‘ফ্যাসিস্ট’ শেখ হাসিনার বিচার প্রক্রিয়ার সাথে নির্বাচনের কোনো ‘সম্পর্ক নাই’ বলে মন্তব্য করেছেন আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী। গতকাল বুধবার দুপুরে বনানীতে হোটেল শেরাটনে একটি সেমিনারের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি বলেন, এই বিচার প্রক্রিয়ার সঙ্গে সরকার পরিবর্তনের কোনো সম্পর্ক নেই। গত ৫ অগাস্ট ক্ষমতার পালাবদলের পর ‘হত্যা’, ‘গণহত্যা’ ও ‘মানবতাবিরোধী’ অপরাধের অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে শতাধিক মামলা হয়েছে। এর মধ্যে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মামলায় তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। খবর বিডিনিউজের।
ভারতে থাকা সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে ফেরত দিতে দেশটির সরকারকে অনুরোধ করে চিঠি দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। তবে সে চিঠির জবাব এখনও মেলেনি। মঙ্গলবার নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্ট–এনসিপির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেছেন, যতদিন না আমরা খুনি হাসিনাকে ওই ফাঁসির মঞ্চে না দেখছি, এই বাংলাদেশে কেউ যেন ভুলক্রমেও ওই নির্বাচনের কথা না বলে।
এ বিষয়ে এক সাংবাদিকের প্রশ্নে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, শেখ হাসিনার বিচার চায় না, এমন লোক বাংলাদেশে কে আছে আমার জানা নেই। বিচারিক প্রক্রিয়া তো এটা একটা আইনি প্রক্রিয়া, সেটা তো চলতেই থাকবে। আমরা আইনের শাসনে যদি বিশ্বাস করি বিচারিক প্রক্রিয়া চলেছে, চলবে। সেটাতে শেখ হাসিনার শাস্তি তখন হবে, তারপরেও হবে। তার (শেখ হাসিনা) অনেকগুলো মামলা আছে। এগুলো বিচারিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে একটার পর একটা সমাধান হতেই থাকবে। কিন্তু এই বিচারিক প্রক্রিয়ায় সরকার পরিবর্তনের সাথে কোনো সম্পর্ক নাই, এই বিচারিক প্রক্রিয়ার সাথে নির্বাচনেরও কোনো সম্পর্ক নাই।
তিনি বলেন, আজকে এটার জন্য হবে না নির্বাচন, কালকে আরেকটার জন্য হবে না, পরশু আরেকটার জন্য হবে না, এ রকম কত কথাই তো শুনতেছি। এ সমস্ত কথা–বার্তা বলে নির্বাচনী ব্যবস্থা, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে পিছিয়ে নেওয়ার কোনো সুযোগ নাই, এটা পরিস্কার কথা। আজকে একটা, কালকে একটা আমরা বক্তব্য রাখবো এসব বলে নির্বাচন পেছানোর কোনো সুযোগ নাই। শেখ হাসিনা সরকারের সময় ১৬ বছরের অত্যাচার, নির্যাতন ও প্রাণহানির কথা তুলে ধরে আমীর খসরু বলেন, গণতান্ত্রিক উত্তরণ, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, নির্বিঘ্নে দল গঠনের উদ্দেশ্যে দেশের ১৬ কোটি মানুষ আন্দোলন করে ‘স্বৈরাচার’ শেখ হাসিনাকে বিদায় করেছে। সুতরাং যেকোনো দল তাদের মতামত নিয়ে আসতে পারে। সেখানে কোনো সমস্যা নাই তো। কিন্তু সেখানে মতামত সবার থাকতে হবে। আমাদের ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাব আছে, এটা চাইলে আমরা কালকে বাস্তবায়ন করতে পারব না, আমাদেরকে জনগণের কাছে যেতে হবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এ সদস্য বলেন, আগে ম্যান্ডেট নিয়ে সংসদে আসতে হবে। এরপর যেকোনো বিষয় সংসদে আলোচনা হবে, বিতর্ক হবে, তারপর সংসদে পাস হবে। সোজা কথা ঐকমত্যের পরিপ্রেক্ষিতে যেসব সিদ্ধান্ত আসবে সেখানে কারো তো কোনো সমস্যা নাই। কিন্তু আমি এটা প্রস্তাব করছি… এটা হতে হবে, এটা করতে হবে– এই ধরনের মনমানসিকতা যদি থাকে তাহলে তো আবার শেখ হাসিনার কথা মনে পড়ে যায়। এর আগে হোটেল শেরাটনে বলরুমে বাংলাদেশ শিপ ব্রেকার্স অ্যান্ড রিসাইক্লার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএসবিআরএ) আয়োজিত গোলটেবিল আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন আমীর খসরু।
‘বাংলাদেশে শিপ রিসাইক্লিং শিল্পের চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক আলোচনায় বলেন, “শিপ রিসাইক্লিং শিল্প সার্কুলার অর্থনীতির একটি ক্লাসিক উদাহরণ। এটি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, শিল্প উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই শিল্পের বিকালে সরকার সব ধরনের সহায়তা দেওয়া উচিত মন্তব্য করে তিনি বলেন, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নিয়মকানুন মেনে নিরাপদ ও পরিবেশ সম্মতভাবে জাহাজভাঙা শিল্প পরিচালনা করতে ও রাজস্ব পেতে নীতিগত সমর্থন ও বৈশ্বিক সহযোগিতা প্রয়োজন। দেশটা অতি নিয়ন্ত্রণের দেশ হয়ে গেছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, নিয়ন্ত্রণ করতে করতে এমন জায়গায় নিয়ে আসছে এই নিয়ন্ত্রণমুক্ত হওয়ার জন্য যে সব কাজ করতে হয় তার আর ব্যবসা করার স্বপ্ন থাকে না। জাহাজভাঙা শিল্পকে নিয়ন্ত্রণমুক্ত করার গুরুত্ব তুলে ধরে বিগত বিএনপি সরকারের বাণিজ্যমন্ত্রী আমীর খসরু বলেন, যত বেশি সম্ভব সরকারের ভেতরের অনেকগুলো কাজ বের করে এনে এগুলো ট্রেড বডি যারা আছে সেলফ রেগুলেটিং তাদেরকে ক্ষমতায়ন করতে হবে। আপনারা সেলফ রেগুলেটিং করার জন্য তৈরি হন। আগামী দিনে সরকার পরিবর্তন হলে, আমাদের যদি কোনো সুযোগ থাকে সবগুলো, যেখানে সম্ভব আমরা ট্রেডবডিগুলোকে প্রোভাইড করব। সবখানে যত নিয়ন্ত্রণমুক্ত করা যাবে তত দেশ ভালো চলবে। যত বেশি নিয়ন্ত্রণ বাড়বে দেশ সামনে দিকে এগুতে পারবে না বলে মন্তব্য করেন তিনি। বিএসবিআরএ এর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম রিংকু গোলটেবিল আলোচনায় সভাপতিত্ব করেন।
ইয়াসমীন সুলতানার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন– আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান ফুয়াদ, বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, নরওয়ের রাষ্ট্রদূত হ্যাকন অ্যারাল্ড গুলব্র্যান্ডসেন, উপ–রাষ্ট্রদূত খিজস উউস্ট্রা, ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিদলের প্রোগ্রাম ম্যানেজার হুবার্ট ব্লুম, জাইকার শিপ রিসাইক্লিং উপদেষ্টা ওকামোটো আকিরা, বিএসবিআরএ এর উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য শওকত আলী চৌধুরী, সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট লিয়াকত আলী চৌধুরী, চট্টগ্রাম শ্রমিক দলের এএম নাজিম উদ্দিন।