নগরীর বাকলিয়া থানার বাসুর কলোনি থেকে অপহরণ হওয়া এক শিশুকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল থেকে উদ্ধার করেছে র্যাব। গতকাল বৃহস্পতিবার ভোরে শিশুটিকে চট্টগ্রামে আনা হয়। এ ঘটনায় কিশোরগঞ্জ সদর থেকে অপহরণকারী দুলাল মিয়াকে (৪৮) গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। দুলাল একজন পেশাদার শিশু চোর চক্রের সদস্য বলে জানান র্যাব। বিভিন্ন শিশুর ছবি তুলে ক্রেতাদের কাছে পাঠান দুলাল, এরপর সেই শিশুকে পছন্দ হলে অপহরণ করতেন দুলাল। এ নিয়ে তার বিরুদ্ধে পূর্বেও মামলা থাকার তথ্য পেয়েছে বলেও জানান র্যাব।
র্যাব সূত্রে জানা যায়, গত ১৭ ফেব্রুয়ারি ভুক্তভোগী ফাতেমা আক্তার পাঁচ বছরের কন্যা ও ১৫ মাসের ছেলে রাব্বিকে নিয়ে চট্টগ্রাম রেলওয়েস্টেশনে যান নেত্রকোণা যাওয়ার উদ্দেশ্যে। সেখানে দুলাল মিয়া নামে একজনকে নেত্রকোনাগামী ট্রেনের সময়সূচি জানতে চান ফাতেমা। ট্রেন নেই জানালে দুলাল মিয়াকে বোয়ালখালীর বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার অনুরোধ করেন ওই নারী। এর আগে থেকেই চট্টগ্রাম রেলওয়েস্টেশনে ওঁৎ পেতে ছিলেন শিশু অপহরণ চক্রের সদস্য দুলাল মিয়া। পাঁচ বছরের কন্যা ও ১৫ মাসের ছেলে শিশুকে নিয়ে বিপদে পড়া এ নারীকে তার ফাঁদে ফেলেন সহজেই। বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে দুলাল ওই নারীকে সন্তানসহ কোতোয়ালীর বিভিন্ন এলাকায় ঘুরিয়ে রাতে বাকলিয়া থানার বাসুর কলোনি নামক জায়গায় একটি কক্ষ ভাড়া করে রাখেন। এরই মধ্যে প্রবাসী এক দম্পতির সাথে যোগাযোগ হয় দুলালের। ১৫ মাসের ওই শিশুর বিনিময়ে চুক্তি হয় লাখ টাকার। পরদিন ফাতেমা সকালের নাশতা খেয়ে গোসলখানায় গেলে দুলাল মিয়া ১৫ মাসের শিশু রাব্বিকে নিয়ে পালিয়ে যান। এ ঘটনায় ফাতেমার স্বামী বাদী হয়ে ২৪ ফেব্রুয়ারি বাকলিয়া থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা করেন। ওই মামলার প্রেক্ষিতে র্যাব–১৪ এবং র্যাব–৭ যৌথ অভিযান চালিয়ে দুলালকে গ্রেপ্তার করে।
র্যাব বলছে– দুলাল মিয়া এবং তার পরিবার ভয়ঙ্কর সক্রিয় অপহরণ চক্রের সাথে জড়িত। এর আগেও তিনি একটি শিশুকন্যা চুরি করে মামলার আসামি হয়েছেন। ওই মামলায় এখনো জেল খাটছেন তার স্ত্রী। গত বুধবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে কিশোরগঞ্জ জেলার সদর থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে দুলালকে গ্রেপ্তার করা হয়। ওই দিনগত রাতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইল থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে উদ্ধার করা হয় শিশুটিকে। একইসাথে গ্রেপ্তার করা হয় মোরশেদ নামে আরেকজনকে। গ্রেপ্তার মো. দুলাল মিয়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরেল থানার শোলাবাড়ি এলাকার দুধ মিয়ার ছেলে এবং মোরশেদ মিয়া একই থানাধীন শাখাইতি এলাকার ইজ্জত আলীর ছেলে।
র্যাব–৭ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. মাহবুব আলম বলেন, দুলাল ব্রাহ্মবাড়িয়া জেলায় তার পরিচিত এক প্রবাসী দম্পতির কাছে এক লাখ টাকার বিনিমিয়ে অপহৃত শিশুটিকে বিক্রি করে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানতে পারি, শিশুটি অপর আসামি মোরশেদের কাছে রয়েছে। সেই অনুযায়ী আমরা মোরশেদকে গ্রেপ্তার করে শিশুটিকে উদ্ধার করি। মোরশেদ প্রবাসে ১৭ বছর ছিল। সে ৫টি কন্যা সন্তানের জনক। ছেলে সন্তানের আকাঙ্ক্ষায় সে এই অপহরণ চক্রের যোগাসাজশে প্ররোচনা দিয়ে শিশুটিকে তার কাছে নিয়ে যায়। তিনি বলেন, ক্রাইম ডেটা ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (সিডিএমএস) পর্যালোচনা করে দুলালের বিরুদ্ধে কিশোরগঞ্জের ভৈরবে একটি চুরি সংক্রান্ত মামলার তথ্য পাওয়া গেছে। এর আগেও দুলাল সারা মনি নামে আড়াই বছরের এক শিশুকে অপহরণ করে মামলার এক নম্বর আসামি হয়েছিল। ওই ঘটনায় সম্পৃক্ততার অভিযোগে তার স্ত্রী রুনা বেগম বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন।
দুলাল মিয়ার মোবাইল থেকে চাঞ্চল্যকর তথ্যের কথা জানিয়ে মাহবুব আলম বলেন, দুলাল মিয়ার মোবাইলে বাচ্চা বিক্রি সংক্রান্ত বিভিন্ন ব্যক্তির সাথে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে কথোপকথনের প্রাথমিক তথ্য আমরা পেয়েছি। আপাতদৃষ্টিতে, আসামি এবং তার পরিবার এক ভয়ঙ্কর সক্রিয় অপহরণ চক্রের বলে জানা গেছে। এই চক্রের অন্য সদস্যদের দ্রুত ধরার বিষয়ে র্যাব সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।