মেঘের বাড়ি খ্যাত সাজেকে এখন পর্যটকের আনাগোনা নেই। সমপ্রতি আগুনে পুড়ে ছাই হয়েছে কয়েকটি রিসোর্ট। পুড়েছে বসতবাড়িও। বাঁশ–কাঠে ব্যাঙের ছাতার মত গজিয়ে ওঠা রিসোর্ট ও অপরিকল্পিত স্থাপনার কারণে আগুনের ভয়াবহতা বেশি হয়েছে বলে দাবি করছে ফায়ার সার্ভিস।
সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৭০০ ফুট উঁচু সাজেকে আগুনে ছাই হওয়া কোনো স্থাপনাতে ছিল না অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থাও। সরকার বলছে, ভবিষ্যতে এমন দুর্ঘটনারোধে পরিকল্পিত পর্যটনকেন্দ্র গড়ে তোলা হবে। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি পৌনে ১টার দিকে সাজেকের ইকোভ্যালি রিসোর্টের দ্বিতীয় তলা থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। মুহূর্তেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে অবকাশসহ আশপাশের অন্য রিসোর্ট–কটেজ, দোকানপাট ও বসতঘরে।
আগুনের খবর পেয়ে দীঘিনালা ফায়ার স্টেশন থেকে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি এসে পৌঁছায় বেলা ৩টার দিকে। এরপর খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি, বান্দরবান ও মাটিরাঙ্গা ফায়ার স্টেশন থেকেও গাড়ি আসে। সব মিলিয়ে ১১টি ইউনিট আগুন নেভানোর কাজ শুরু করে। বিকেল সোয়া ৫টার দিকে আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসে। তীব্র পানির সংকটের কারণে সাজেকে আগুন নেভানোর জন্য পর্যাপ্ত পানি পাননি বাসিন্দারা। দীর্ঘ সময় ধরে আগুন জ্বলতে দেখা ছাড়া তাদের আর কিছুই করার ছিল না।
সাজেক রিসোর্ট–কটেজ মালিক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুর্পন দেব বর্মণ দাবি করেন, পুড়ে যাওয়া স্থাপনাগুলো অপরিকল্পিতভাবে নির্মাণ হয়েছিল। পর্যটন কেন্দ্রের শুরুতে যখন রির্সোটগুলো নির্মাণ করা হয়েছে তখন তা পরিকল্পিতভাবে শুরু করা হয়নি। তিনি বলেন, রুইলুই ভ্যালিতে ফায়ার সার্ভিস স্টেশন থাকলে এত ক্ষয়ক্ষতি হতো না।
খাগড়াছড়ি ফায়ার সার্ভিসের উপ–সহকারী পরিচালক জাকের হোসেন বলেন, অল্প জায়গায় কাঠ ও বাঁশের তৈরি স্থাপনাগুলোর ঘনত্ব বেশি হওয়ায় আগুন দ্রুত ছড়ায়। একটা রির্সোট থেকে আরেকটার দুরত্ব ১ থেকে ২মিটার এ ছাড়া কোথাও অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা ছিল না। কাঠের তৈরি স্থাপনায় আগুন দ্রুত ছড়ায়। এছাড়া বাতাসের কারণে আগুন দ্রুত বিস্তার লাভ করে। যদি পাকা স্থাপনা থাকত তাহলে আগুন এতোটা ভয়ংকর হয়ে উঠত না। তাছাড়া আমাদের ইউনিট পানি স্বল্পতার কারণে কাজ করতে কষ্ট হয়েছে। পানিবাহী গাড়িগুলো সাজেকের উঁচু পাহাড়ি পথে চলাচলে সমস্যা হয়েছে। ভবিষ্যতে এমন অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা এড়াতে সাজেকে ফায়ার সার্ভিস স্টেশন স্থাপন করা জরুরি। পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা আগুনের ঘটনার পর সাজেক পরিদর্শন করেছেন। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করে তিনি পরিকল্পিতভাবে সাজেকে পর্যটককেন্দ্র গড়ে তোলার আশ্বাস দিয়েছেন। এদিকে, অগ্নিকাণ্ডের পর নিজেদের বসতবাড়ি হারিয়ে লুসাই ও ত্রিপুরা পরিবারের মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন স্থানীয় গির্জায়। দ্রুত তাদের পুনর্বাসনের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।