ডায়াবেটিস সচেতনতা দিবস আজ। একই সঙ্গে বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির ৬৯তম প্রতিষ্ঠা দিবস। ১৯৫৬ সালের এই দিনে অধ্যাপক ডা. মো. ইব্রাহিমসহ আরো কয়েকজন সমাজসেবক ও ব্যক্তির উদ্যেগে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় এই অনন্য ডায়াবেটিস সমিতির প্রতিষ্ঠা হয়। এবারের মুখ্য প্রতিপাদ্য বিষয়–ঝুঁকি জানুন, সনাক্ত করুন, পদক্ষেপ নিন।
বিশ্বজুড়ে ডায়াবেটিক রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। দেড় কোটির কাছাকাছি মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। সেজন্যই মানুষের মধ্যে সচেতনতার লক্ষ্যেই প্রতি বছর ২৮ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতি, এর অঙ্গ প্রতিষ্ঠান এবং বিভিন্ন জেলায় অবস্থিত অধিভুক্ত সমিতিগুলো দেশব্যাপী মানুষকে সচেতন করার লক্ষ্যে সেবা কার্যক্রম ও নানা কর্মসূচি পালন করছে। যেহেতু ডায়াবেটিস সারাজীবনের রোগ কিন্তু নিয়ন্ত্রণযোগ্য। তাই সঠিক পদ্ধতিতে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে জটিলতা এড়িয়ে সুস্থ ও কর্মক্ষম থাকা সম্ভব।
কিভাবে –
* যাদের ডায়বেটিস আছে তারা একজন ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞের সেবা নিন।
* পুষ্টিবিদের কাছ থেকে আপনার সারাদিনের খাদ্য ব্যবস্থা, জীবনযাত্রার প্রণালী সম্পর্কে জানুন।
* ওজন কম বা বেশি আছে কিনা তাও জানতে হবে। অর্থাৎ দেহের ওজন আদর্শ ওজনে রাখতে হবে। কারণ দেহের ওজনের সাথেও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ জড়িত।
* ২ মাস পর পর ডায়াবেটিস চিকিৎসকের সেবা নিন।
* দেহের জরুরি অবস্থা যেমন কোনো অপারেশন, ডায়রিয়া, জ্বর, কিডনি, হার্ট, লিভার যাই থাকুক না কেন চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। ভালো থাকুন।
যাদের ডায়াবেটিস নেই তারা আরও বেশি সচেতন হোন।
কিভাবে –
* বছরে একবার হলেও ডায়াবেটিস পরীক্ষা করুন।
* ওজনের ব্যাপারে সতর্ক হোন।
* জীবনযাত্রার প্রণালী, ব্যায়াম, ঘুম এসব ব্যাপারে সচেতন হতে হবে।
* ধূমপান, অ্যালকোহল, জর্দা বাদ দিতে হবে।
রাত জাগা, দেরীতে ঘুম থেকে ওঠা এবং অলস জীবন যাপন, খাদ্যাভাসে ব্যাপক পরিবর্তনের কারণে ডায়াবেটিক রোগীর সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে সূত্রে জানা গেছে, ডায়াবেটিসে আক্রান্তের সংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে অষ্টম।
এবারের প্রতিপাদ্য বিষয়ের আলোকে মানুষকে সচেতন হতে হবে। নতুবা ডায়াবেটিসের ঝুঁকি অনেক। যদি ডায়াবেটিস বেড়ে যায় তখন পায়ের পাতা থেকে মাথা পর্যন্ত ঝুঁকি বেড়ে যায়।
* ঝুঁকি শনাক্তকরণের জন্য অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
* কোনোমতেই ফার্মেসির মানুষ, কবিরাজ, হারবাল চিকিৎসা এবং নিজে নিজে ডায়াবেটিস চিকিৎসা করা যাবে না।
* যখনই কোনো জটিলতা শনাক্ত করবেন চিকিৎসক, অবশ্যই সঠিক নিয়মে চিকিৎসা করাতে হবে।
ডায়াবেটিসের ঝুঁকি
ডায়াবেটিস রোগ শনাক্ত হওয়ার পর সঠিক নিয়মে চিকিৎসা না নিলে অর্থাৎ নিয়ন্ত্রণ না করতে পারলে হার্ট, কিডনির জটিলতা, চোখের জটিলতা এবং দেহের প্রতিটি অঙ্গের মারাত্মক সমস্যা হতে পারে। তাই সচেতন হতে হবে এখনই।
উদাহরণস্বরূপ ডায়াবেটিস রোগীর (প্রাপ্তবয়স্ক) একদিনের খাদ্য তালিকা নিচে দেয়া হলো –
* সকাল ৮:০০– ৮:৩০ এর মধ্যে : আটার রুটি –১২০ গ্রাম (৪ টা ছোট পাতলা)
ডিম ১ টা অথবা ডাল, সবজি : ইচ্ছেমতো, ফল : ইচ্ছেমতো (যেমন –আমড়া, পেয়ারা)।
* সকাল ১১ টায় (অবশ্যই খাবেন)- মুড়ি বা বিস্কুট ৩০ গ্রাম, মিষ্টি ফল দিনে যেকোনো ১টি। যেমন – আম/ আপেল/ পেয়ারা।
* দুপুর ২ টার মধ্যে ভাত : ১২০ গ্রাম চালের ৪ কাপ, মাছ/মাংস : ৮০ গ্রাম (২ টুকরা), ডাল : ৩০ গ্রাম (২কাপ মাঝারি ঘন), সবজি : ইচ্ছেমতো, শাক, সালাদ, লেবু।
* বিকেল ৫:০০–৬:০০ টার মধ্যে দুধ : ১২৫ মিলি লিটার (১ কাপ)/ দই ১ কাপ/ বাদাম ৩০ গ্রাম/ পনির/ ছানা (অথবা ডাল বা চীনা বাদাম– ৩০ গ্রাম)।
* রাতের খাবার ৯ টার মধ্যে আটার রুটি–১৫০ গ্রাম (৪ টা ছোট পাতলা) অথবা ভাত ৩ কাপ, মাছ/ মাংস ৬০ গ্রাম (১ টুকরা), ডাল ৩০ গ্রাম (২ কাপ মাঝারি ঘন), সবজি ইচ্ছেমতো।
একবেলা রোগীর সুবিধামতো সময়ে ৩০–৪০ মিনিট হাঁটতে হবে। হাঁটা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে ওষুধের মতো কাজ করে। আসুন নিজে সচেতন হই, অন্যদের সচেতন হতে উৎসাহিত করি।
লেখক : চট্টগ্রামের প্রথম ক্লিনিক্যাল পুষ্টিবিদ, কনসালট্যান্ট, ল্যাব এইড ও পার্কভিউ হসপিটাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক লিমিটেড, চট্টগ্রাম হার্ট ফাউন্ডেশন