চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনাল নিশ্চিত করে ফেলেছে নিউজিল্যান্ড। এবারের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আগেই তিন জাতি টুর্নামেন্ট খেলতে পাকিস্তানে গিয়েছিল কিউইরা। সেখানে পাকিস্তানকে ফাইনালসহ দুইবার হারিয়ে জিতে নিয়েছিল টুর্নামেন্টের শিরোপা। এরপর স্বাগতিক পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে শুরু হয়েছিল নিউজিল্যান্ডের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি। সে ম্যাচেও দুর্দান্ত জয় তুলে নিয়ে দারুণ সূচনা করে কিউইরা। গতকাল সোমবার নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে বাংলাদেশকে হারিয়ে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করে ফেলেছে কিউরা। যদিও নিউজিল্যান্ডকে হারাতে পারলে বাংলাদেশেরও সম্ভাবনা জিইয়ে থাকতো সেমিফাইনালে যাওয়ার। কিন্তু সেটা আর হলো না টাইগারদের। বাংলাদেশের এই হারে ‘এ’ গ্রুপ থেকে সেমিফাইনালে নিশ্চিত করল নিউজিল্যান্ড এবং ভারত। বিদায় নিতে হলো স্বাগতিক পাকিস্তানকেও। এখন ভারত এবং নিউজিল্যান্ডের মধ্যকার ম্যাচে নির্ধারিত হবে কোন দল হবে গ্রুপ সেরা। রাওয়ালপিন্ডি ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ম্যাচে বাংলাদেশকে ৫ উইকেটে হারিয়ে টানা দুই জয় নিয়ে সেমিফাইনালে নিউজিল্যান্ড। বল হাতে ব্রেসওয়েলের আগুন ঝরানোর পর ব্যাট হাতে রাচিন বরীন্দ্রর তাণ্ডবে টাইগারদের এক রকম উড়িয়েই দিয়েছে নিউজিল্যান্ড। ব্রেসওয়েলের ক্যারিয়ার সেরা বোলিং আর রাচিন রবীন্দ্রর ক্যারিয়ারের চতুর্থ সেঞ্চুরি নিউজিল্যান্ডের জয়কে সহজ করে দেয়। প্রথম ম্যাচের মতো এ ম্যাচেও ব্যাটিং ব্যর্থতায় হারল বাংলাদেশ। এই ম্যাচে বাংলাদেশের অভিজ্ঞ ব্যাটাররা ব্যর্থ হয়েছেন। পাকিস্তানের মাঠগুলোতে যেখানে রানের বন্যা বইয়ে যাচ্ছে সেখানে আড়াইশর কম রান নিয়ে নিউজিল্যান্ডের মত দলকে আটকানোর চিন্তা করাটা যে বোকামি সেটা যেন চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল কিউই ব্যাটাররা।
টস হেরে ব্যাট করতে নামা বাংলাদেশের শুরুটা ভালোই ছিল। তানজিদ তামিম এবং নাজমুল শান্ত মিলে ৪৫ রান যোগ করেন। ২৪ বলে ২৪ রান করা তামিমকে ফিরিয়ে জুটি ভাঙেন ব্রেসওয়েল। এরপর তিনে নামা মেহেদী হাসান মিরাজ ব্যর্থ হলেন আরো একবার। ১৪ বলে ১৩ রান করে বিদায় নিলে বিপদ বাড়ে বাংলাদেশের। আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান তাওহিদ হৃদয়ও পারেননি বিপদে হাল ধরতে। ব্রেসওয়েলের দ্বিতীয় শিকার হয়ে ২৪ বলে ৭ রান করে ফিরেছেন হৃদয়। ব্যর্থ হলেন দুই অভিজ্ঞ মুশফিক এবং মাহমুদউল্লাহ। বাজে এক শট খেলে ব্রেসওয়েলের বলে স্লগ–সুইপ খেলতে গিয়ে ডিপ মিড উইকেটে ক্যাচ তুলে দেন ২ রান করা মুশফিকুর রহিম। সেই ব্রেসওয়েলের বলে ডাউন দ্য ট্র্যাকে তুলে মারতে গিয়ে ফিরেন মাহমুদউল্লাহ। ১৪ বলে ৪ রান করেন তিনি। দলীয় ১১৮ রানে পঞ্চম উইকেট হারিয়ে বিপদে বাংলাদেশ। তবে একপ্রান্ত মাটি কামড়ে পড়ে ছিলেন শান্ত। কিন্তু তিনিও হার মানেন ৩৮তম ওভারে। ও‘রর্কের বলে ক্যাচ দিয়ে ফেরার আগে ১১০ বলে ৭৭ রান করেন শান্ত। এরপর জাকের আলী ও রিশাদ হোসেন মিলে ইনিংস মেরামতের চেষ্টা করেন। তবে ২৫ বলে ২৬ রান করে রিশাদ বিদায় নিলে ভাঙে প্রতিরোধ। অন্যপ্রান্তে জাকের আলি চেষ্টা করেছিলেন দলকে টানার। কিন্তু দলকে ২৩১ রানে রেখে রান আউট হয়ে ফিরেন আগের ম্যাচে হাফ সেঞ্চুরি করা জাকের আলি। ফেরার আগে ৫৫ বলে ৪৫ রান করেন তিনি। শেষ ওভারে তাসকিনের উইকেট হারায় বাংলাদেশ। আর তাতে ২৩৬ রানে থামে বাংলাদেশের ইনিংস। বল হাতে ৪ উইকেট নিয়ে নিউজিল্যান্ডের সফল বোলার ব্রেসওয়েল। ১০ ওভারে তিনি খরচ করেছেন মাত্র ২৬ রান। এটি ওয়ানডেতে তার সেরা বোলিং ফিগার। এছাড়া ও‘রর্কে ২টি এবং ম্যাট হেনরি ও কাইল জেমিসন ১টি করে উইকেট নিয়েছেন।
জবাবে ব্যাট করতে নামা নিউজিল্যান্ডকে প্রথম ওভারেই ধাক্কা দেন তাসকিন। নিজের এবং ইনিংসের প্রথম ওভারটি মেডেন নিয়ে ফিরিয়েছেন কিউই ওপেনার উইল ইয়ংকে। নিজের প্রথম ওভারে ৫ দিয়ে শুরু করা নাহিদ রানা নিজের দ্বিতীয় ওভারে ফেরান কেন উইলিয়ামসনকে। ৪ বলে ৫ রান করে ফিরেন উইলিয়ামসন। এরপর ৫৭ রানের জুটি গড়েন ডেভন কনওয়ে এবং রাচিন রবীন্দ্র। মোস্তাফিজ এসে ভাঙেন এ জুটি। তার শিকার ৪৫ বলে ৩০ রান করা কনওয়ে। বোল্ড হয়ে ফিরেন এই কিউই ব্যাটার। এরপর দোর্দন্ড প্রতিরোধ গড়ে তোলেন রাচিন রবীন্দ্র এবং টম ল্যাথাম। ক্রমশ চড়াও হয়ে খেলতে থাকে দুজন বাংলাদেশের বোলারদের উপর। ক্যারিয়ারের চতুর্থ সেঞ্চুরি তুলে নেন রবীন্দ্র। ৫০ বলে হাফ সেঞ্চুরি করা রবীন্দ্র সেঞ্চুরি তুলে নেন ৯৫ বলে। দুজনের ১২৯ রানের জুটিটা ভেঙেছেন শেষ পর্যন্ত রিশাদ হোসেন। তবে ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে। ১০৫ বলে ১২টি চার আর এক ছক্কার সাহায্যে ১১২ রান করা রাচিন রবীন্দ্র ফিরেন পারভেজ হোসেন ইমনের হাতে ক্যাচ দিয়ে। রাচিন আউট হওয়ার পরপরই হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন টম ল্যাথাম। এটি তার ক্যারিয়ারের ২৬তম হাফ সেঞ্চুরি। দল যখন ক্রমশ জয়ের কিনারায় পৌঁছে যাচ্ছিল ঠিক তখনই রান আউট হয়ে ফিরেন ল্যাথাম। মাহমুদউল্লাহর থ্রোতে রান আউট হয়ে ফেরার আগে ৭৬ বলে ৫৫ রান করে আসেন টম ল্যাথাম। এরপর ফিলিপস এবং ব্রেসওয়েল মিলে ২৩ বল হাতে রেখে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়েন। ফিলিপস ২৮ বলে ২১ রান করে অপরাজিত থাকেন। ১৩ বলে ১১ রান করে অপরাজিত থাকেন ব্রেসওয়েল।