গাজা দখল এবং সেখানকার ফিলিস্তিনিদের অন্যত্র সরিয়ে নিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের যে পরিকল্পনা বিশ্বজুড়ে নিন্দা কুড়িয়েছে, তা ভূখণ্ডটির ভঙ্গুর যুদ্ধবিরতিকে হুমকির মুখে ফেলবে এবং আঞ্চলিক অস্থিরতা উসকে দেবে। গতকাল বুধবার ঊর্ধ্বতন আরব কর্মকর্তারা এমন আশঙ্কাই ব্যক্ত করেছেন বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
দুবাইতে ওয়ার্ল্ড গভর্নমেন্ট সামিটে আরব লীগের মহাসচিব আবুল গেইত সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, ট্রাম্প যদি তার পরিকল্পনা নিয়ে অগ্রসর হন, তাহলে তিনি ‘শান্তি ও স্থিতিশীলতার ওপর ভয়াবহ প্রভাব ফেলাসহ’ মধ্যপ্রাচ্যকে সংকটের নতুন এক চক্রের দিকে নিয়ে যাবেন। খবর বিডিনিউজের।
ট্রাম্প গত সপ্তাহে গাজার নিয়ন্ত্রণ নেওয়া, এর ২০ লাখের বেশি বাসিন্দাকে অন্যত্র পুনর্বাসন এবং ভূখণ্ডটিকে ‘মধ্যপ্রাচ্যের রিভেরা’ বানানোর পরিকল্পনা হাজির করে পুরো আরব অঞ্চলকে তাঁতিয়ে দিয়েছেন। ২০২৩ সালের অক্টোবরে ইসরায়েলে হামাসের হামলার প্রতিক্রিয়ায় টানা ১৬ মাস তেলআবিব গাজায় তাণ্ডব চালিয়েছে। যুদ্ধবিরতির কারণে তা বন্ধ থাকলেও ভূখণ্ডটির বাসিন্দারা এখন আরেকটি ‘নাকবা’র আশঙ্কা করছেন। ইসরায়েলের জন্ম হওয়া ১৯৪৮ সালের যুদ্ধে ‘নাকবা’ বা ‘বিপর্যয়ে’ প্রায় ৮ লাখ ফিলিস্তিনিকে তাদের ভিটেমাটি ছেড়ে অন্যত্র পালিয়ে যেতে হয়েছিল। এরপর তারা আর কখনোই ফিলিস্তিনে ফিরতে পারেনি। এবার যাদের স্থানান্তর করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে, তারাও আর গাজায় ফিরে আসার অধিকার পাবেন না, বলছেন ট্রাম্প।
এদিকে মঙ্গলবার ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু হুংকার দিয়ে বলেছেন, ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো যদি শনিবার দুপুরের মধ্যে জিম্মিদের না ছাড়ে তাহলে যুদ্ধবিরতি বাতিল বলে বিবেচিত হবে এবং হামাসকে পরাজিত না করা পর্যন্ত ইসরায়েলের সেনাবাহিনী যুদ্ধ চালিয়ে যাবে। হামাস পরে এক বিবৃতিতে যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়নের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে বলেছে, ইসরায়েল চুক্তি ভণ্ডুলের পরিকল্পনা আঁটছে।
গেল মাসের ১৯ তারিখ থেকে কার্যকর হওয়া দুই পক্ষের যুদ্ধবিরতিতে নিয়ম মেনেই হামাস এতদিন ধরে একের পর এক জিম্মিকে মুক্তি দিয়ে আসছিল। কিন্তু ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করছে অভিযোগ করে আর জিম্মি মুক্তি দেওয়া হবে না বলে সোমবার সতর্ক করেছিল তারা। ফের যদি পরিস্থিতি সামরিক সংঘাতে রূপ নেয়, তাহলে যুদ্ধবিরতির সব প্রচেষ্টা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে, বলেছেন গেইত।
আরব দেশগুলোর রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক জোট গালফ কোঅপারেশন কাউন্সিলের প্রধান জাসেম আল–বুদাউয়ি ট্রাম্পকে ওয়াশিংটনের সঙ্গে আরব দেশগুলোর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক স্মরণে রাখতে বলেছেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্টের চাওয়া, জর্ডান ও মিশর গাজার ফিলিস্তিনিদের জায়গা দিক। কিন্তু উভয় আরব দেশই এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে। এ বিষয় নিয়ে কথা বলতে মিশর আগামী ২৭ ফেব্রুয়ারি জরুরি আরব সম্মেলন ডেকেছে।
আবুল গেইত বলছেন, ২০০২ সালে আরব শান্তি উদ্যোগে যে ধারণা সামনে এসেছিল, ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা ও ১৯৬৭ সালের যুদ্ধে ইসরায়েল যেসব এলাকা দখলে নিয়েছিল সেখান থেকে সৈন্য সরিয়ে নেওয়ার বিনিময়ে সব আরব দেশ ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করবে, এমন ভাবনা ফের সামনে নিয়ে আসা দরকার। ট্রাম্প যে পরিকল্পনা নিয়ে হাজির হয়েছেন, তা দশকের পর দশক ধরে চলে আসা যুক্তরাষ্ট্রের দুই–রাষ্ট্র নীতির বরখেলাপ। ওই দুই রাষ্ট্র নীতিতে ইসরায়েলের পাশাপাশি ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের অস্তিত্ব এবং তাদের সহাবস্থানকে স্বীকার করে নেওয়া হয়েছিল।