অবশেষে দেখা মিলছে বোতলজাত সয়াবিনের, ‘উধাও’ খোলা তেল

মেয়রের বাজার পরিদর্শন, নির্ধারিত মূল্যের বেশি নিলে ব্যবস্থার হুঁশিয়ারি

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ৬ মার্চ, ২০২৫ at ৬:০৯ পূর্বাহ্ণ

এতদিন ‘উধাও’ থাকা বোতলজাত সয়াবিন তেলের দেখা মিলছে বাজারে। তবে এবার ‘উধাও’ হয়েছে খোলা সয়াবিন তেল; গত মঙ্গলবার যার লিটার প্রতি খুচরা মূল্য ১৬০ টাকা নির্ধারণ করে দেয় প্রশাসন। অবশ্য পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হলেও তা প্রশাসনের নির্ধারণ করে দেয়া ১৫৫ টাকার বেশি দামে বিক্রি হয়েছে। আবার খুচরা পর্যায়ে বোতলজাত সয়াবিনের ক্ষেত্রে একদুই লিটারের বোতল বিক্রি করলেও পাঁচ লিটারের বোতল বিক্রি করা হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন ক্রেতারা।

এ অবস্থায় গতকাল বুধবার দুপুরে নগরের কাজীর দেউড়ি বাজার পরিদর্শনে যান সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। এসময় যে কয়েকটি দোকানে উপস্থিত হয়ে মেয়র তদারকি করেন তার কোনোটিতেই খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি করা হচ্ছিল না। তবে এসব দোকানে বোতলজাত সয়াবিন বিক্রি করতে দেখা যায়। এক্ষেত্রে প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল এমআরপি (সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য) অনুযায়ী ১৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছিল। এতে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে মেয়র ব্যবসায়ীদের খোলা সয়াবিন তেল বিক্রির আহ্বান জানান।

পরিদর্শন চিত্র : মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন প্রথমে কাঁচা বাজার ও মাংসের দোকান পরিদর্শন করে ব্যবসায়ীদের মূল্য তালিকা টাঙানো এবং দাম সহনীয় রাখার নির্দেশনা দেন। এরপর মেয়র ‘খান ডিপার্টমেন্টাল স্টোর’ এ উপস্থিত হয়ে পুষ্টি ব্র্যান্ডের এক লিটার সয়াবিন তেলের বোতল হাতে নিয়ে দাম জানতে চান। তখন দোকানদার বলেন, ১৭৫ টাকা। এরপর মেয়র পূর্বে একই পরিমাণ তেল ১৯৫ টাকা বিক্রি করা হয়েছে কীনা জানতে চাইলে দোকানদার বলেন, ‘এমআরপি থেকে এক টাকাও বেশি নেয়া হয়নি’। এরপর মেয়র বলেন, দাম বেশি বিক্রি করবেন না। খোলা তেল আমাদের নির্ধারিত ১৬০ টাকার বেশি বিক্রি করতে পারবে না। এসময় মেয়র খোলা তেল বিক্রি করে কিনা জানতে চাইলে দোকানদার ‘না’ বলেন।

তখন মেয়র বলেন, এতদিন তো এগুলো (বোতলজাত সয়াবিন) গায়েব হয়ে গিয়েছিল, এখন আসল কীভাবে? পর্যাপ্ত (বোতলজাত সয়াবিন) আছে? তখন দোকানদার বলেন, মাঝেমধ্যে কোম্পানি সরবরাহ করে। এক লিটার ও দুই লিটার বোতল পর্যাপ্ত আছে। এরপর মেয়র উপস্থিত ক্রেতাদের উদ্দেশে বলেন, এখন বোতলজাত সয়াবিন এভেইলেবল হয়ে গেছে। ক্রেতাদের বলছি, খোলা তেল ১৬০ টাকায় কিনবেন এবং এটা (বোতলজাত) আগে ১৯৫ টাকা বিক্রি করলেও আজ ১৭৫ টাকা বিক্রি করছে। যারা বোতলজাত করছে তাদের সাথে কথা বলে আরো ৫১০ টাকা কমানোর ব্যবস্থা করছি। যদি খোলা তেল ১৬০ টাকার বেশি নেয় সাথে সাথে আমাদের ম্যাজিস্ট্রেটদের জানাবেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।

এরপর মেয়র মেসার্স হোসাইন ডিপার্টমেন্টাল স্টোরএ উপস্থিত হয়ে খোলা তেল আছে কীনা জানতে চান মেয়র। তখন দোকানদার ‘না’ বললে তাকে খোলা সয়াবিন তেল বিক্রির আহ্বান জানিয়ে শাহাদাত বলেন, খাতুনগঞ্জ থেকে ১৫৫ টাকা করে নিয়ে এসে ১৬০ টাকায় বিক্রি করবেন। যদি খাতুনগঞ্জে ১৫৬ টাকাও বলে আমাদের জানাবেন, তাদের আমরা আইনের আওতায় আনব।

এরপর মেয়র সাংবাদিকদের বলেন, আজ আমরা চট্টগ্রামের ভিআইপি বাজার কাজীর দেউড়ি এসে দেখতে পাচ্ছি যে বোতলগুলো এতদিন গায়েব হয়ে গিয়েছিল সেগুলো আজ পাওয়া যাচ্ছে। আমরা আশাবাদী কাল থেকে এটা আরো এভেইলেবল হবে। কয়েকটা দোকান ভিজিট করে দেখলাম বোতল পাওয়া যাচ্ছে, কিন্তু খোলা তেল আনেনি। তাদের আনার জন্য বলেছি।

এ সময় দোকানদাররা পূর্বে বেশি দামে ক্রয় করায় ১৬০ টাকায় খোলা তেল বিক্রি করতে পারছে না দাবি করছে জানালে মেয়র বলেন, আমরা যে নির্দেশনা দিয়েছি সেটা তাদের অনুরসরণ করতে হবে। ফলো না করলে আইন নিজস্ব গতিতে চলবে। সে যত টাকা দিয়েই কিনুন, সেটা আমাদের ধর্তব্যের মধ্যে আসে না। যে সিদ্ধান্ত নিয়েছি সেটা বলবৎ থাকবে। আমি বারবার বলছি, আমরা খোলা সয়াবিনের ১৬০ টাকা যে মূল্য নির্ধারণ করেছি সে অনুযায়ী বিক্রি করতে হবে। যে অমান্য করবে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এরপর মেয়র ভাই ভাই ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে প্রবেশ করে খোলা তেল বিক্রি করতে বলেন। ওই দোকানে বোতলজাত ১৭৫ টাকায় বিক্রি হলেও খোলা সয়াবিন বিক্রি করা হচ্ছিল না। সবশেষে মেয়র চেমন আরা গ্রোসারি নামে একটি দোকানে উপস্থিত হন; সেখানেও খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছিল না। এসময় সেখানে উপস্থিত এক বিক্রেতা বলেন, সয়াবিন তো পাওয়ায় যাচ্ছে না। তখন মেয়র তাকে বলেন, আপনি খাতুনগঞ্জ গেছেন? জবাবে বৃদ্ধ না বললে, মেয়র বলেন, খাতুনগঞ্জে যান। সেখানে ১৫৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। সেখান থেকে এনে আপনারা ১৬০ টাকায় বিক্রি করুন।

অভিযান অব্যাহত থাকবে : পরিদর্শন শেষে উপস্থিত সাংবাদিকদের শাহাদাত নির্ধারণ করে দেয়া দাম শতভাগ কার্যকর না হওয়া পর্যন্ত অভিযান অব্যাহত থাকবে জানিয়ে বলেন, কাজীর দেউড়ি বাজারে খোলা তেল এখন পর্যন্ত দেখছি না। তবে বোতলজাত যেটা উধাও হয়ে গিয়েছিল সেটা আজকে এমআরপি রেইটে বিক্রি হচ্ছে। অন্যান্য বাজারে আমাদের ম্যাজিস্ট্রেট আছে, তারা দেখছে।

মেয়র বলেন, ১৬০ টাকায় খোলা সয়াবিন বিক্রি করতে হবে। আমাদের ম্যাজিস্ট্রেট আছে, তারা মনিটরিং করবেন। জনগণের জন্য যেটা যেটা করা দরকার সেটা করব। রোজার মাস, সিয়ামের মাসে মানুষকে তাদের স্বস্তির জায়গায় নিয়ে যেতে হবে। আমরা যে রেইট বলেছি সেটা যতক্ষণ শতভাগ বাস্তবায়ন করা হবে না ততক্ষণ আমাদের অভিযান চলতে থাকবে, এটা থামবে না।

মেয়র বলেন, খাতুনগঞ্জে ১৫৫ টাকায় (পাইকারি) বিক্রি করছে কিনা আমাদের ম্যাজিস্ট্রেট পর্যবেক্ষণ করছে। আমরা শুনেছি কোনো কোনো ব্যবসায়ী বলছে, তারা আগে বেশি বেশি দামে কিনেছে তাই একটু বেশি দামে বিক্রি করছে। তাদের বলতে চাই, আমরা যে নির্দেশনা দিয়েছি সেটা বলবৎ থাকবে। বেশি দামে কিনুক বা না কেন, আমরা যে দাম ধার্য্য করেছি সেই দামে বিক্রি করতে হবে। অন্যথায় তাদের শাস্তির আওতায় আনা হবে।

মেয়র বলেন, জনগণকে বলতে চাই তারা অনেক বেশি স্মার্ট। তারা ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন ঘটিয়েছে। সেখানে সামান্য ব্যবসায়ী জোর করে তাদের কাছ থেকে বেশি টাকা নিতে চাই, সেটা তারা (জনগণ) মানবে কেন। তারা সেখানে প্রতিবাদ করবে, আমাদের জানাবে। মুখ বুঝে থাকার সময় এখন নয়।

অনেক দোকানদার একদুই লিটারের বেশি বা পাঁচ লিটারের বোতল বিক্রি করতে চান না। এ বিষয়ে জানতে চাইলে মেয়র বলেন, অনেক পরিবার বড়, তাদের চাহিদা বেশি থাকে। তাদের চাহদা অনুযায়ী পাঁচ লিটার দিতে হবে। যারা দেয় না তাদের আমরা চিহ্নিত করব, তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেব।

উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আয়োজিত জেলা প্রশাসনের এক মতবিনিময় সভায় খোলা সয়াবিন তেলের আমদানিকারক থেকে শুরু করে খুচরা পর্যায়ে দাম নির্ধারণ করা হয়েছিল। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ভোজ্যতেলের আমদানিকারকরা পাইকারি ব্যবসায়ী বা ডিলারদের কাছে খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি করবেন ১৫৩ টাকায়। ডিলাররা সেটা খুচরা ব্যবসায়ীদের বিক্রি করবেন ১৫৫ টাকায়। আর বাজারে সেটা খুচরা বিক্রেতারা ভোক্তাদের কাছে বিক্রি করবেন সর্বোচ্চ ১৬০ টাকায়। আগামী ১০ এপ্রিল পর্যন্ত এ সিদ্ধান্ত বহাল থাকবে। আগের দিন সোমবার খাতুনগঞ্জ পরিদর্শন করেন সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন ও জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম। ওই দিন মেয়র জানান, বোতলজাত ভোজ্যতেল বাজার থেকে উধাও হয়ে গেছে।

খাতুনগঞ্জেও বেশি দাম : গতকাল খাতুনগঞ্জে প্রশানের নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি হয়েছে খোলা সয়াবিন। এদিন প্রতি মণ সয়াবিন বিক্রি হয়েছে ৬ হাজার ৩২৫ টাকায়। ওই হিসেবে প্রতি কেজি খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হয় ১৬৯ টাকায়। এদিকে বহাদ্দারহাটে গতকাল খুচরা সয়াবিন ১৯০ থেকে ১৯৩ টাকায় বিক্রি হয়েছে বলে জানা গেছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধগরিব রোজাদারকে ইফতারে শামিল করা অতীব পুণ্যময় আমল
পরবর্তী নিবন্ধকর্ণফুলীতে অপহৃত যুবককে ৫ ঘন্টায় অক্ষত উদ্ধার