শবে বরাত বা মধ্য–শা‘বান। আল্লাহ পাক কোরআনে করিমায় যাকে ‘নিসফে মিন শাবান’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। শবে বরাত বা লাইলাতুল বরাত হচ্ছে হিজরী শা‘বান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাত। ইসলামী বিশ্বাস মতে, এই বিশেষ রাতে আল্লাহ তার বান্দাদেরকে বিশেষভাবে ক্ষমা করেন। এ মাসটিতে হজরত মুহাম্মদ মোস্তফা সাল্ল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াল্লাম বেশি বেশি নফল রোজা রাখতেন। রমজানের প্রস্তুতির মাস হিসেবে তিনি এ মাসকে পালন করতেন।
‘শব’ শব্দের অর্থ রাত এবং ‘বরাত’ অর্থ মুক্তি, তাই শবে বরাত অর্থ হলো ‘মুক্তির রাত’। ‘শবেবরাত’কে সৌভাগ্যের রজনীও বলা হয়। আজ সেই সৌভাগ্যের রজনী পবিত্র শবে বরাত। মুসলমানদের কাছে ১৪ শাবান দিবাগত রাত অত্যন্ত বরকতময় ও মহিমান্বিত। এ রাতে মহান রাব্বুল আলামিন মানবজাতির জন্য তাঁর অসীম রহমতের দরজা খুলে দেন। শাবান মাসের পরই আসে পবিত্র রমজান মাস। এই রাতের ইবাদত–বন্দেগীর গুরুত্ব অপরিসীম।
ইসলামি চিন্তাবিদদের মতে– শবেবরাতের বরকত, ফজিলত ও মর্যাদা হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। এ প্রসঙ্গে হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহতায়ালা মধ্য শাবানের রাতে তার সৃষ্টির প্রতি দৃষ্টিপাত করেন এবং মুশরেক ও বিদ্বেষ পোষণকারী ব্যতীত সবাইকে ক্ষমা করে দেন’। ‘শিরক’ ও ‘বিদ্বেষ’ এ দু’টি বিষয় থেকে যারা মুক্ত থাকবেন তারা কোনো অতিরিক্ত আমল ছাড়াই এ রাতের বরকত ও ক্ষমা লাভ করবেন। কিন্তু শিরক ও বিদ্বেষ থেকে মুক্ত হতে না পারলে অন্য আমল দিয়ে ওই রাতের বরকত ও ক্ষমা লাভ করা যাবে না। দুঃখের বিষয় হলো, শবেবরাতে আমরা অনেক নফল আমল করলেও ওই দু’টি শর্ত পূরণের চেষ্টা খুব কম মানুষই করে থাকি। আল্লাহ সবাইকে বুঝার তৌফিক দিন।
এ রাতে আল্লাহ তাআলা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ করেন, তাদের কল্যাণের জন্য দোয়া কবুল করেন এবং আগামীর রিজিক, মৃত্যু ও অন্যান্য বিধান নির্ধারণ করেন। শবে বরাতের রাতে যে কেউ যদি শুদ্ধ মন ও আন্তরিকতার সাথে আল্লাহর কাছে তওবা করে, তবে তার পাপ মাফ হয়ে যায়। এর মাধ্যমে একজন মুসলমান আল্লাহর রহমত লাভ করে পরবর্তী জীবনে কল্যাণের পথে পরিচালিত হতে পারে। এই রাতে বিশেষ ইবাদত, দোয়া, এবং নফল রোজা রাখা খুবই সম্মানিত ও কল্যাণকর। আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইলে, তিনি অবশ্যই মাফ করবেন, কারণ তার রহমত সমস্ত সৃষ্টির ওপর ব্যাপ্ত।
আল্ল্লাহতায়ালা যেকোনো সময় তার বান্দার দোয়া–প্রার্থনা কবুল করতে পারেন। তারপরও বছরের এমন কিছু বিশেষ সময়–ক্ষণ রয়েছে, যে সময়গুলোর মর্যাদা ও ফজিলত অন্য সময়ের তুলনায় বেশি। সেসব দিন–ক্ষণে কৃত ইবাদত, দোয়া–মোনাজাতের মর্যাদা বেশি ও সওয়াবের মাত্রা অপরিসীম। এ বিষয়গুলো মুসলমানদের মনে শবেবরাতে ইবাদত–বন্দেগি ও বেশি বেশি নেক কাজ করার স্পৃহাকে জাগিয়ে তোলে। ফলে দেশব্যাপী শবেবরাত উপলক্ষে সৃষ্টি হয় এক ধর্মীয় আবহ। যা মানুষের ধর্মীয় বিষয়াদি পালনের আগ্রহ সৃষ্টিতে বিরাট সহায়ক হয়।
বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের মুসলমানরাও ভাবগম্ভীর পরিবেশে শবে বরাত পালন করে থাকেন। প্রত্যেক ধর্মপ্রাণ মুসলমান মসজিদে, বাড়িতে নফল নামাজ আদায়, মিলাদ মাহফিল, দান–খয়রাতের মাধ্যমে মানবজাতির কল্যাণ ও সমৃদ্ধি কামনা করবেন। শবে বরাতের এই মহিমা সমুন্নত রাখতে হবে প্রতিটি ক্ষণে, যাতে কোনো অশুভ ও অকল্যাণ আমাদের স্পর্শ করতে না পারে। ইসলামের শান্তি, সম্প্রীতি ও সহাবস্থানের শাশ্বত বাণীর প্রতিফলন ঘটাতে হবে চিন্তা ও কর্মে। ইসলামের শিক্ষা থেকে কখনোই যাতে আমরা বিচ্যুত না হই, সে ব্যাপারেও সদা সজাগ থাকতে হবে। এই রাতে আমরা সবাই আল্লাহর কাছে আবেদন–নিবেদন করব এবং অশ্রুসিক্ত হয়ে আল্লাহর প্রিয়জনদের পাশে থেকে তার দরবারে এভাবে প্রার্থনা করব, হে আল্লাহ! আমরা অপরাধী! তোমার দরবারে পেশ করার মতো কোনো যোগ্যতা আমাদের নেই, তবে আমরা তোমাকে, তোমার প্রিয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মনে–প্রাণে বিশ্বাস করি, অন্তরে রয়েছে তোমার প্রতি অনুরাগ, জাহান্নামের ভয়, জান্নাত লাভের কামনা, তোমার করুণার কোনো শেষ নেই, তুমি করুণা করে আমাকে মানুষরূপে সৃজন করেছ, লক্ষ–কোটি নেয়ামতদানে বাধিত করেছ। হে রাহমানুর রাহীম! তুমি করুণা করে আমাদের ক্ষমা করে দাও।