ঘোষিত হয় স্বাধীনতা সংগ্রামের পূর্ণাঙ্গ রূপরেখা

আজাদী ডেস্ক | সোমবার , ৩ মার্চ, ২০২৫ at ১০:২৯ পূর্বাহ্ণ

পশ্চিমের শাসকরা জাতীয় পরিষদের অধিবেশন অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত ঘোষণা করার পর পূর্ব পাকিস্তান তখন অগ্নিগর্ভ। সেই সময় ৩ মার্চ ঘোষিত হয় স্বাধীনতা সংগ্রামের পূর্ণাঙ্গ রূপরেখা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশের স্বাধীনতার রূপরেখা কার্যত সেদিনই স্পষ্ট রূপ পায়। বঙ্গবন্ধুর ডাকে ঢাকায় দ্বিতীয় দিনের মতো এবং সমগ্র বাংলাদেশে প্রথম দিনের জন্য সর্বাত্মক হরতাল চলছিল সেদিন। শহরের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা স্তব্ধ প্রায়। তার মধ্যেই পল্টন ময়দানে স্বাধীন বাংলা কেন্দ্রীয় ছাত্র-সংগ্রাম পরিষদের ডাকা ছাত্র জনসভায় উপস্থিত হন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সেখানে তিনি অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন। সেদিনই সভা থেকে স্বাধীন বাংলা কেন্দ্রীয় ছাত্র-সংগ্রাম পরিষদের চার নেতৃবৃন্দ স্বাধীনতা ও মুক্তি সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ার শপথ গ্রহণ নেন। ছাত্রলীগের তৎকালীন সভাপতি নূরে আলম সিদ্দিকীর সভাপতিত্বে সভায় সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক শাজাহান সিরাজ স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠ করেন।

ইশতেহারে স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের সর্বাধিনায়ক হিসেবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম ঘোষণা করা হয়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি’ গানটিকে নির্বাচিত করা হয় জাতীয় সংগীত হিসেবে। ঠিক হয়, বাংলাদেশের পতাকা হবে সবুজ জমিনের মাঝে লাল সূর্য, মাঝে সোনালি মানচিত্র।

পল্টনের সেই জনসভায় বঙ্গবন্ধু কর-খাজনা না দেওয়ার ঘোষণা দেন। সামরিক সরকারকে গণপ্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি তাদের ব্যারাকে ফিরে যেতে বলেন। বঙ্গবন্ধু সেদিন নির্দেশ দেন, আমি যদি নাও থাকি, আন্দোলন যেন না থামে।

হরতাল চলাকালে জনতার স্বতঃস্ফূর্ত মিছিলে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর গুলি ও বিভিন্ন ঘটনায় সারা দেশে শতাধিক মানুষের প্রাণ যায় সেদিন। ঢাকা ছাড়াও রংপুর ও সিলেটে কারফিউ জারি করা হয়।

প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান এক ঘোষণায় ১০ মার্চ ঢাকায় নেতৃবৃন্দের সম্মেলনের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন। রাওয়ালপিন্ডির প্রেসিডেন্ট ভবন থেকে ঘোষণা করা হয়, এই সম্মেলন অনুষ্ঠানের পর দুই সপ্তাহের মধ্যে জাতীয় পরিষদ অধিবেশন হবে। ইয়াহিয়ার সেই আমন্ত্রণ তাৎক্ষণিকভাবে প্রত্যাখান করেন বঙ্গবন্ধু। তবে জুলফিকার আলী ভুট্টো তা গ্রহণ করেন।

বঙ্গবন্ধু ভুট্টোর উদ্দেশে বলেন, গণতান্ত্রিক নিয়মে প্রণীত এক শাসনতন্ত্র যদি না চান, তাহলে আপনাদের শাসনতন্ত্র আপনারা রচনা করুন। বাংলাদেশের শাসনতন্ত্র আমরাই রচনা করব।

 

পূর্ববর্তী নিবন্ধবাঁশখালীর খুনের আসামি নগরী থেকে গ্রেপ্তার
পরবর্তী নিবন্ধবিল ভাউচার ছাড়া সাড়ে ১০ লাখ টাকার ভ্রমণ বিল তোলার সত্যতা মিলল