সফল হতে চাওয়া মানুষের অসাধারণ গুণ। মানবজীবনের বিচিত্র অভিজ্ঞতা ও কর্মদক্ষতা দিয়ে মানুষ এগিয়ে যায়। এই এগিয়ে যাওয়ার অন্যতম মাধ্যম হলো শিক্ষা। এটি স্ব–উন্নয়নে মনোযোগী হওয়া শেখায়। যা ব্যক্তি জীবন থেকে শুরু করে সবকিছুতে প্রভাব রাখে এবং স্ব–উন্নয়নে মনোযোগী হলে খুবই ইতিবাচক ফলাফল আসে। তবে সবার আগে একটি ছোট শব্দের কথা আসে যা দেখতে ছোট মনে হলেও এর বিস্তৃতি বিশাল। এটি সম্পর্কে সবার যত্নবান হওয়াই শ্রেয় এবং সচেতন ব্যক্তিরা এই সম্পর্কে যথেষ্ট অবগত। সেটা হলো পরিকল্পনা।
পরিকল্পনা কিভাবে সঠিকভাবে সাজানো হয় এই আইডিয়াটা পাওয়ার কথা শিক্ষাকাল থেকে। শিক্ষা হলো সবকিছুর শুরু। তবে পরিতাপের বিষয় হলো আমাদের শিক্ষা মাধ্যমে একটি সৃজনশীল ব্যবস্থা বিদ্যমান সত্ত্বেও বাস্তবিক কিছু বিষয় অনুপস্থিত। যেমন, শিক্ষার অন্যতম উদ্দেশ্য হলো একটি কর্মমুখী ক্যারিয়ার। কিন্তু একজন শিক্ষার্থী শিক্ষা জীবনের শেষে পৌঁছেও তার উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে সঠিক গাইডলাইন পরিপূর্ণ পায় না। এই বিষয়টি বিষদভাবে বিবেচনায় নিয়ে কয়েকজন অভিজ্ঞ উদ্যোমি তরুণ ‘ক্যারিয়ার ম্যাপ’ নামক একটি তথ্যবহুল বই সম্পাদনা করেছেন যেটার বিস্তারিত নিয়ে আজকের আলোচনা। যেখানে শিক্ষা জীবনের কিছু অপূর্ণতার বিষয় ফুঠে উঠেছে যা বাস্তবিক সত্য।
প্রত্যেকের স্বপ্ন থাকে পড়াশোনা শেষ করে আদর্শ ক্যারিয়ার গঠন করে সমাজে নিজের পাশাপাশি পরিবারের মুখ উজ্জ্বল করা। যার জন্য সঠিক পরিকল্পনা ও পূর্বপ্রস্তুতির অভাবে অনেকেরই সে স্বপ্ন পূরণ হয় না। সুষ্ঠু পরিকল্পনা অনুযায়ী নিজেকে গড়ে তোলার জন্য ছাত্রজীবন থেকেই প্রস্তুতি নেওয়া আবশ্যক। তবে এই পরিকল্পনার জন্য সমৃদ্ধ সহায়ক হতে পারে ক্যারিয়ার ম্যাপ। যেখানে লেখকগণ দেশের সকল চাকরির বিস্তারিত খুব নিখুঁতভাবে বর্ণনা করেছেন। সরকারি, বেসরকারি, স্বায়ত্বশাসিত, আধা–সরকারি ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানে ক্যারিয়ার গড়া যাদের লক্ষ্য তারা বইটিতে পাবেন সকল চাকরির কার্যপরিধি, প্রবেশ প্রক্রিয়া, বেতন কাঠামো, সুযোগ–সুবিধা, বৈশিষ্ট, পদোন্নতি ইত্যাদির বিষদ আলোচনা। যা সম্পর্কে আপনার পরিপূর্ণ পড়াশোনাহীন কাঙ্ক্ষিত লক্ষে আগানো অগোছালো হবে। ১৬ অধ্যায়ে বিভক্ত এবং ৩৫২ পৃষ্ঠায় বিস্তৃত বইটি পড়ে ক্যারিয়ার বা পেশা নির্বাচনে স্পষ্ট ধারনা পাবেন।
বইটি নিয়ে কাজ করেছেন মূলত তিনজন তরুণ। তাদের মধ্যে কায়সার মাহমুদ ফয়সাল মানব সম্পদ ব্যবস্থাপক। মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম একটি কোম্পানিতে মার্কেটিং পেশায় নিয়োজিত। বলা যায়, তারা শিক্ষা জীবন শেষ করে কোথায় ভালো ক্যারিয়ার হবে বা তাদের পঠিত সাবজেক্টে কোন কোন সেক্টরে সুবিধা আছে এর পরিপূর্ণ দিকনির্দেশনার অভাববোধ থেকেই হয়তো এরকম সৃজনশীল বই রচনার চিন্তা করছে। যাতে তাদের পরবর্তী শিক্ষার্থীরা একটি পরিপূর্ণ গাইডলাইন পায়।
রকিবুল হক সায়েম লেখকদের অন্যতম। তিনি পেশায় একজন ব্যাংকার। তিনিসহ লেখকদের পেশাগত অভিজ্ঞতা থেকে আরো অনেক বিষয় আলোকপাত করেছেন। বইটির প্রচ্ছদ, মলাট, কাগজের মান, ডিজাইনেও তারা শৈল্পিক ছোঁয়া এনেছেন। এক একটি বিষয়ের ধারাবাহিকতায় শব্দের অভূতপূর্ব সৌন্দর্য প্রশংসনীয়।
ক্যারিয়ার ম্যাপ শুধু যারা চাকরির জন্য অপেক্ষা করছে তাদের জন্য নয়। রবং যারা ব্যক্তিগতভাবে একটু স্বাধীন পেশাকে প্রাধান্য দেয় তাদের জন্যেও বিষদ আইডিয়া রয়েছে। যেমন, পৃষ্ঠা নং ৩৩৮ থেকে ৩৫২ পর্যন্ত স্বাধীন পেশা শিরোনামে বিষদ তথ্য যোগ করেছে। সাথে পড়াশোনার পাশাপাশি কিছু জবের ইনফরমেশন তুলে এনেছে। প্রফেশনাল বায়োডাটা লেখার নিয়ম ও চাকরি খোঁজার ওয়েবসাইট এবং কৌশল নিয়েও আলোচনা করেছে।
চাকরির বাজারের পরিধি তুলনামূলক খুবই ছোট। কিন্তু বইটি এই ছোট পরিধিতে প্রতিযোগিতায় এগিয়ে রাখতে সহায়ক ভুমিকা রাখবে। ক্যারিয়ার গড়ার আগে আপনি কি চাচ্ছেন, আপনি কোন বিষয়ে আগ্রহী, অভিজ্ঞ, পঠিত বিষয়ে কোন কোন সেক্টরে সুযোগ রয়েছে প্রভৃতি বিষয় অন্য কজন থেকে আপনাকে অনেক এগিয়ে রাখবে।
বইয়ের মলাটে বাংলাদেশের একমাত্র তথ্যবহুল ক্যারিয়ার নির্বাচন সহায়ক বই উল্লেখ রয়েছে। কথাটার পরিপূর্ণতা যতটা না লেখায় বাস্তব আরো সমৃদ্ধ। এমন চমৎকৃত উদ্যোগের জন্য লেখকদের সৃজনশীলতা নয় সাহসেরও প্রশংসা করতে হয়।
বইটিতে আরো যা যা আছে, প্রতিরক্ষা ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীতে (সেনা, বিমান, নৌ, পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, কোস্ট গার্ড, ফায়ার সার্ভিস, আনসার, কারারক্ষী) ক্যারিয়ারের বিস্তারিত। বিসিএসে ক্যারিয়ারের বিস্তারিত (ক্যাডার, নন–ক্যাডারের সকল পদ, বিভাগ, নিয়োগ প্রক্রিয়া, পদোন্নতি ও সুযোগ–সুবিধা)। সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধা–সরকারি প্রতিষ্ঠানের তালিকাসহ– ১ম থেকে ২০ গ্রেডের চাকরির বিভাগ অনুযায়ী পদবী, নিয়োগ প্রক্রিয়া, বেতন পদ্ধতি, পদোন্নতি ও সুযোগ–সুবিধা। ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে (বাংলাদেশ ব্যাংক, রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাংক, বেসরকারি ব্যাংক, ইসলামী বাণিজ্যিক ব্যাংক, বিদেশী ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং এনজিও) ক্যারিয়ারের বিস্তারিত। সকল প্রতিষ্ঠানের পদসোপান নীতি। সেবা খাত সমূহের বিস্তারিত। যেমন, টেলিকম, গ্যাস, বিদ্যুৎ, জ্বালানি। স্বাস্থ্য খাতে (অ্যালোপেথিক, চক্ষু, দন্ত, ইউনানি, আয়ুর্বেদিক, হোমিওপ্যাথিক, ফিজিওথ্যারাপিস্ট, পল্লী চিকিৎসক, নার্স, বায়ু মেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং, ফার্মাসিস্ট, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট) ক্যারিয়ারের বিস্তারিত। আইন ও বিচার বিভাগে ক্যারিয়ার। যেমন, সহকারী জজ, আদালতের আইনজীবী, আয়কর আইনজীবী, কর্পোরেট আইনজীবী, অন্যান্য সেক্টরে আইনজীবীদের ক্যারিয়ার সুবিধা প্রভৃতি। শিক্ষা ও গবেষণা (বিশ্ববিদ্যালয়, এনটিআরসি, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কারিগরি শিক্ষা, গবেষণা খাত)।
এছাড়াও পেশা অনুযায়ী বিভাগ ভিত্তিক ক্যারিয়ার (এইচআর, এডমিন, কমপ্লায়েন্স, হিসাব ও ফাইন্যান্স, সাপ্লাই চেইন, কমার্শিয়াল, সেলস এন্ড মার্কেটিং, ইন্টারনাল অডিট, বিজনেস ডেভেলপমেন্ট, আইট, মার্চেন্ডাইজিং, কাস্টমার সার্ভিস)। শিল্প খাত (ম্যানুফ্যাকচারিং: ইস্পাত, সিমেন্ট, গ্যাস ও সিরামিকস, ফার্মাসিটিক্যাল, টয়লেট্রিস, ফার্নিচার, অটোমোবাইল, ইলেকট্রিক্যাল, ইলেক্ট্রনিক্স)। ইঞ্জনিয়ারিং খাত: বাংলাদেশে বিদ্যমান ৩৩টি ইঞ্জিনিয়ারিং সেক্টরের বিস্তারিত। এইচএসসি পাশের চাকরি, এবং সকল পার্ট টাইম চাকরির বিস্তারিত ধারণা। সুকৌশল ছাড়া ক্যারিয়ার প্ল্যান লক্ষ্যে পৌঁছানো সময় সাপেক্ষ হতে পারে। বইটিতে আপনার ক্যারিয়ার প্ল্যানটি ঠিক না ভুল বা কোনো পরিবর্তন প্রয়োজন কিনা তা জানতে পারবেন।