জুলাই গণঅভ্যুত্থানে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দায়ের হওয়া মামলার মধ্যে ৩/৪টির রায় চলতি বছরের অক্টোবরের মধ্যে পাওয়ার আশা করছেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। গতকাল মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচার প্রক্রিয়ার সর্বশেষ পরিস্থিতি তুলে ধরে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও তাদের সহযোগী কর্মকর্তাদের বড় একটি অংশের বিচার এ সময়ের মধ্যে শেষ হবে। খবর বিডিনিউজের।
আইন উপদেষ্টা জানান, এই আদালতে ৩০০টির বেশি অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে। প্রসিকিউশন টিম যাচাই বাছাই করে ১৬টি মামলা দায়ের করেছে। চারটি মামলার তদন্ত কাজ এই মাসেই শেষ হচ্ছে। অভিযোগ গঠন করার মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক বিচারকাজ শুরু হবে। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পক্ষশক্তির বিরুদ্ধে সংগঠিত অপরাধগুলোর বিচারকাজে ধীরগতি নিয়ে চলমান সমালোচনার জবাব দিতে সচিবালয়ে নিজ মন্ত্রণালয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসেন এই উপদেষ্টা। আন্তর্জাতিক আপরাধ আদালতের বিচার প্রক্রিয়ার পাশাপাশি আসিফ নজরুল আইন মন্ত্রণালয়ের গুরুত্বপূর্ণ কর্মকাণ্ডও তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, আনুষ্ঠানিকভাবে বিচারকাজ শুরু হওয়ার পর আসামি পক্ষকে তিন সপ্তাহ সময় দিতে হয় প্রস্তুতির জন্য। সে হিসেবে সাক্ষ্যগ্রহণ প্রক্রিয়াটা শুরু হবে ঈদের পর এপ্রিল মাস থেকে। এই আদালতে অব্যাহতভাবে শুনানি হয় বলে এসব মামলার রায় পরবর্তী চার থেকে ছয় মাসের মধ্যে অর্থাৎ এপ্রিল থেকে শুরু করে পরবর্তী চার থেকে ছয় মাসের মধ্যে প্রদান করা যাবে বলে আমরা আশা করি। এই হিসাবে অক্টোবরের মধ্যে ৩/৪টা মামালার রায় পেতে যাচ্ছি বলে আশা করি। চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম সাহেবের সঙ্গে কথা বলে আমার এমনটাই ধারণা হয়েছে। এসব মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ শীর্ষস্থানীয় নেতা ও কর্মকর্তা আসামি হিসাবে রয়েছেন।
বিচারকাজে বিলম্ব হচ্ছে বলে প্রচলিত ধারণার জবাবে আইন উপদেষ্টা বলেন, শেখ হাসিনা জামায়াত ও বিএনপির নেতাদের বিচারকাজগুলো সম্পন্ন করতে প্রতিটি মামলায় গড়ে আড়াই বছর সময় লাগিয়েছিলেন। সেখানে এই আদালতে তার অর্ধেকেরও কম সময় লাগছে। প্রসিকিউশন টিম দিনে–রাতে প্রচুর কাজ করছে তুলে ধরে তিনি বলেন, আগে যে বিচারকাজগুলো হয়েছিল, সেই ঘটনাগুলো ছিল অনেক আগের। আর এখন যে বিচার হচ্ছে এর এতো বেশি সাক্ষ্যপ্রমাণ আছে যে এক বছরের মধ্যে প্রথম কয়েকটা রায় পাওয়া যাবে।
সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্ট ও গায়েবি মামলা : বিগত সরকারের আমলে সাইবার নিরাপত্তা আইনে করা মামলাগুলো দ্রুত প্রত্যাহার করা হবে তুলে ধরে আইন উপদেষ্টা বলেন, সেই আইনের অধীনে মত প্রকাশকে অপরাধ বিবেচনায় নিয়ে যে মামলাগুলো করা হয়েছে প্রথমে সেগুলো প্রত্যাহার করা হচ্ছে। বিগত সরকারের আমলে এ রকম ৩৯৬টি মামলা করা হয়েছিল তুলে ধরে আসিফ নজরুল বলেন, এসব মামলার মধ্যে আইন মন্ত্রণালয় সরকারি কৌঁসুলিদের মাধ্যমে ৩৩২টি প্রত্যাহার করেছে। ৬১টি প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হয়েছে। আগামী তিন/চার কার্যদিবসের মধ্যে সেগুলো প্রত্যাহার হয়ে যাবে।
১৬ হাজার গায়েবি মামলা প্রত্যাহার হচ্ছে : আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে বিরোধী পক্ষকে দমন ও হয়রানির জন্য যেসব গায়েবি মামলা হয়েছিল সেগুলো ধাপে ধাপে প্রত্যাহার শুরু হচ্ছে, বলেছেন উপদেষ্টা। এক্ষেত্রে দেরির কারণও তুলে ধরেন তিনি। আসিফ নজরুল বলেন, পিপি (সরকারি কৌঁসুলি) নিয়োগ শেষ করে কাজ শুরু করেছি মাত্র দুই মাস আগে। এত অল্প সময়ের মধ্যে হাজার হাজার, লাখ লাখ মামলা আইডেনটিফাই করা খুবই কষ্টকর। ১৬ হাজার ৪২৯টি মামলা প্রত্যাহারের জন্য তালিকা করা হয়েছে। এক হাজার ২১৪টি মামলা আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে প্রত্যাহার করা হবে।
পাওয়ার অব অ্যাটর্নি সহজ হচ্ছে : পাওয়ার অব অ্যাটর্নি হস্তান্তরের ক্ষেত্রে বিদ্যমান আইনি জটিলতা নিরসনে আইন মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগ নেওয়ার বিষয়টি তুলে ধরে উপদেষ্টা বলেন, এতে জনভোগান্তি অনেকাংশেই কমে যাবে। এখন প্রবাসী ভাই–বোনদের বাংলাদেশি পাসপোর্ট না থাকলে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি সম্পাদন করতে পারেন না। সংশোধিত বিধিমালার আলোকে বাংলাদেশি পাসপোর্ট না থাকলেও, বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত ব্যক্তির পাসপোর্টে ‘নো ভিসা রিকোয়ার্ড’ লেখা থাকলে কিংবা তার জন্মসনদ থাকলে বা জাতীয় পরিচয়পত্র থাকলেই বিদেশ থেকে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি সম্পাদন করতে পারবেন।
শেখ হাসিনার ন্যূনতম অপরাধবোধ নেই : ভারতে থেকে অনলাইন প্ল্যাটফর্মে দেওয়া হাসিনার সবশেষ ভাষণের সমালোচনা করে আইন উপদেষ্টা বলেন, শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকার সময় যে ঔদ্ধ্যত্ব নিয়ে কথা বলতেন, গত ৬ ফেব্রুয়ারি ঠিক একই টোনে কথা বলেছেন। গণঅভ্যুত্থানে আমাদের যন্ত্রণার স্মৃতিগুলো নিয়ে তিনি পরিহাস করেছেন। এইআই দিয়ে আবু সাঈদের হত্যার দৃশ্য বানান হয়েছে বলে তিনি বলেছেন। এগুলো কি সহ্য করা যায়? সবাইকে উস্কানি দিয়েছেন প্রতিপক্ষের বাড়িতে আগুন দিতে। আশ্চর্য লাগে আমার, আল্লাহ কি মানুষটার মধ্যে মিনিমাম অপরাধবোধ দেয় নাই! যার মধ্যে মিমিমাম অপরাধবোধ থাকে না উনি তো যেকোনো কিছু করতে পারেন। আওয়ামী লীগের নেতা ও কর্মীদের অন্ধবিশ্বাস রয়েছে ওনার ওপর। তারাও একই টোনে কথা বলে। তারা দেশে নানা ধরনের ষড়যন্ত্রমূলক কর্মকাণ্ডে এখন লিপ্ত।