দীর্ঘ এক মাস পর চট্টগ্রামে ন্যায্যমূল্যে পণ্য বিক্রি কার্যক্রম শুরু করেছে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। নগরের ২০ পয়েন্টে বিক্রি হবে পাঁচ ধরনের পণ্য। মসুর ডাল, চিনি, সয়াবিন তেল, ছোলা ও খেজুর– এই পাঁচ পণ্য কিনতে পারবেন নিম্ন আয়ের মানুষ। পুরো প্যাকেজটি কিনতে একজন ভোক্তাকে গুনতে হবে ৬৬৫ টাকা। তবে আধা কেজি খেজুর কেনার সুযোগ রয়েছে। সেই হিসাবে দাম পড়বে ৫৮৭ টাকা ৫০ পয়সা। গত ১২ ফেব্রুয়ারি দৈনিক আজাদীতে ‘টিসিবির ট্রাকসেলে পণ্যের জন্য হুড়োহুড়ি’ শীর্ষক এক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, দীর্ঘ এক মাস টিসিবির ন্যায্য মূল্যের পণ্য বিক্রি বন্ধ থাকার পর ডিলারদের মাধ্যমে ট্রাকসেলে পণ্য বিক্রি শুরু হলেও প্রতি ট্রাকে পণ্য দেয়া হচ্ছে মাত্র ২০০ জনের। যা উপস্থিত ক্রেতাদের তুলনায় একেবারেই নগণ্য। যার কারণে নগরীতে টিসিবির প্রতিটি ট্রাকেই পণ্য নেয়ার জন্য সাধারণ মানুষের হুড়োহুড়ি–কাড়াকাড়ি এবং হাতাহাতির মত ঘটনাও ঘটছে। চট্টগ্রামে টিসিবির স্মার্ট ফ্যামিলি কার্ড অ্যাক্টিভ না হওয়ায় গত একমাস (গত জানুয়ারি মাসে) টিসিবির ন্যায্যমূল্যের পণ্য বিক্রি বন্ধ ছিল।
গত মঙ্গলবার দুপুরে জামালখান মোড়, টাইগারপাস এলাকাসহ নগরীর বিভিন্ন স্পটে গিয়ে দেখা গেছে, টিসিবির ট্রাক আসার আগে থেকেই ওইসব এলাকায় শত শত মানুষ টিসিবির পণ্যের জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু টিসিবি ট্রাকে পণ্য আছে মাত্র ২০০ জনের। যার কারণে ট্রাক আসার সাথে সাথেই ক্রেতাদের মাঝে শুরু হয়ে যায় পণ্য নিয়ে কাড়াকাড়ি। তীব্র রোদে দীর্ঘক্ষণ টিসিবির ন্যায্য মূল্যের জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে পণ্য না পেয়ে শত শত মানুষ ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। অনেকেই টিসিবির ট্রাক ডিলারদের সাথে ঝগড়ায়ও মেতেছেন। এ সময় পণ্য না পেয়ে হতাশ হয়ে ফিরে যাওয়া সাধারণ মানুষগুলো টিসিবির পণ্য বাড়ানোর জন্য দাবি জানিয়েছেন। ক্রেতাদের অভিযোগ একটি ট্রাকে মাত্র ২০০ জনের পণ্য এটা একেবারেই নগণ্য।
এ ব্যাপারে টিসিবির চট্টগ্রাম অফিস প্রধান (যুগ্ম পরিচালক) মো. শফিকুর ইসলাম আজাদীকে বলেন, আমিও দেখতে পাচ্ছি টিসিবির প্রতিটি ট্রাকে পণ্যের জন্য সাধারণ মানুষের দীর্ঘ লাইন। কিন্তু আমারও তো কোনো উপায় নেই। আমার কাছে অর্ডার আছে প্রতি ট্রাকে ২০০ জনের জন্য। আমি চাইলেও বেশি দিতে পারবো না। এটা কর্তৃপক্ষ না চাইলে হবে না। আমাদেরকে যেভাবে অর্ডার দেয়া হয়েছে আমরা সেইভাবেই পণ্য দিচ্ছি। স্মার্ট ফ্যামিলি কার্ড চালু না হওয়া পর্যন্ত এভাবে ট্রাকসেল চলমান থাকবে বলে জানান তিনি।
এদিকে, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নির্দেশনায় সব বিভাগীয় সদর ও পাঁচটি দারিদ্র্যপীড়িত এলাকাসহ মোট ১৩টি এলাকায় ১২ লাখ পরিবারের মাঝে ট্রাকসেলের মাধ্যমে পণ্য বিক্রি কার্যক্রম শুরু হয়েছে বলে জানান বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। খুলনার শিববাড়ী মোড়ে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকে টিসিবির পণ্য বিক্রয় কার্যক্রমের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন। বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘টিসিবি ৬৩ লাখ পরিবারকে ভর্তুকি মূল্যে পণ্য সরবরাহ করে থাকে। স্মার্ট কার্ড রূপান্তরের কাজে খুলনা অঞ্চলের সাফল্যের হার সবচেয়ে বেশি। এ মাসের ২৪ তারিখের মধ্যে বাকি কার্ড অ্যাক্টিভেশন অর্জিত হবে, যার মাধ্যমে সুবিধাভোগীর সংখ্যা বাড়বে। এ সংখ্যাকে আরো বাড়িয়ে অতিরিক্ত ১২ লাখ পরিবারকে রমজান মাসের শেষ দিন পর্যন্ত টিসিবির পণ্যের আওতায় রাখতে ট্রাকসেল কার্যক্রম চালু থাকবে উল্লেখ করে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘এর বিনিময়ে বাজারে পণ্যমূল্য আরো সহনশীল হবে। অতিরিক্ত নয় হাজার টন পণ্য ট্রাকসেলে বিক্রয় হবে। এ কার্যক্রমের মাধ্যমে বাজার নিম্নগামী ও সহনশীল হবে। প্রান্তিক মানুষের জীবনে স্বস্তি আসবে।’
অস্থির বাজারের সময়ে মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্তদের ভরসার জায়গা হলো টিসিবির পণ্য। বাজারে কখনও কখনও সুনির্দিষ্ট কোনো পণ্যের, আবার কখনও একযোগে বিভিন্ন নিত্যপণ্যের স্বাভাবিক সরবরাহে ঘাটতি তৈরি হয়। যদিও এ ঘাটতির পেছনে কাজ করে সিন্ডিকেট। এমন কাজে বাস্তব পরিস্থিতির চেয়ে কারসাজির ভূমিকাই বেশি থাকে। এতে সংশ্লিষ্ট পণ্যের দামও বেড়ে মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যায়। বিশ্লেষকরা বলেন, ‘দেশে সব নিত্যপণ্যের স্থানীয় উৎপাদন হয় না। কিছু পণ্যের উৎপাদন হলেও তা দিয়ে চাহিদা মেটে না। ফলে উৎপাদন হয় না কিংবা কম উৎপাদন হয়– এমন সব পণ্য আমদানির মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ ভোক্তার চাহিদা পূরণ করা হয়। বাজার বিশ্লেষকরা এমন পরিস্থিতিতে টিসিবির প্রয়োজনকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গেই দেখছেন। ট্রাকের মাধ্যমে টিসিবির পণ্য বিক্রি কার্যক্রম সারাবছর চালু রাখা প্রয়োজন।