এস্কিমো হলো আদিবাসী মানুষ। আজকাল এস্কিমোরা ‘ ইনুইট ‘ নামেও পরিচিত। সুমেরু অঞ্চলের বরফ শীতল পরিবেশে বাস করে এস্কিমোরা। এদের নিজেদের কোনো রাষ্ট্র নেই। জমাটবদ্ধ জলরাশি আর বৈরী আবহাওয়ার সাথে প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করে বেঁচে থাকে এস্কিমোরা। এখানে বরফের স্নিগ্ধতার মাঝে, প্রতিমুহূর্তে রয়েছে মৃত্যুর হাতছানি। এরা বলগা হরিণ, সমুদ্রের সিল, তিমি ইত্যাদি শিকার করে নিজেদের খাবার, ঘরবাড়ি, জ্বালানির ব্যবস্থা করে। সিল মাছের তেল দিয়ে, ঘরের বাতি জ্বালায় তারা।
এরা কাঁচা মাংস ভক্ষণ করে। কখনো আধাসিদ্ধ করেও খাবার খায়। ইনুইটরা তীব্র শীত থেকে রক্ষা পেতে, বলগা হরিণের চামড়া, ক্যারিবু পশম দিয়ে তৈরি পোশাক পরিধান করে। পা, উষ্ণ রাখার জন্য, চামড়া দিয়ে পাঁচ স্তর বিশিষ্ট জুতা তৈরি করে। বরফে ঢাকা বিশাল আর্কটিক অঞ্চলে, ছয় মাস দিন, ছয় মাস রাত। যে সময় সূর্য দেখা যায় তখন গ্রীষ্মকাল, আর যখন সূর্যেও দেখা মেলেনা, সেসময় শীতকাল। বেশিরভাগ এস্কিমো শীতকাল কাটান, তুষার স্তরযুক্ত ঘরে, যাকে ইগলু বলে। চরম তুষারঝড় থেকে নিজেদের রক্ষা করার জন্য, বিশাল আকৃতির বরফখন্ড কেটে ইগলু বানানো হয়। বাড়িগুলোর উচ্চতা হয় ৫ থেকে ৬ ফুট। ঘরে যাতায়াতের জন্য স্বল্প জায়গা ফাঁকা রাখা হয়, এ ব্যবস্থাটি রাখা হয় হামাগুড়ি দিয়ে চলাচল করার জন্য। ইগলুর ভিতরের তাপমাত্রা মাইনাস ৭ ডিগ্রী থেকে ১৬ ডিগ্রী সেলসিয়াস হতে পারে কিন্তু এর বাইরের তাপমাত্রা মাইনাস ৪৯ থেকে মাইনাস ৫৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস। গ্রীষ্মকালে ইগলু গলে যায়। এই সময়ে তারা পশুর চামড়ার তাঁবুতে বাস করেন। গ্রীষ্মকালেই এরা মাছ, মাংস, দুগ্ধজাত পনির ইত্যাদি খাবার শীতের সময়ের জন্য সঞ্চয় করে রাখে। বিভিন্ন ধরনের গৃহপালিত পশু লালন–পালন করে ইনুইটরা।
এরা যানবাহন হিসেবে কুকুর আর বলগা হরিণে টানা স্লেজ গাড়ি ব্যবহার করে, এস্কিমো ভাষায় একে বলে ‘কামুতি ‘। জমাটবাঁধা পিছল বরফের উপর দিয়ে, খুব দ্রুত চলতে পারে এই গাড়ি। এছাড়া ‘কায়াক ‘ নামে ছোট নৌকাও যাতায়াতের কাজে লাগায়।
সূর্যালোকের দেখা পাওয়া দূর্লভ বলে, এই অঞ্চল বৃক্ষশূন্য। অল্প কিছু যা গাছপালা আছে, সেগুলো জ্বালানি হিসাবে ব্যবহার করা হয়। উত্তর মেরু সংলগ্ন কানাডা, গ্রিনল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, সবমিলিয়ে প্রায় দেড় লক্ষ এস্কিমো রয়েছে। এস্কিমো ভাষা হাজার বছর ধরে প্রচলিত, কিন্তু আধুনিক যুগের আগে এগুলো লিপিবদ্ধ করা হয়নি। ইনুইটদের তিনটি প্রধান ভাষা রয়েছে, সেগুলো হচ্ছে, আলেউত, ইউপিক এবং ইনুপিক। এদের ধর্মীয় বিশ্বাসের মধ্যে রয়েছে, অ্যানিমিজম, শামানিজম। এরা আত্মার সাথে মধ্যস্থতা করে।
১৯০০ সালের আগে, এস্কিমো জীবনধারা প্রধানত পরিবেশ এবং ঋতুর উপর নির্ভর করে আবর্তিত ছিল। হারপুন, কোচ, তীর ইত্যাদি হাতে তৈরি অস্ত্র দিয়ে শিকার কাজ চালাত। বর্তমানে এরা শিকারের জন্য বন্দুক ব্যবহার করে।
বর্তমানে অনেকে এদের নিজস্ব সমাজ থেকে থেকে বেরিয়ে এসে, আধুনিক সমাজের সাথে মিশছেন আর চিরাচরিত জীবনে সফলতাও পেয়েছেন।