পাকিস্তানে ট্রেন হাইজ্যাক, ১৮২ যাত্রী পণবন্দি

২০ সেনা সদস্যকে হত্যা ও ড্রোন ভূপাতিত করার দাবি বেলুচ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের অপহৃত ট্রেনের কাছে পৌঁছাল পাক সেনা, চলছে গুলির লড়াই

আজাদী ডেস্ক | বুধবার , ১২ মার্চ, ২০২৫ at ১০:২৭ পূর্বাহ্ণ

পাকিস্তানে একটি ট্রেনে হামলা চালিয়ে ১৮২ জনকে জিম্মি করেছে বিচ্ছিন্নতাবাদীরা। গতকাল মঙ্গলবার বেলুচিস্তান প্রদেশের বোলান এলাকায় ওই যাত্রীবাহী ট্রেনে গুলি চালায় বিচ্ছিন্নতাবাদীরা। ৯ বগি বিশিষ্ট ট্রেনটি হাইজ্যাক করা হয়েছে। হামলাকারীদের দাবি, তাদের গুলিতে ২০ জন সেনা সদস্যও নিহত হয়েছেন।

সন্ত্রাসী হামলার শিকার ট্রেনটির নাম ‘জাফফার এক্সপ্রেস’। গতকাল বেলুচিস্তানের রাজধানী কোয়েটা থেকে খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশের পেশওয়ার শহরে যাওয়ার পথে ট্রেনটিতে হামলা চালানো হয়। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ট্রেনটিতে প্রায় ৪০০ যাত্রী ছিলেন। সেটি এখন একটি সুড়ঙ্গের ভেতরে আটকে আছে। ট্রেনের চালক গুরুতর আহত হয়েছেন। প্রাদেশিক সরকারের মুখপাত্র শাহিদ রিন্দ জানান, ট্রেনে তীব্র গুলিবর্ষণ হওয়ার খবর পাওয়ার পর কোয়েটা থেকে ১৬০ কিলোমিটার (১০০ মাইল) দূরে অবস্থিত সিবি শহরের একটি প্রধান হাসপাতালে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে। হামলার দায় স্বীকার করেছে বেলুচ লিবারেশন আর্মি (বিএলএ)। বেলুচিস্তান প্রদেশের স্বাধীনতা চায় তারা। বিএলএ জানিয়েছে, সেনাসদস্য ও অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যসহ তাদের কাছে ট্রেনের ১৮২ জন যাত্রী জিম্মি রয়েছেন। এছাড়া তারা ২০ সেনাসদস্যকে হত্যা করেছে এবং ১টি ড্রোন ভূপাতিত করেছে। তবে দেশটির সরকারি দপ্তর থেকে এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করা হয়নি।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টেলিগ্রামে প্রকাশ করা এক বিবৃতিতে বিএলএ জানিয়েছে, আমাদের যোদ্ধারা রেললাইন উড়িয়ে দিয়েছে, যার ফলে জাফর এক্সপ্রেস থামতে বাধ্য হয়। যোদ্ধারা দ্রুত ট্রেনের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়, সব যাত্রীদের জিম্মি করে। বেসামরিক যাত্রী, বিশেষ করে নারী, শিশু, বৃদ্ধ ও বেলুচ নাগরিকদের নিরাপত্তার সঙ্গে মুক্তি দেওয়া হয়েছে এবং চলে যাওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। তবে সামরিক হস্তক্ষেপ জারি থাকলে সব জিম্মিকে হত্যা করা হবে এবং এই রক্তপাতের দায় সম্পূর্ণভাবে দখলদার বাহিনীকেই নিতে হবে।

মনে করা হচ্ছে, অপহৃত ট্রেন দখলমুক্ত করতে অভিযানে নামতে পারে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। কারণ ওই ট্রেনে বালুচিস্তানে কর্মরত অনেক সেনাকর্মী রয়েছেন। প্রাদেশিক সরকার জরুরি ভিত্তিতে পুলিশ ও আধা সামরিক বাহিনী পাঠিয়েছে ওই এলাকায়। জঙ্গিদের খোঁজে তল্লাশি চলছে। প্রাদেশিক সরকারের মুখপাত্র শহীদ রিন্দ বলেছেন, পরিস্থিতি মোকাবেলায় সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠানকে মোতায়েন করেছেন তারা। রেলওয়ের কন্ট্রোলার মুহাম্মাদ কাশিফ বলেন, সশস্ত্র ব্যক্তিরা ট্রেনটি পাহাড় ঘেরা রেলপথের ৮ নং টানেলের কাছে থামিয়েছিল। ট্রেনের কর্মী ও যাত্রীদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা চলছে।

এদিকে অপহরণ করা ট্রেনের কাছে পৌঁছে গিয়েছে পাক নিরাপত্তাবাহিনী। গতকাল রাতে ঘটনাস্থল থেকে ধারাবাহিকভাবে গুলির আওয়াজ আসতে শুরু করেছে বলে দেশটির সংবাদমাধ্যম ‘দ্য ডন’ জানিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে বিএলএ’র হাতে অপহৃত শতাধিক রেলযাত্রীর প্রাণসংশয় হতে পারে বলে আশঙ্কা। কারণ, সেনা অভিযান বন্ধ না করলে পণবন্দিদের খুন করার হুমকি দিয়েছে বিএলএ।

প্রসঙ্গত, পাকিস্তানের বৃহত্তম প্রদেশ বালুচিস্তান প্রাকৃতিকভাবে সবচেয়ে সম্পদশালী। কিন্তু ধীরে ধীরে তা বেহাত হয়ে যাচ্ছে বালোচ নাগরিকদের। বিএলএর দাবি, বেলুচিস্তানের গ্যাস ও খনিজ সম্পদ অন্যায্যভাবে ভোগদখল করছে সরকার। চীনপাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোরসিপিইসি তৈরির পরে গত কয়েক বছরে সেই লুট আরও বেড়েছে। ওই রাস্তা ব্যবহার করেই ইসলামাবাদ এবং বেইজিংয়ের শাসকেরা বালুচিস্তানের প্রাকৃতিক সম্পদ লুট করছে বলে বিএলএ’র মতো স্বাধীনতাপন্থী সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর অভিযোগ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধঢাকায় ধর্ষণের বিচার দাবিতে গণপদযাত্রায় পুলিশের লাঠিচার্জ
পরবর্তী নিবন্ধযুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি বেড়েছে ৪৬ শতাংশ