ডিএনএ পরীক্ষার প্রতিবেদন না পাওয়ায় প্রায় তিন বছরেও চট্টগ্রাম নগরীর জামালখান এলাকায় সাত বছর বয়সী শিশুকে ধর্ষণ ও হত্যার মামলায় অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দেওয়া হয়নি। এ ঘটনায় বিচার চেয়ে গতকাল মঙ্গলবার সকালে সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করেছেন নিহত শিশুর পরিবার।
এতে অবিলম্বে ধর্ষণ মামলার চার্জশিট দিয়ে ধর্ষকের শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন হত্যার শিকার শিশুর মা, বোন, বাংলাদেশ নারীমুক্তি কেন্দ্রের আহ্বায়ক আসমা আক্তার, শিক্ষার্থী পুষ্পিতা নাথ, সাদিয়া আফরিন, হামিদ উদ্দিন প্রমুখ। সংবাদ সম্মেলনে বিচার চেয়ে ওই শিশুর বোন বলেন, তিন বছর ধরে আমার পরিবার শুধু থানা–পুলিশ করছে। এখনো ডিএনএ প্রতিবেদন আসেনি। আমাদের দাবি, অন্তত আদালতে মামলাটা উঠুক। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন শিক্ষার্থী পুষ্পিতা নাথ।
লিখিত বক্তব্যে বলেন, আসামির স্বীকারোক্তির পর ওই শিশুর পরিবারের প্রত্যাশা ছিল, তারা দ্রুত ও সুষ্ঠু বিচার পাবেন। কিন্তু গত তিন বছর শিশুটির পরিবার বিচার দূরে থাকুক, এখনো মামলার কোনো অগ্রগতিরই মুখ দেখতে পায়নি। তদন্তকারী পুলিশ মামলাটির চার্জশিট দিতে পারেনি। এই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাকে বারবার তাগিদ দেওয়া হলেও নানা অজুহাতে পরিবারের সদস্যদের ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
আইনজীবীদের বক্তব্যের বরাতে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, আইনজীবীদের অভিমত, ধর্ষণ মামলার বিচারপ্রক্রিয়ায় ডিএনএ রিপোর্ট বাধ্যতামূলক করা হলেও, চার্জশিট দিতে ডিএনএ রিপোর্ট প্রয়োজন নেই। আসামির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির ভিত্তিতেই এ মামলায় পুলিশ চার্জশিট দেওয়া যায়। শিশুটির পরিবার ও শিক্ষার্থীরা প্রধান উপদেষ্টা বরাবর চার দফা দাবি তুলে ধরেন। সেগুলো হলো, আগামী এক মাসের মধ্যে এই ধর্ষণ ও হত্যা মামলার চার্জশিট ও ডিএনএ রিপোর্ট প্রদান করতে হবে, ধর্ষণ, ধর্ষণচেষ্টা, হত্যাকাণ্ড ও নারীর প্রতি সহিংসতার সঙ্গে জড়িত অপরাধীদের দ্রুত শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে, ধর্ষণ, নিপীড়ন বন্ধ ও বিচারে ব্যর্থ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে অবিলম্বে অপসারণ করতে হবে, বিভাগীয় পর্যায়ে পর্যন্ত, মানসম্মত পূর্ণাঙ্গ ডিএনএ ল্যাব স্থাপন করতে হবে এবং ধর্ষণ মামলায় নমুনা সংগ্রহ ও সংরক্ষণ পদ্ধতি আধুনিকায়ন করতে হবে। ২০২২ সালের ২৪ অক্টোবর নগরের জামালখান এলাকায় চিপস কিনতে গিয়ে নিখোঁজ হয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থী (৭)। এর তিন দিন পর ওই শিশুর লাশ পাওয়া যায়। পরে তদন্তে জানা যায়, তাকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়। এ মামলায় লক্ষ্মণ দাশ নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। আসামি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছেন। তবে এ ঘটনার তিন বছরেও মামলার অভিযোগপত্র (চার্জশিট) পৌঁছায়নি আদালতে।