শৈশবে আমরা এত হানাহানি এতো মারামারি এতো টানাটানি দেখিনি। এখন এসে এসব দেখে ভাবতে হয় বাপ দাদারা কায়িক শ্রমের মাধ্যমে জীবন জীবিকা নির্বাহ করে নিজেদের মর্যাদা রক্ষা করে পরিবারকে সমাজকে সুন্দরভাবে তারা পরিচালনা করেছেন। এখন রাজনীতি আর সমাজনীতিতে ভাইয়ে ভাইয়ে মারামারি, ধর্ম নিয়ে টানাটানি, স্বার্থের জন্য হানাহানি প্রতিদিন যেন অনিরাপদ জীবনের দিকে ঝুঁকে পড়ছি। মা খালারা পর্দানশীন ছিল এখনকার মতো কেউ বলেনি কেন পর্দা করছ তোমার স্বাধীনতা হরণ হচ্ছে। এতো মৌলানা ছিল না, ছিল না এতো মতভেদের ছড়াছড়ি তাই ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভ আর হুকুম আহকাম পালনে তাদের ছিলো আল্লাহ ভীতি। এখন মৌলানাও বেশি, মতভেদও বেশি। তাদের এতো এতো ওয়াজেও হেদায়েত হয় না। রাজনীতি ছিলো তখন সম্মানিত ব্যাক্তিগণের একটি সেবা আর এখন হয়েছে অযোগ্য ব্যক্তিদের লাভজনক ব্যবসা। এসব চোখের সামনে ভেসে ওঠে। প্রযুক্তি বেড়েছে কিন্তু ধর্মীয় মূল্যবোধ বাড়েনি। শিক্ষা বেড়েছে কিন্তু সুশিক্ষিত নাগরিক বাড়েনি। আত্মনির্ভরশীলতা কমে পরনির্ভরশীলতা বেড়েছে। খাবারের চেয়ে ঔষধের ব্যবহার বেড়েছে। মিতব্যয়ী কমে অপচয়ী বেড়েছে। জীবনের মূল্য শূন্যের কোঠায় এসেছে। আজব মনে হয় এসব দেখলে। কুকুরদের স্বভাব মানুষের মধ্যে এসে গেছে। আবাদ নয় বরবাদে ব্যস্ত। কে কার চেয়ে বেশি শক্তিশালী সে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত। পেছনে যাওয়াতো সম্ভব নয়। আমাদের বাপ দাদারা এতো সব না পেয়েও আমাদের চেয়ে ভালো জীবনযাপন করেছে। এতো এতো আবিষ্কারের পরও আমরা হারাচ্ছি আমাদের সুস্থতা। তার চেয়েও বড়ো কথা উঠোনের সেই শাক সবজি আজ আর হয় না। গোলা ভরা ধান আর গোয়াল ভরা গরু নিশ্চিহ্ন হতে চলছে। পুকুর ভরা মাছ সেতো স্বপ্নের মধ্যে দেখা ছাড়া উপায় নেই কারণ সব পুকুরতো লাগিয়ত করে রেখেছে। নিজের ঘরের মুরগী দিয়ে মেহমানদারি আর ফার্মের মুরগীর মেহমানদারীর পার্থক্য হয়তো এ যুগের সন্তানেরা ধারণাও করতে পারবে না। আপসোসটা থেকে যাবে আমৃত্যু। আমাদের সন্তানদের জন্য রেখে যাচ্ছি একটি বিপর্যস্ত জীবন। তারা বিষ খেয়ে বিষ হজম করবে। আর বিষকে সারানোর জন্য সারা দুনিয়ায় ঔষধ খুঁজবে। অপ্রাপ্তবয়স্ক ছেলে মেয়ে নিজেদেরকে অজানা গন্তব্যে ছেড়ে দিচ্ছে। বাবা মা শঙ্কিত হয়ে থাকতে হয় তার সন্তান কখন জানি কোন ঘটনা ঘটিয়ে ফেলে। কার দোষ দেবেন? পরিবারের শিক্ষা নাকি সমাজের নৈতিক অবক্ষয়? মুসলিমদের রীতি অনুযায়ী একে অপরকে দেখলে সালাম দিত আর এখন বলে কী অবস্থা? আশ্চর্য হয়ে যাই যখন বড়দের সামনে তরুণদের উশৃঙ্খল আচরণ দেখি। যা হরহামেশা রাস্তাঘাটে অলিতে–গলিতে দেখতে পাওয়া যায়। ধর্ষণ, বলৎকার আর পরকীয়া যেন প্রতিযোগিতা করে বাড়ছে। কথায় কথায় খুনোখুনিটা ট্রেন্ড হয়ে গেছে। শাস্তির ভয় যেন তাদের অন্তরে কাজ করে না। পাষাণ হয়ে গেছে আধুনিক এই বিশ্বের মানুষগুলো। আমি শঙ্কায় আছি ভবিষ্যতে আমাদের সন্তানেরা কি তবে মনুষ্যত্ব হারাবে? আমাদের সন্তানদের কী হবে?