চট্টগ্রামে হাজারো ডায়ালাইসিসের রোগী, ব্যয়বহুল চিকিৎসা

প্রতিকারের দিকে নজর দেয়ার পরামর্শ আজ বিশ্ব কিডনি দিবস

জাহেদুল কবির | বৃহস্পতিবার , ১৩ মার্চ, ২০২৫ at ৬:০৭ পূর্বাহ্ণ

কিডনি রোগের চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। কিডনি অকার্যকর হয়ে গেলে তখন ডায়ালাইসিস কিংবা কিডনি সংযোজনই একমাত্র চিকিৎসা। চিকিৎসা ব্যয় বেশি হওয়ায় অধিকাংশ গরীব ও মধ্যবিত্ত শ্রেণী বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। তাই চিকিৎসকরা বলছেন, রোগের চিকিৎসার চেয়ে প্রতিকারের দিকে নজর দিতে হবে। কিডনি রোগের ঝুঁকিগুলো বিশেষ করে নেফ্রাইটিস, ইনফেকশন এবং ডায়রিয়ার সঠিক ও দ্রুত চিকিৎসা করা দরকার। এছাড়া ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। অযথা ব্যথানাশক ওষুধ এবং চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া এন্টিবায়োটিক খাওয়া যাবে না। এমন পরিস্থিতিতে আজ সারাবিশ্বে পালিত হচ্ছে বিশ্ব কিডনি দিবস। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য ধরা হয়েছেআপনার কিডনি কি সুস্থ? দ্রুত শনাক্ত করুন, কিডনি স্বাস্থ্য সুরক্ষা করুন’।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে নেফ্রোলজি বিভাগের চিকিৎসকরা জানান, বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় তিন কোটি লোক কিডনি রোগে ভুগছেন। প্রতিবছর প্রায় ৩০ হাজার কিডনি রোগী রোগের শেষ পর্যায়ে উপনীত হয়। যাদের অধিকাংশের জন্যই কিডনি ডায়ালাইসিস বা কিডনি সংযোজনই একমাত্র চিকিৎসা। বর্তমানে চমেক হাসপাতালের কিডনি ওয়ার্ডে প্রায় ৩০০ রোগী এবং ১৮ টা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ৭০০ রোগীসহ ১ হাজার পার্মানেন্ট ডায়ালাইসিসের (এমএইচডি) রোগী রয়েছে। চমেক হাসপাতালের নেফ্রোলজি ওয়ার্ডে প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০ জন রোগী সাময়িক কিডনি বিকলের (একেআই) জন্য ডায়ালাইসিস করে থাকে। একটা গবেষণায় দেখা গেছে, চমেক হাসপাতালের কিডনি ওয়ার্ডে যেসব রোগী ভর্তি হয় তার ৫৭ শতাংশ দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগ (সিকেডি) এবং ২৩ শতাংশ সাময়িক কিডনি বিকল (একেআই) রোগে ভুগছে। সিকেডি’র কারণগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কারণ হলো নেফ্রাইটিস ৩৪ শতাংশ, ডায়াবেটিস ২৮ শতাংশ এবং উচ্চ রক্তচাপ ১৭ শতাংশ। একেআই’র কারণগুলোর মধ্যে প্রধান কারণ হলোসেপসিস বা ইনফেকশন ৬০ শতাংশ এবং ডায়রিয়া ১৪ শতাংশ।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদি কিডনি রোগ শরীরে বাসা বাঁধতে শুরু করে তবে পিঠে ব্যথা হবে। ওপর দিকে নয়, নিচের অংশে। এ ব্যথাকে সাধারণ ব্যথা মনে না করে অবশ্যই গুরুত্ব দিতে হবে। কিডনি প্রস্রাবের মাধ্যমে শরীর থেকে বর্জ্য নির্গত করে। কিন্তু কিডনি ঠিকমতো কাজ না করলে মূত্রনালিতে সমস্যা দেখা দেয়। বারবার মূত্রত্যাগ, মূত্রের সঙ্গে রক্ত বের হওয়া বা মূত্রে অতিরিক্ত ফেনা হওয়া কিডনির সমস্যার অন্যতম লক্ষণ। কোনো নির্দিষ্ট কারণ ছাড়াই সব সময় ক্লান্তি, দুর্বল অনুভব, ওজন দ্রুত কমে যাওয়া কিডনির সমস্যার কারণে হতে পারে। কিডনি ঠিকমতো কাজ না করলে রক্ত পরিশুদ্ধ হয় না। রক্তে বিষাক্ত ও অপ্রয়োজনীয় উপাদান বাড়তে থাকে। যা ত্বকে চুলকানি ও র‌্যাশ তৈরি করে। গরম আবহাওয়ার মধ্যে শীত অনুভূত হওয়াও কিডনি রোগে আক্রান্ত হওয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ। কিডনি সমস্যায় রক্ত পরিশুদ্ধ হতে পারে না। যার কারণে মুখ, চোখের চারপাশ, পায়ের গোড়ালি হঠাৎ অস্বাভাবিকভাবে ফুলে ওঠে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কিডনিতে সমস্যা দেখা দিলে ফুসফুসে তরল জমা হবে। ফলে শ্বাসকষ্টও অনুভূত হতে পারে কিডনি রোগীর।

জানতে চাইলে চমেক হাসপাতালের নেফ্রোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. নুরুল হুদা দৈনিক আজাদীকে বলেন, কিডনি রোগের ক্ষেত্রে প্রতিকারের দিকে আমাদের নজর দিতে হবে। কারণ কিডনি রোগের অত্যন্ত ব্যয়বহুল।

এদিকে কিডনি দিবস উপলক্ষে আজ সকালে চমেক হাসপাতালের নিউ কনফারেন্স হলে সায়েন্টিফিক সেমিনার ও র‌্যালি অনুষ্ঠিত হবে। সেমিনারে প্রধান অতিথি থাকবেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। অপরদিকে কিডনি রোগ দিবস উপলক্ষে র‌্যালি করবে কিডনি রোগী কল্যাণ সংস্থা। জানতে চাইলে কিডনি রোগী কল্যাণ সংস্থার সিনিয়র সহসভাপতি অ্যাডভোকেট জিয়া হাবীব আহসান দৈনিক আজাদীকে বলেন, দরিদ্র কিডনি রোগীদের সহায়তা করা আমাদের সংস্থার অন্যতম উদ্দেশ্য। আমরা কিডনি দিবস উপলক্ষে র‌্যালি করবো। দরিদ্র রোগীদের অর্থ সহায়তা দিবো।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআগে ভাগে জাকাত দিয়ে দরিদ্রদের পাশে দাঁড়ান
পরবর্তী নিবন্ধকলেজ থেকে আর্থিক সুবিধা পাবেন না গভর্নিং বডির সদস্যরা