বৈশ্বিক সংকট, অর্থনৈতিক মন্দা, ডলার সংকট, টাকার অবমূল্যায়ন এবং দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতার মাঝেও রপ্তানি বাণিজ্যের পালে হাওয়া লেগেছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে দেশের রপ্তানি আয় উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। এই সময়ে মোট রপ্তানি আয় দাঁড়িয়েছে ২৮.৯৬ বিলিয়ন ডলার, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১১.৬৮ শতাংশ বেশি।
গত জানুয়ারি মাসে রপ্তানি আয় ছিল ৪.৪৪ বিলিয়ন ডলার। তৈরি পোশাক খাতের রপ্তানি আয় এই সময়ে ২৩.৫ বিলিয়ন ডলার, যা মোট রপ্তানির ৮১.২৯ শতাংশ। রপ্তানি বৃদ্ধির সাথে সাথে চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যক্রমও অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করছে। সদ্য সমাপ্ত ফেব্রুয়ারি মাসে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ৬৫ হাজার ৪৫০ টিইইউএস কন্টেনার পণ্য বিদেশে রপ্তানি হয়েছে। আগের বছর ফেব্রুয়ারি মাসে যার পরিমাণ ছিল ৬১ হাজার ৯৯ টিইইউএস।
সূত্র জানিয়েছে, বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা চলছে। বিশেষ করে ইউক্রেন–রাশিয়া এবং গাজা– ফিলিস্তিন যুদ্ধসহ বিশ্বে নানা সংকট বিরাজ করছে। চীনের সথে আমেরিকার স্নায়ুযুদ্ধ, ভারতের সাথে চীনের ঠান্ডা লড়াইসহ নানা বৈশ্বিক সমীকরণ বিশ্ববাণিজ্যে প্রভাব ফেলছে। বাংলাদেশেও বিরাজ করছে মারাত্মক রকমের ডলার সংকট। বেশ কয়েকটি ব্যাংক ভয়াবহ রকমের দুরবস্থায় পড়েছে। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমছে। ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নে প্রতিটি জিনিসেরই দাম বেড়ে যাচ্ছে। বাড়ছে মূল্যস্ফিতি। ব্যাংকগুলো এলসি খুলতে কড়াকড়ি করায় বহু শিল্প কারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। সংকটে পড়েছে বেসরকারি উদ্যোক্তাদের বিভিন্ন কার্যক্রম। ব্যাংকিং খাত থেকে এস আলম, বেক্সিমকোসহ বিভিন্ন বড় বড় শিল্প গ্রুপ হাজার হাজার কোটি টাকার লোপাট করে নিয়ে যাওয়ায় দেশের অর্থনীতি চরম এক হুমকির মুখে পড়ে। কিন্তু এতোকিছুর পরও রপ্তানির পালে হাওয়া লাগায় অন্যরকমের এক স্বস্তি বিরাজ করছে রপ্তানিকারকদের মাঝে।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানিয়েছে, নানা অস্থিরতার মাঝেও চলতি অর্থবছরে বেশ সুবাতাস পরিলক্ষিত হচ্ছে রপ্তানি বাণিজ্যে। চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত প্রথম সাত মাসে রপ্তানি আয় উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। বিভিন্ন গার্মেন্টস কারখানায় অস্থিরতাসহ নানা সংকটের মাঝেও প্রচুর গার্মেন্টস পণ্য রপ্তানি হয়েছে। উক্ত সময়ের মধ্যে মোট রপ্তানি আয় দাঁড়িয়েছে ২৮.৯৬ বিলিয়ন ডলার। যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১১.৬৮ শতাংশ বেশি। গত জানুয়ারি মাসে রপ্তানি আয় ছিল ৪.৪৪ বিলিয়ন ডলার। চলতি বছরের প্রথম সাত মাসে তৈরি পোশাক খাতের রপ্তানি আয় এই সময়ে ২৩.৫ বিলিয়ন ডলার, যা মোট রপ্তানির ৮১.২৯ শতাংশ।
দেশের রপ্তানি কার্যক্রম বাড়ার সাথে সাথে বাড়ছে বন্দরের কন্টেনার হ্যান্ডলিং। আগের বছরের তুলনায় অনেক বেশি কন্টেনার হ্যান্ডলিং হচ্ছে বন্দরে। গত জানুয়ারি মাসে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে বিদেশে পাঠানো হয় ৭৫ হাজার ২৩৪ টিইইউএস রপ্তানি পণ্য। আগের বছরের জানুয়ারি মাসে যার পরিমান ছিল ৬৩ হাজার ৬৩৪ টিইইউএস। সদ্য সমাপ্ত ফেব্রুয়ারি মাসে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে রপ্তানি পণ্য বোঝাই ৬৫ হাজার ৪৫০ টিইইউএস কন্টেনার বিদেশে পাঠানো হয়েছে। আগের বছর ফেব্রুয়ারি মাসে যার পরিমান ছিল ৬১ হাজার ৯৯ টিইইউএস। এক বছরের ব্যবধানে কন্টেনার হ্যান্ডলিং বৃদ্ধির এই গতি বন্দরকে নতুন মাইল ফলক স্পর্শের সুযোগ করে দেবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে।
২০২৪ সালে চট্টগ্রাম বন্দর ৩২ লাখ ৭৫ হাজার ৬২৭ টিইইউএস কন্টেনার হ্যান্ডলিং করে এযাবতকালের রেকর্ড ভঙ্গ করেছিল। কিন্তু চলতি জানুয়ারি এবং ফেব্রুয়ারি মাসের যে লক্ষণ ইতোমধ্যে দেখা যাচ্ছে তাতে বছর শেষে চট্টগ্রাম বন্দর অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম বন্দর সচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুক বন্দরের কন্টেনার হ্যান্ডলিংয়ের সাম্প্রতিক তথ্যগুলোর কথা স্বীকার করে বলেন, বন্দরের কার্যক্রম প্রতিনিয়ত বাড়ছে। আমরা যুগের সাথে তাল মিলিয়ে বাড়তি কার্যক্রম সামাল দিয়ে যাচ্ছি। এই ধারা অব্যাহত থাকলে চট্টগ্রাম বন্দর চলতি বছরেও অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করবে বলে উল্লেখ করেন।
অপর একটি সূত্র বলেছে, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা ও অন্যান্য প্রতিকূলতার মাঝেও বাংলাদেশের রপ্তানি খাতের এই প্রবৃদ্ধি অর্থনীতির জন্য আশাব্যঞ্জক। বিশেষ করে তৈরি পোশাক খাতের উত্থান এবং আমদানি স্থিতিশীল থাকায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। শিল্পের প্রবৃদ্ধির পাশাপাশি চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যক্রমে গতিশীলতা দেশের অর্থনীতিকে বেগবান করবে বলেও সূত্রগুলো মন্তব্য করেছে।