তার ৬ কন্যা সন্তানের খোঁজখবর নেন এবং পৌরসভার পক্ষ থেকে আর্থিক সহযোগিতা প্রদান করেন। আগামীতেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে বলে জানান তিনি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধট্রেনে ঈদযাত্রার অগ্রিম টিকিট আজ থেকে বিক্রি
পরবর্তী নিবন্ধমাত্র ৩০ সেকেন্ডের ব্যবধানে বেঁচে গেলেন ইসমত ও তার ছেলে