খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে রমজানের আগে কমছে প্রায় সব ধরনের ভোগ্যপণ্যের দাম। ব্যবসায়ীরা বলছেন, বর্তমানে বাজারে সরবরাহ বাড়ার কারণে প্রায় সব ধরনের পণ্যের দাম নিম্নমুখী রয়েছে। প্রত্যেক ব্যবসায়ীর দোকান গুদামে ভরপুর পণ্যের মজুদ রয়েছে। দিনভর ট্রাকে ট্রাকে লোড আনলোড করে ব্যস্ত সময় পার করছেন শ্রমিকেরা। ব্যবসায়ীরা বলছেন, রমজান আসার আগেই চট্টগ্রামের আশপাশের বিভিন্ন জেলা উপজেলা থেকে দোকানদাররা খাতুনগঞ্জ থেকে পণ্য নিয়ে যাচ্ছেন। রমজানকে কেন্দ্র করে খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা দুই মাস আগে থেকে পণ্য আমদানি শুরু করে। বর্তমানে বাজারে প্রচুর পণ্য আমদানি হয়েছে। এর প্রভাবে দাম কমছে। তবে কেবল ভোজ্যতেলের বাজার ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে। গতকাল সোমবার খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে অস্ট্রেলিয়ান ছোলার দাম কেজিতে ৩ টাকা কমে বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকায়। অন্যদিকে গত বছরের অবিক্রিত ভারতীয় ছোলা দাম কেজিতে ৪ টাকা কমে এখন বিক্রি হচ্ছে ৯৬ টাকায়। এছাড়া মসুর ডালের দাম কেজিতে ২ টাকা কমে এখন বিক্রি হচ্ছে ১২৫ টাকায়। মটর ডালের দাম কেজিতে ৫ টাকা কমে এখন বিক্রি হচ্ছে ৫৫ টাকা, খেসারি ডাল কেজিতে ৫ টাকা বিক্রি হচ্ছে ১০১ টাকায়, চিনির দাম কেজিতে ৪ টাকা কমে এখন বিক্রি হচ্ছে ১১৪ টাকায়। এছাড়া চিড়ার কেজি ২ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ৫৬ টাকায়। তবে বাড়তি রয়েছে ভোজ্যতেলের বাজার। বর্তমানে পাম তেল মণপ্রতি (৩৭.২৩৭ কেজি) বিক্রি হচ্ছে ৫ হাজার ৮০০ টাকা এবং মণপ্রতি সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ৬ হাজার ৬৫০ টাকায়। অন্যদিকে দেশি পেঁয়াজ কেজিতে ১০ টাকা কমে বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৩৫ থেকে ৪০ টাকায়, ভারতীয় পেঁয়াজ কেজিতে ৫ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ৫৮ থেকে ৬০ টাকায়, চীনা রসূন কেজিতে ২০ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ২১২ টাকা, চীনা আদা কেজিতে ৫০ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ১৩৫ টাকা এবং ভারতীয় কেরালা আদা কেজিতে ২০ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ৯৫ টাকায়।
জানতে চাইলে চাক্তাই আড়তদার ও ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সভাপতি আহসান খালেদ পারভেজ দৈনিক আজাদীকে বলেন, বাজারে পণ্যের সরবরাহ বাড়ার কারণে দাম কমতির দিকে রয়েছে। পেঁয়াজের বাজারে ক্রেতাদের একদম নাগালের মধ্যে রয়েছে। এছাড়া আদা–রসূনের বাজারও সহনশীল অবস্থায় আছে। প্রত্যেক ব্যবসায়ীর দোকান গুদামে পর্যাপ্ত পণ্য রয়েছে। রমজানে দাম বাড়ার আশঙ্কা নাই।
চাক্তাই খাতুনগঞ্জ আড়তদার সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মহিউদ্দিন দৈনিক আজাদীকে বলেন, রমজান আসার আগেই সব ধরনের ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়ছে। তবে কেবল ভোজ্যতেলের বাজারে অস্থিরতা বিরাজ করছে। বাকিসব পণ্যের দাম কম। ছোলার দাম প্রতিনয়ত কমছে। এ বছর প্রচুর পরিমাণ ছোলা আমদানি হয়েছে। এছাড়া কোনো পণ্যের সরবরাহ সংকট নেই। গত বছরের তুলনায় কিছু কিছু পণ্যের দাম বাড়তি, এর একটাই কারণে ডলারের মূল্যবৃদ্ধি। গত বছর ডলারের দাম ছিল ১০৫ টাকা, এখন সেটি ১২২ টাকায় হয়ে গেছে। না হলে দাম আরো কমতো।
এদিকে আবদুর রহমান নামের একজন ভোক্তা জানান, আমাদের দেশের ভোগ্যপণ্যের বাজারে পুরোপুরি ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণে থাকে। ভোগ্যপণ্যের বাজার পাইকারীতে নিম্নমুখী হলেও খুচরা বাজারে এর প্রভাব পড়তে সময় লাগে। তাই পাইকারীতে দাম কমার সরাসরি সুফল সাধারণ ভোক্তারা পান না। কিন্তু দেখা যায়, কোনো পণ্য পাইকারীতে দাম বাড়লে খুচরা ব্যবসায়ীরা সাথে সাথে দাম বাড়িয়ে দেন। তাই প্রশাসনকে নিয়মিত বাজার করতে হবে। যাতে কোনো অসাধু ব্যবসায়ী কারসাজির মাধ্যমে দাম বৃদ্ধি করে বাজার অস্থিতিশীল করতে না পারে।