জনগণের জানমালের নিরাপত্তা ও সুস্থভাবে বেঁচে থাকার অধিকার রাষ্ট্র কর্তৃক সংরক্ষিত এবং নাগরিকের মৌলিক মানবাধিকারের রক্ষাকবচ। অন্য মানুষকে নিরাপদ রাখা ও বাঁচতে দেওয়া রাষ্ট্রের দায়িত্ব ও কর্তব্যের মধ্যে অন্যতম। কোনো ব্যক্তি, সংঘ, সংগঠন, বহিঃশত্রু বা স্বয়ং রাষ্ট্র কোনো নাগরিককে এ অধিকার থেকে বঞ্চিত করতে উদ্যত হতে পারে না; বরং রাষ্ট্র তার নাগরিকদের জীবনের নিরাপত্তা যেকোনো মূল্যে নিশ্চিত করতে বাধ্য থাকবে। বিদায় হজের ভাষণে মহানবী (সা.) জনগণকে উদাত্ত কণ্ঠে আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, ‘তোমাদের প্রত্যেকের জানমাল ও ইজ্জত–আবরু তোমাদের পরস্পরের কাছে পূত–পবিত্র।’ (বুখারি শরীফ)।
তাই সমাজজীবনে শান্তি–শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা এবং জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বজায় রাখা অবশ্যকর্তব্য ও ইমানি দায়িত্ব।সামাজিক সমপ্রীতি, জাতি–ধর্ম–বর্ণ–দল–মতনির্বিশেষে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের চেতনা, অর্থনৈতিক দর্শন ও আদল–ইনসাফের মাধ্যমে অপরাধ দমন কৌশল ইসলামকে দিয়েছে সর্বজনীন গ্রহণযোগ্যতা। মুসলিম ও অমুসলিম নাগরিকের জীবনের মূল্য আইনের চোখে সমান। কোনো মুসলিম যদি অমুসলিম নাগরিককে হত্যা করে ফেলে, তাহলে একজন মুসলিম নাগরিককে হত্যার জন্য যেমন তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়, ঠিক অনুরূপভাবে এ ক্ষেত্রেও হত্যাকারীকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া শরিয়তের বিধান। যেহেতু মানুষের জীবনের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ যার হত্যা নিষিদ্ধ করেছেন, যথার্থ কারণ ব্যতিরেকে তোমরা তাকে হত্যা কোরো না।’ (সূরা বনি ইসরাইল, আয়াত: ৩৩)। সুতরাং কোনো মানবসন্তানকে অপহরণ, গুম, খুন ও নরহত্যা করা ইসলামসম্মত নয়। নিরপরাধ ব্যক্তিদের মুক্তিপণ আদায়ের জন্য জোরপূর্বক ধরে নিয়ে খুন করা, মেরে ফেলা বা গুপ্তহত্যা করা ইসলামের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়। নবী করিম (সা.) কখনো একজন নিরপরাধ মানুষকে অস্ত্রের ভয়ভীতি প্রদর্শন ও প্রকাশ্যে বা গুপ্তহত্যা করেননি। মানবসমাজে বিশৃঙ্খলা, হানাহানি ও সন্ত্রাস দমনে শান্তির ধর্ম ইসলাম জোরালো দিকনির্দেশনা দিয়েছে এবং সন্ত্রাসীদের প্রতিরোধে কঠিন শাস্তি আরোপ করেছে। যদি রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রচলিত আইনে সন্ত্রাস সৃষ্টিকারী খুনিদের উপযুক্ত ন্যায়বিচার করা হয়, তাহলে আর কেউ জননিরাপত্তা বিঘ্নিত করতে দুঃসাহস পাবে না। পবিত্র কোরআনে হত্যাকাণ্ডকে মহা অপরাধ সাব্যস্ত করে ইচ্ছাকৃতভাবে একজন মুসলমান আরেকজন মুসলমানকে হত্যা করার শাস্তির কঠোর বিধান সম্পর্কে ইরশাদ হয়েছে, ‘কোনো মুমিনের জন্য সমীচীন নয় যে সে অন্য মুমিনকে হত্যা করবে, অবশ্য ভুলবশত করে ফেললে অন্য কথা। আর কেউ স্বেচ্ছায় কোনো মুমিনকে হত্যা করলে তার শাস্তি জাহান্নাম, সেখানে সে চিরকাল অবস্থান করবে। আর আল্লাহ তার প্রতি ক্রুদ্ধ হয়েছেন ও তাকে অভিশপ্ত করেছেন এবং তার জন্য ভীষণ শাস্তি প্রস্তুত রেখেছেন।’ (সূরা আন–নিসা, আয়াত: ৯২–৯৩)
নাগরিক অধিকার ছাড়া কোনো মানুষ নিরাপদে জীবন যাপন করতে পারে না। যে সমাজে মানবাধিকারের লঙ্ঘন হয়, সে সমাজে আইনের শাসন নেই। মানুষের জানমালের নিরাপত্তাই যদি বিঘ্নিত হয়, তবে মানুষ সমাজে কীভাবে শান্তিতে বসবাস করবে? কোনো অপশক্তির কাছেই যেন জনসাধারণের জানমালের নিরাপত্তা বিঘ্নিত না হয় আর মানবতা বিব্রত না হয়! প্রতিপক্ষের ভ্রাতৃঘাতী সংঘাতের অনিবার্য পরিণতিতে অপহরণ, গুম, খুন, নির্মম হত্যাকাণ্ড, অমানবিকতা ও সহিংসতার বিরুদ্ধে তীব্র ভাষায় ঘৃণা ব্যক্ত করা যায়, জোরালো প্রতিবাদ জানানো যায়, জনগণের জানমাল রক্ষায় শান্তিপূর্ণ উপায়ে অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা যায় এবং সংগ্রামী সচেতন মানুষের সেটাই করণীয়।