পানি উন্নয়ন বোর্ডের গৃহীত প্রকল্পের দ্রুত বাস্তবায়ন চাই

শ্রীমাই খালের ভাঙন রোধ

| বুধবার , ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ at ৮:২১ পূর্বাহ্ণ

পটিয়ার শ্রীমাই খালকে বলা হয় সেই অঞ্চলের দুঃখ। কেননা প্রতিবছর পাহাড়ী ঢলে দুর্ভোগ পোহাতে হয় দুই পাড়ের বাসিন্দাদের। অনেকে নিজেদের ঘর হারিয়েছেন। বর্ষা মৌসুম এলেই লোকজনের চোখে ঘুম থাকে না। বাড়িঘর ভাঙনের ভয়ে রাতে ঘুমাতে পারেন না। ভাঙনের ভয়াবহতা অকল্পনীয়। দেখলে ভয় লাগে।

গত ১০ ফেব্রুয়ারি দৈনিক আজাদীতে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানা যায়, শ্রীমাই পাড়ের দুঃখ এবার ঘুচবে। বলা হয়েছে, পটিয়ায় রাক্ষুসী শ্রীমাই পাড়ে বসছে প্রতিরক্ষা ব্লক। এতে দুই তীরে ভাঙন আতঙ্কে থাকা হাজারো মানুষের মাঝে এখন স্বস্তি ফিরে এসেছে। প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে পটিয়ার বেশ কয়েকটি পয়েন্টে ভারী বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে তলিয়ে যায় শত শত মানুষের ঘরবাড়ি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) আওতাধীন উপজেলার বন্যা নিয়ন্ত্রণ, নিষ্কাশন ও সেচ প্রকল্পটি ১১৫৮ কোটি ৩৬ লাখ টাকার। এ প্রকল্পের কাজ ৭ ভাগে চলমান রয়েছে। এর মধ্যে ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ, সেচ অবকাঠামো, খাল পুনঃখনন, বেড়িবাঁধ নির্মাণ, নদীর তীর সংরক্ষণ, ফ্লাড ওয়াল নির্মাণ ও ভূমি অধিগ্রহণ। প্রকল্পের ৩০ কি.মি খাল পুনঃখননের কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। এর মধ্যে গরুলুটা খালের ১০ কি.মি. শ্রীমাই খালের ৫ কি.মি, চানখালী খালের ৩.৫ কি.মি. বগাখাড়া খালের ২ কি.মি. আলম খাল, কাজির খালসহ আরও অন্যান্য খালের ১০ কি.মি খনন কাজ শেষ করা হয়েছে। সেচ অবকাঠামো (স্লুইস গেট) ২৬টির মধ্যে ইতোমধ্যে ২২টির কাজ শেষ করা হয়েছে। অন্য দুটির কাজ চলমান। এছাড়াও ২৫.৫১ কি.মি বেড়িবাঁধের প্রায় ১২.৫০ কিলোমিটার নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। এ মেগা প্রকল্পের আওতায় রয়েছে প্রায় ৩ কিলোমিটার নদীর তীর সংরক্ষণ। এর মধ্যে চরকানাই এলাকায় ১৫০ মিটার, মনসা ১৫০ মিটার, খরনখাইন ২০০ মিটার, ভেল্লাপাড়া খালের ডান তীরবর্তী ৭২০ মিটার তীর সংরক্ষণ কাজ শেষ। সে হিসেবে প্রায় ৪৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। এছাড়াও ৪৮ মিটারের একটা ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণকাজ চলমান রয়েছে। এটি নির্মাণ করা হবে নাইখাইন গ্রামে। ৪.১০ কিলোমিটার ফ্লাড ওয়াল নির্মাণকাজ ৬৫ শতাংশ শেষ করা হয়েছে। বাকি কাজ চলমান রয়েছে।

প্রতিবেদনে ভুক্তভোগীদের মন্তব্য প্রকাশিত হয়েছে। এতে তাঁরা বলছেন, বিগত ২৩ বছরে অনেকে নিজের ঘর হারিয়েছে। বর্ষা মৌসুম আসলেই বাড়ি ভাঙনের ভয়ে রাতে ঘুমাতে পারি না। পানির ভয়াবহতা দেখলে ভয় লাগে। এবার দুই পাড়ে ব্লক বসানোর কারণে নিজেদের নিরাপদ মনে করছি। খালের ভাঙন ও পানি থেকে এবার আমরা নিজেদের ঘর বাড়ি রক্ষা করতে পারবো। শ্রীমাই পাড়ের মানুষের দুঃখ এবার ঘুচবে আশা করি।

তবে ভূমি অধিগ্রহণের কাজ শেষ হয়েছে মাত্র ১০ শতাংশ। ৫৮.৯২৮ হেক্টর জায়গার মধ্যে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৫৭ কোটি টাকা। তার মধ্যে ৫২ কোটি টাকা ভূমি অধিগ্রহণের জন্য ১১টি প্রস্তাবের মাধ্যমে ডিসি অফিসে পাঠানো হয়েছে। তার মধ্যে ৫টি প্রস্তাবের ডিএলসি মিটিং সম্পন্ন করা হয়েছে। বাকি ৬টির কাজ মাঠ পর্যায়ে চলমান রয়েছে বলে জানান পাউবো’র কর্মকর্তারা। এদিকে বন্যা নিয়ন্ত্রণ, নিষ্কাশন ও সেচ প্রকল্প চাষের আওতায় আসছে আরও ১০ হাজার হেক্টর অনাবাদি জমি। হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নেওয়া বন্যা নিয়ন্ত্রণ, নিষ্কাশন ও সেচ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে এই অনাবাদি জমি চাষের আওতায় আনা হচ্ছে। মেগা প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে পটিয়াসহ পাশের কর্ণফুলী, চন্দনাইশ ও বোয়ালখালীতে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পাউবো গৃহীত এ মেগা প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে পটিয়ায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ, নিষ্কাশন ও ১০ হাজার হেক্টর অনাবাদি জমি চাষাবাদের আওতায় আসবে পাশাপাশি নদী ও খালের ভাঙন থেকে সুরক্ষা পাবে কর্ণফুলী, চন্দনাইশ ও বোয়ালখালী উপজেলা।

পটিয়াবাসী এই প্রকল্পের দ্রুত বাস্তবায়ন প্রত্যাশা করেন। তাঁরা বলেন, প্রকল্পের বন্যা নিয়ন্ত্রণ দেয়াল নির্মাণ, বেড়িবাঁধ ও সিসি ব্লকের বেড়িবাঁধ নির্মাণকাজসহ ভৌত কাজের ৬৫ শতাংশ শেষ করা মানে অনেক দূর এগিয়ে যাওয়া। বাকি কাজ দ্রুত শেষ করতে পারলে পটিয়াবাসীর উপকারে আসবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে