নগরবাসীর গৃহকর প্রদান সহজতর করতে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) আয়োজিত কর মেলায় স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নিয়েছেন করদাতারা। মেলায় এসে খুব সহজে গৃহকর প্রদান করে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন তারা। গতকাল নগরের দামপাড়া প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের নীচ তলায় এ মেলা অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। চসিকের রাজস্ব শাখা সূত্রে জানা গেছে, মেলা চসিকের রাজস্ব সার্কেল–১ ও রাজস্ব সার্কেল–৫–এর আওতাধীন করদাতারা অংশ নেন। দুটি সার্কেলের ৬৫ টি আপিল নিষ্পত্তি করা হয় মেলায়। আদায় করা হয় ৪৯ লাখ ২৭ হাজার ৪৭০ টাকা পৌরকর। এর মধ্যে রাজস্ব সার্কেল–১ এর আওতাভুক্ত ২৫টি আপিল নিষ্পত্তি করা হয়। আদায় করা হয় ২৭ লাখ ৮ হাজার ২৪৮ টাকা পৌরকর। এছাড়া একই সার্কেল থেকে ট্রেড লাইসেন্স ফি খাতে আদায় করা হয় ১ লাখ ৬৫ হাজার ৭৯০ টাকা। এছাড়া রাজস্ব সার্কেল–৫ এ ৪০টি আপিল নিষ্পত্তি করা হয়। আদায় করা হয় ২২ লাখ ১৯ হাজার ২২২ টাকা পৌরকর। এছাড়া ১ লাখ ৯০ হাজার ৯২৫ টাকা ট্রেড লাইসেন্স ফি আদায় করা হয়।
এদিকে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, চট্টগ্রামকে গ্রিন ও ক্লিন সিটিতে রূপান্তর করতে নিয়মিত কর পরিশোধ করুন। জনগণকে করের অতিরিক্ত বোঝা চাপিয়ে দিতে চাই না, বরং করদাতাদের জন্য স্বস্তিদায়ক ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে চাই। জনগণের কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি তারা যাতে সময়মত ট্যাঙগুলো দিয়ে দেয়। কারণ হোল্ডিং ট্যাঙ যদি আমরা ঠিকমত পেয়ে থাকি তাহলে আমরা শহরকে সুন্দর করতে পারবো।
তিনি বলেন, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনকে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করে তোলার লক্ষ্যে আমরা বিভিন্নভাবে কর আদায় বাড়ানোর চেষ্টা করছি। ইতিমধ্যেই বন্দরকে আমরা চিঠি লিখেছি। আমাদের যে ন্যায্য কর তা যাতে আমাদের দেওয়া হয়। সড়কে বন্দরে পণ্য পরিবহণকারী ৭০–৮০ টনের যান চলাচল করায় রাস্তা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অথচ শহরের অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণের জন্য পর্যাপ্ত অর্থনৈতিক সহায়তা পাওয়া যাচ্ছে না। আমাদের রাস্তা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তার বিপরীতে তাদের কাছ থেকে যথাযথ কর আদায় করা সময়ের দাবি। এছাড়া বিভিন্ন সংস্থা এখনো যারা কর দিচ্ছে না আমরা তাদেরকেও আহ্বান জানাচ্ছি। বিভিন্ন জায়গায় সরকারি অনেক কর বাকি আছে তাদেরকে আমরা আহ্বান জানাচ্ছি সময়মত কর প্রদান করে সহযোগিতা করুন। আমরা আপনাদেরকে ডিসকাউন্ট করার চেষ্টা করছি।
মেয়র বলেন, আমরা জনগণের সহায়ক হিসেবে কাজ করতে চাই। জনগণের উপর কোনো করের বোঝা আমরা চাপিয়ে দিতে চাই না। আমার করদাতা ভাইয়েরা যাতে স্বস্তিদায়ক অবস্থায় কর দিতে পারেন সে ব্যবস্থা আমরা করে দিব। ইনশাআল্লাহ। তবে এর মধ্যে যাদেরগুলো নিষ্পত্তি হয়ে গেছে সেগুলো আর কিছু করার থাকবে না। যেহেতু এটা মিউচুয়াল আন্ডারস্ট্যান্ডিংয়ের মাধ্যমে নিষ্পত্তি হয়ে গেছে। সেগুলো আমাদের কিছু করার নাই।
তিনি বলেন, আমরা চাই, আমাদের সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় শহরকে আরও সুন্দর ও উন্নত করে তুলতে। বর্তমানে, আমরা শহরের শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যখাতে উন্নয়নের জন্য ভর্তুকি দিয়ে যাচ্ছি। আশা করি, আমাদের করগুলো সময়মত প্রদান করলে, ভবিষ্যতে এই খাতগুলোতে আরো বেশি পরিমাণে বাজেট প্রদান সম্ভব হবে। এর পাশাপাশি, শহরের রাস্তাঘাটের উন্নয়ন এবং পরিষ্কার–পরিচ্ছন্নতার জন্যও পর্যাপ্ত বাজেট বরাদ্দ করা হবে, যাতে জনগণের জীবনযাত্রা আরও সুগম এবং উন্নত হয়। কাজেই আমি মনে করি এই কর আপনাদের জন্যই। কাজেই আপনারা কর দিন শহরকে সুন্দর করুন। শহরকে আরও সুন্দর ও আধুনিক করতে ট্রেড–লাইসেন্স অটোমেশনের আওতায় অনেকটা এসে গেছে। শীঘ্রই হোল্ডিং ট্যাঙ অনলাইনে পরিশোধের সুবিধা চালু করা হবে, যাতে নাগরিকরা হয়রানিমুক্তভাবে কর প্রদান করতে পারেন।
মেয়র বলেন, যদি কোনো কর্মকর্তা আপনাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত কিছু করতে চায় আমাদেরকে জানাবেন। তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ বিষয়ে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। আমরা একটা সুন্দর সংস্কৃতি চালু করতে চাই। দুর্নীতিবিহীন সুন্দর একটি সমাজ শহর আমরা বিনির্মাণ করতে চাই।
চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলামের সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা সরোয়ার কামাল, প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা কমান্ডার ইখতিয়ার উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী ও রাজস্ব কর্মকর্তা মো. সাব্বির রহমান সানি।