শুভপুরে নতুন ব্রিজ নির্মাণে শত কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক । মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত ব্রিজটি রক্ষণাবেক্ষণের সিদ্ধান্ত হয়নি

মাহবুব পলাশ, মীরসরাই | শনিবার , ১ মার্চ, ২০২৫ at ১০:৩৯ পূর্বাহ্ণ

ঢাকাচট্টগ্রাম পুরাতন মহাসড়কের শুভপুর ব্রিজটির পাশে নতুন করে ব্রিজ নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। প্রায় এক যুগ ধরে চলাচলে ভোগান্তি ও দুর্দশার পর বর্তমান ব্রিজের ডান পাশে জমি অধিগ্রহণ সহ শত কোটি টাকার প্রকল্প ইতোমধ্যে অনুমোদন হয়েছে। শুধুমাত্র অর্থ বরাদ্ধের অপেক্ষা। তবে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত পুরোনো ব্রিজটি ভেঙে ফেলা, সংস্কার বা রক্ষণাবেক্ষণের বিষয়ে এখনো হয়নি কোনো সিদ্ধান্ত। ঢাকাচট্টগ্রাম পুরাতন মহসড়কের মীরসরাই উপজেলার শুভপুর এলাকায় ফেনী নদীর উপর এ ব্রিজের অবস্থান। ১৯৫২ সালে ব্রিটিশ সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী ব্রিজটি নির্মাণ করা হয়। প্রথমে সেতুটি ছিল ১২৯ মিটার দীর্ঘ বেইলি ট্রাসের উপর আরসিসি স্লাবের। পরবর্তীতে ফেনী নদীর প্রশস্ততা বৃদ্ধি পাওয়ায় ১৯৬৮ সালে ব্রিজটি আরও সমপ্রসারণ করলে মোট দৈর্ঘ্য দাঁড়ায় ৩৭৪ মিটারে। ব্রিজটি ফেনী সড়ক বিভাগের অধীনে।

স্বাধীনতার আগে ঢাকাচট্টগ্রাম সড়কে ফেনী অংশে শুভপুর ব্রিজটি ছিল এই অঞ্চলের দীর্ঘ ব্রিজ। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে নতুন ঢাকাচট্টগ্রাম মহাসড়ক চালু হলে এই অংশে যানবাহনের চাপ কমে। তবে মহাসড়কে যানজট সৃষ্টি হলে ঢাকাচট্টগ্রামগামী গাড়ি ছাড়াও প্রতিদিন ব্রিজের উপর দিয়ে তিন জেলার ভারী যানবাহন চলাচল করে। দীর্ঘদিন যাবৎ ব্রিজের আশপাশে মাত্রাতিরিক্ত বালু উত্তোলন, মুক্তিযুদ্ধের সময় ক্ষতিগ্রস্ত ও দীর্ঘদিনের পুরনো হওয়ায় ব্রিজটি ঝুঁকির মুখে পড়েছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ব্রিজের মাঝখানে দুটি অংশ ভেঙে পড়ে যাওয়ায় জোড়াতালি দিয়ে কোনভাবে ছোট যানবাহন পার হচ্ছে। টেঙি বা বাইক উঠলেই হেলে দুলে উঠে ব্রিজ। ব্রিজের মূল চারটি পিলারের মধ্যে একাধিক পিলারের অবস্থা নড়বড়ে। যে কোনো সময় নদীতে ধসে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। মাঝখানে ৫০ ফুট ঢালাইয়ের কার্পেটিং উঠে গেছে। আবার কয়েক স্থানে ফেটে আলাদা হয়ে যাবার মতো অবস্থা। ব্রিজের উত্তর পাশে শত ফুট লোহার রেলিং নেই। রেলিং না থাকায় হেটে চলাও ঝুঁকিপূর্ণ।

স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা জানান, ১৯৭০ সাল পর্যন্ত ব্রিজটি ভালোই ছিল। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে এ ব্রিজ থেকেই শত্রুদের মোকাবিলা করেন মুক্তিযোদ্ধারা। পাক হানাদার বাহিনীকে প্রতিহত করার জন্য মুক্তিযোদ্ধারা ব্রিজের ফেনী প্রান্তে ১০ম পিলারে মাইন বিস্ফোরণের মাধ্যমে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। এছাড়া যুদ্ধকালীন বিভিন্ন সেক্টরের সেক্টর কমান্ডাররা এই ব্রিজের আশপাশে অবস্থান নিয়ে যুদ্ধ পরিচালনা করেছেন। পাক হানাদারদের গোলাবারুদের দাগ এখনও ব্রিজের গায়ে লেগে আছে। স্বাধীনতা পরবর্তীকালে বিধ্বস্ত অংশ পুনরায় মেরামত করা হয়।

স্থানীয়রা আরও জানান, মুক্তিযুদ্ধের সময় সম্মুখযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত এবং ‘কলমিলতা’সহ বহু বাংলা ছায়াছবির শুটিং স্পট হিসেবে শুভপুর ব্রিজ ব্যবহৃত হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা এবং স্থানীয় এলাকাবাসীর দাবি, স্বাধীনতা যুদ্ধের সাক্ষী এ ব্রিজটি সংস্কার করে ঐতিহাসিক স্থাপনা হিসেবে সংরক্ষণের পাশাপাশি যান চলাচলে নতুন ব্রিজ নির্মাণ করা হোক।

এ বিষয়ে ফেনী সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীতি চাকমা বলেন, ইতোমধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ ব্রিজটির পাশে নতুন একটি ব্রিজ নির্মাণের উদ্যোগ প্রক্রিয়াধীন। ইতোমধ্যে ভূমি অধিগ্রহণ এবং ব্রিজের দরপত্র সহ প্রায় ১০০ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন হয়েছে। শুধুমাত্র অর্থ বরাদ্দের অপেক্ষায় পুরো প্রক্রিয়া। তিনি আরো বলেন, মুক্তিযোদ্ধাগণের দাবি অনুসারে নতুন ব্রিজ নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হলে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত সেতুটিও সংস্কার করে সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয়ার প্রস্তাবনা ও পুণঃউপস্থাপিত হতে পারে। তবে এই বিষয়ে এখনো কোন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধরমজানে ডায়াবেটিক রোগীর ব্যবস্থাপনা
পরবর্তী নিবন্ধপদত্যাগপত্র দিলেন শিল্পকলার ডিজি