সঞ্চালক হার্শা ভোগলে বললেন, দারুণ একটি অ্যাওয়ার্ড এটি। সেই কথা শুনে হাতে ধরে রাখা ট্রফিতে তাকালেন রাচিন রাবিন্দ্রা। কিন্তু কোন ভাবান্তর হলো বলে মনে হলো না। নিউজিল্যান্ডের এই সময়ের সেনসেশন বললেন ব্যক্তিগত স্বীকৃতি অবশ্যই দারুণ, তবে। তবে, দলীয় প্রাপ্তির ওপরে কিছু নেই। সেই কথাটিও পরে বললেন রাবিন্দ্রা। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ম্যান অব দ্যা টুর্নামেন্ট হয়ে মোটেও মন ভরেনি তার। তিনি চাইছিলেন সত্যিকারের ট্রফি, চ্যাম্পিয়ন হলে দল যেটি পায়। রোববার রাত দুবাইয়ে ফিরে এলো যেন ২০১৯ বিশ্বকাপ ফাইনাল শেষে লর্ডসের সেই রাত। সেবারও ফাইনাল হেরে গিয়েছিল নিউজিল্যান্ড। পরে মলিন মুখে টুর্নামেন্ট–সেরার পুরস্কার নিয়েছিলেন কেন উইলিয়ামসন। সেই ফাইনালের মতো রুদ্ধশ্বাস ম্যাচ হয়নি এবার চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে। তবে কিউইরা লড়াই করেছে সাধ্যমতো। অতৃপ্ত মনে টুর্নামেন্ট সেরার পুরস্কার নিয়েছেন রাবিন্দ্রা। অথচ এই আসরের প্রথম ম্যাচটি তিনি খেলতে পারেননি। প্রস্তুতি টুর্নামেন্ট হিসেবে যে ত্রিদেশীয় সিরিজটি আয়োজন করা হয়েছিল, সেখানেই ক্যাচ নিতে গিয়ে কপালে আঘাত পেয়ে মাঠের বাইরে ছিলেন তিনি। পরে মাঠে ফেরেন তিনি দলের দ্বিতীয় ম্যাচ দিয়ে। বাংলাদেশের বিপক্ষে সেদিন প্রিয় পজিশন টপ অর্ডারে ব্যাট করতে পারেননি। তবে চারে নেমেই উপহার দেন ম্যাচ জেতানো ১০৫ বলে ১১২ রানের ইনিংস। পরের ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে আউট হয়ে যান ৬ রানে। সেমি–ফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকার বোলিং আক্রমণ কচুকাটা করেন ওপেনিংয়ে ১০১ বরে ১০৮ রানের ইনিংস খেলে। ফাইনালেও শুরু করেছিলেন দারুণ। তবে কুলদিপ যাদবের দুর্দান্ত এক ডেলিভারি তাকে থামায় ২৯ বলে ৩৭ রানে। চার ম্যাচ খেলে আসরের সর্বোচ্চ ২৬৩ রান তার। ৬৫.৭৫ গড়ের পাশে স্ট্রাইক রেট ১০৬.৪৭। বল হাতে ওভারপ্রতি ৪.৬৬ রান দিয়ে নিয়েছেন তিনটি উইকেট। এর মধ্যে সেমি–ফাইনালে এইডেন মার্করাম, ফাইনালে রোহিত শার্মার গুরুত্বপূর্ণ উইকেট ছিল। ম্যান অব দা টুর্নামেন্টের লড়াইটা ছিল একরকম একতরফাই। তবে ফাইনালে দলের পরাজয়ে নিজের এই প্রাপ্তি বড় কোনো আনন্দের উপলক্ষ আসেনি তার জন্য। তিনি বলেন অবশ্যই অম্ল–মধুর স্বাদ। দুর্দান্ত এক ফাইনাল ছিল। ফাইনালে আসার পথে আমরা দারুণ ক্রিকেট খেলেছি। আজকের ম্যাচ ভালো হয়েছে, ভারতকে অভিনন্দন। ব্যক্তিগত এসব স্বীকৃতি অবশ্যই দারুণ। তবে দুর্দান্ত একটি দলের হয়ে খেলছি, এটা ছিল খুবই উপভোগ্য। টুর্নামেন্ট–সেরার ট্রফি হাতে নিয়ে ২৫ বছর বয়সী প্রতিভাবান এই ক্রিকেটারের আক্ষেপ অন্য ট্রফির জন্য। সত্যিকারের ট্রফিটা পেলে সোনায় সোহাগ হতো। তবে এটা তেমনই একটা ব্যাপার, ক্রিকেট কখনও কখনও এমন নিষ্ঠুর হয়ে ওঠে। দল না পারলেও বিশ্বমঞ্চে নিজের প্রতিভা আর সামর্থ্যের প্রমাণ আরও একবার দিয়েছেন রাবিন্দ্রা। ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপে তিনি চমকে দিয়েছিলেন তিন সেঞ্চুরি ও দুই ফিফটিতে ৫৭৮ রান করে। এবার চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে সেঞ্চুরি করলেন দুটি। নিউজিল্যান্ডের ইতিহাসে আইসিসি টুর্নামেন্টে তিনটির বেশি শতরান নেই আর কোনো ব্যাটসম্যানের।