বান্দাহ! আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। কত চমৎকার ভরসা ও নির্ভরতার কথা! এ কথা শুধু আল্লাহতাআলাই তার বান্দার উদ্দেশ্যে বলতে পারেন। আর আল্লাহতাআলা দুনিয়াতে কাউকেই তার রহমত থেকে বঞ্চিত করেন না। হোক সে তার ইবাদতকারী কিংবা অবাধ্য! কিন্তু কেন? রাসুলে আরাবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তো এভাবেই দোয়া করতেন–উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুয়্যুন তুহিব্বুল আফওয়া ফাঅফু আন্নি–অর্থ : হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই আপনি ক্ষমাশীল ক্ষমা করাকে ভালোবাসেন সুতরাং আমাকে ক্ষমা করে দিন। নির্ভয়ে এ কথা কার কাছে বলা যায়? তিনি কে? তিনি আর কেউ নন তিনি হলেন–মহান আল্লাহ। নিশ্চয়ই তিনি ক্ষমাশীল ও দয়ালু। কোরআনুল কারিমের অনেক স্থানে ভরসার এ কথা তিনিই সবাইকে শুনিয়েছেন। দিয়েছেন নির্ভয়। থাকতে বলেছেন হতাশামুক্তভাবে। যেমন তিনি বলেন–ঘোষণা করে দাও (আমার এ কথা) হে আমার বান্দারা! তোমরা যারা নিজেদের প্রতি জুলুম করছো তারা আল্লাহর করুণা থেকে নিরাশ হয়ো না নিশ্চয়ই আল্লাহ সব পাপ মাফ করে দেবেন। নিশ্চয়ই তিনিই চরম ক্ষমাশীল পরম দয়ালু। (সুরা যুমার : আয়াত : ৫৩)
মানুষ আল্লাহতায়ালাকে দুনিয়ার চোখ দ্বারা দেখতে পায় না এবং ইন্দ্রিয়ের সাহায্যে অনুভবও করতে পারে না। তাই বলে আল্লাহতায়ালাকে দূরে মনে করা ঠিক নয়। ইসলামের বিধানে মানুষের মনের আশা পূরণ সন্তান লাভ কল্যাণপ্রাপ্তি ইত্যাদি সবকিছুই একমাত্র আল্লাহর হুকুমে হয়ে থাকে। তিনি ছাড়া অন্য কারও এ বিষয়ে হন্তক্ষেপ করার কোনো ক্ষমতা নেই। এর ওপর দৃঢ় বিশ্বাস রাখা প্রতিটি মুমিন–মুসলমানের জন্য ফরজ। গায়েবি বিষয়ে তথা উপায়–উপকরণের ঊর্ধ্বে কোনো বিষয়ে আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও কাছে কিছু চাওয়া মারাত্মক অপরাধ যা ব্যক্তিকে শিরক পর্যন্ত পৌঁছে দেয়। এ প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা বলেন সে আল্লাহকে ছাড়া এমন কিছুকে ডাকে যা না পাবে অপকার করতে আর না উপকার এটাই চরম বিভ্রান্তি। সুরা হজ : ১৩। কোরআন মাজিদের অন্যত্র আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন তাকে ছেড়ে দিয়ে তোমরা যাদের প্রতি ঝোঁকো তাদের ডাকো কিন্তু তারা তোমাদের থেকে বিপদ–আপদ দূর করার কোনো ক্ষমতা রাখে না আর তা বদলাবারও না। সুরা ইসরা : ৫৬
আলোচ্য বিষয়ে হাদিসে ইরশাদ হয়েছে হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাকে সম্বোধন করে বলেছেন হে বৎস! তুমি যদি (কোনো কিছু) চাও তবে আল্লাহর কাছে চাও। আর যদি সাহায্য প্রার্থনা করো তবে আল্লাহর কাছেই সাহায্য প্রার্থনা করো। জেনে রেখো যদি সব মানুষ সংঘবদ্ধভাবে তোমার উপকার করতে চায় তবে তারা ততটুকু উপকারই করতে পারবে যতটুকু আল্লাহ তোমার জন্য লিখে রেখেছেন। আর যদি তারা তোমার ক্ষতি সাধন করতে চায় তবে ততটুকুই ক্ষতি করতে পারবে যতটুকু আল্লাহ নির্ধারণ করে রেখেছেন। কোরআন মাজিদের সুরা নুহে বর্ণিত আছে যে হজরত নুহ (আ.) এর যুগে কিছু লোক ওয়াদ, সুয়া, ইয়াগুস, ইয়ায়ুক, নসর নামক প্রতিমার কাছে আরাধনা করত নিজেদের প্রয়োজনে তাদের কাছে চাইত অনুরূপ জাহিলিয়াতের যুগেও লোকেরা লাত, মানাত, উজ্জাসহ নিজেদের হাতে প্রস্তুতকৃত অসংখ্য প্রতিমার কাছে বিভিন্ন জিনিস চাইত আল্লাহতায়ালা কোরআন মাজিদের বহু আয়াতে এর অসাড়তার বর্ণনা করেছেন। পাশাপাশি তিনি ছাড়া অন্য কারও কাছে কিছু চাওয়াকে স্থায়ীভাবে নিষেধ করে বলেন সুতরাং আল্লাহর সঙ্গে তোমরা অন্য কাউকেও ডেকো না। সুরা জিন : ১৮
আল্লাহতায়ালা বান্দার এত কাছাকাছি অবস্থান করেন যে কোনো প্রকার মাধ্যম ও সুপারিশ ছাড়া বান্দা সরাসরি সর্বত্র ও সবসময় সৃষ্টিকর্তা আল্লাহতায়ালার কাছে আবেদন–নিবেদন পেশ করতে পারে। কোরআনে কারিমে বিষয়টি বলা হয়েছে এভাবে পৃথিবী ও আকাশমণ্ডলে যা–ই আছে সবাই তার কাছে নিজের প্রয়োজন প্রার্থনা করছে। প্রতি মুহূর্তে তিনি নতুন নতুন কর্মকাণ্ডে ব্যস্ত। সূরা আর রাহমান : ২৯। তাই গায়েবি বিষয়ে বিশেষ করে সন্তান লাভের জন্য আল্লাহ ছাড়া অন্য যে কারও কাছে কিছু চাওয়া অজ্ঞতা, বোকামি ও বৃথা। চাই সে মানুষ হোক অথবা জীবজন্তু গাছপালা বা বটবৃক্ষ। আমাদের উচিত একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর কাছে চাওয়া তিনি বান্দার দোয়া কবুল করেন বান্দার জন্য কল্যাণের ফয়সালা করেন। তোমাদের প্রতিপালক বলেছেন তোমরা আমার কাছে দোয়া করো আমি তোমাদের দোয়া কবুল করব। সুরা মুমিন : ৬০। আল্লাহতায়ালা মানুষের প্রতিটি বিষয় সম্পর্কে জ্ঞাত। প্রতিটি প্রয়োজন যা ব্যক্তির মনের গহীনে লুপ্ত আছে যার বহিঃপ্রকাশ এখনও ঘটেনি তাও তিনি জানেন। কারণ তিনি মহাজ্ঞানী অতিশয় জ্ঞাত। তিনিই একমাত্র জানেন কোন জিনিসে মানুষের উন্নতি এবং মানুষের কল্যাণের জন্য কোন নীতিমালা আইনকানুন ও বিধিনিষেধ আবশ্যক।
আল্লাহতাআলা সমগ্র বিশ্বের একচ্ছত্র অধিপতি। ভালো–মন্দ, বাঁচা–মরা, সন্তান দান, হালাল রিজিক দান, চাকরি ও ব্যবসা–বাণিজ্যের সুব্যবস্থা ইত্যাদি বিষয়ের একচ্ছত্র মালিক তিনি। এজন্য দুনিয়া ও পরকালের সব চাওয়া–পাওয়ার আশা করতে হবে শুধু আল্লাহ তাআলার কাছে। দুঃখকষ্ট জীবনে আসবে এটাই স্বাভাবিক। তাই বলে নিরাশ হয়ে এদিক–সেদিক ঘুরলেই কি সমাধান হবে? কখনো নয়। তাই হতাশা না হয়ে, মনক্ষুণ্নতায় না ভুগে, সুন্নাহভিত্তিক আমলে মনোযোগী হওয়াই মুমিন মুসলমানের কাজ। মানুষের সব দরজা বন্ধ হয়ে গেলেও আল্লাহর রহমতের এবং কল্যাণের দরজা কখনোই বন্ধ হয় না। দুনিয়ার জীবনে চলার পথে কোনো একটি দিকের দরজা বন্ধ হয়ে গেলেও তার জন্য অন্যান্য দিক থেকে রহমতের অনেকগুলো দরজা যিনি খুলে দেন তিনিই আল্লাহ। তিনিই রহমান। তিনি দয়াশীল এবং তিনি ক্ষমা প্রার্থনাকারীর জন্য অত্যন্ত ক্ষমাশীল। আল্লাহতাআলা মুসলিম উম্মাহকে নিয়মিত ফরজ নামাজ পড়ার, কোরআন তেলাওয়াত করার উঠতে–বসতে, জিকির–আজকার করার, সাধ্যমতো দান–সাদকা করার, সময় মতো ফরজ রোজা রাখার পাশাপাশি নফল নামাজ ও রোজা পালন করার তাওফিক দান করুন। নিয়তের বিশুদ্ধতা বজায় রেখে আল্লাহর উপর ভরসা করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
লেখক : ইসলামি গবেষক ও কলামিস্ট