মনের সুস্থতাই শরীরকে সুস্থ করে তোলে। না আমি কোন ডাক্তার নই বা নই কোনো বিশেষজ্ঞ। তবে এমন একটি অসুখের সংস্পর্শে কাটাতে হয়েছিল বেশ কিছুদিন, তাইতো বাস্তবতা উপলব্ধি করে সবার সাথে শেয়ার করছি। বেশ কিছুদিন মাস এমনকি বছরের হতাশা থেকে এমন একটি রোগের উৎপত্তি। রোগ এবং রোগীর লক্ষণগুলো এমনই, যে কেউ বলবে মানসিক ডাক্তার কিংবা নিউরোলজিস্ট দেখান। অনেকে আবার হার্টের ডাক্তার বা বৈদ্য বাড়ি দেখানোর পরামর্শ দেন। আসলে সবাই ভুক্তভোগীকে ভালোবাসেন। তাই দ্রুত রোগ উপশম হওয়ার জন্যই এই ধ্যান ধারণা। কিন্তু বস্তুত রোগটার ধরন এমন যে, হঠাৎ পরিচিত পরিবেশ মানুষ সবই রোগীর কাছে আতঙ্কিত মনে হয়। প্রচণ্ড ভয়ের সঞ্চার হয়। অতি পরিচিত জায়গাগুলো ভয়ংকর হয়ে ওঠে। আমি পারি, পারবো, জানি– এইসব শব্দগুলো তার অভিধান থেকে উঠে যেতে থাকে। ঘরে বাইরে একা থাকা, নিজেকে গুটিয়ে নেওয়া, কারো সামনে যেতে অনিচ্ছা, বই পড়া, টিভি দেখা, মোবাইল এসবে প্রচণ্ড অনীহা কাজ করে। আসলে রোগীর মনে হয় এই জীবনে তার দ্বারা আর কিছুই হবে না।
জীবন এখানেই শেষ কারণ সে কিছুই পারবে না। তাই অনেক সময় মৃত্যুকে শ্রেয় মনে হয়। রোগীর মনের বিপরীতে কেউ কথা বললে তখনই তার মনে হয় তাকে কেউ ভালোবাসে না, পছন্দ করে না। তাই তার সবকিছু থেকেই পিছিয়ে আসা উচিত। ‘পেনিক ডিসঅর্ডার’ একটা নির্দিষ্ট সময়ে ব্যক্তিকে গ্রাস করে। বিশেষ করে ভোরের দিকে এবং সন্ধ্যায়। ১৫ থেকে ২০ মিনিট রোগীকে গ্রাস করে রাখে। আস্তে আস্তে রোগী স্বাভাবিক হতে থাকে। এই অবস্থায় একজন যথার্থ চিকিৎসক পারেন রোগীর উপসর্গ নির্ণয় করে তাকে সারিয়ে তুলতে। পরিবারের নিরলস প্রচেষ্টা, সহানুভূতি যে কতটা প্রয়োজন তা আমার মত ভুক্তভোগী বোঝে। তাছাড়া একজন কৃতজ্ঞতাপূর্ণ ও নিঃস্বার্থ বন্ধুর সাড়া যে কতটা প্রয়োজন হয়ে পড়ে অসুখ না হলে বোঝা যায় না। ভূপেন হাজারিকা যথার্থ বলেছেন,‘মানুষ মানুষের জন্য জীবন জীবনের জন্য, একটু সহানুভূতি কি মানুষ পেতে পারে না’ তবে আমি মনেপ্রাণে চাইবো যেন কেউ এই রোগে না ভোগে। একাকীত্ব কতটা কষ্ট, নির্জীব হয়ে পড়ে থাকা যে কী দুঃসহ তা আমি হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছি।
আমি গভীর চিত্তে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি আমার ভাইস প্রিন্সিপাল আনিকা তেহজীব এর প্রতি। আমি অনেকের কাছে বলেছি আমার আতঙ্কিত হবার কারণগুলো। কিন্তু ভাইস প্রিন্সিপাল এক কথায় আমাকে সাপোর্ট করে আগে সুস্থ হতে বললেন। আমার অবচেতন মন সেদিন ঈশ্বরের পর যেন উনাকে পেয়েছে। আসলে রোগটাই অমন ছিল। আমাকে সাপোর্ট করার। ডাক্তারও তাই বললেন। না বললেই নয়, আমি এমন একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আছি যেখানে পরিবারের একজন হয়ে বলতে গেলে প্রত্যেকে সকাল বিকাল ফোন করে সাহস যুগিয়েছেন। বিশেষ করে পারিবারিক সাপোর্ট, আত্মীয় সর্বজনের সান্নিধ্য, বন্ধুর বাড়িয়ে দেওয়া হাত এই সময় খুব পেতে ইচ্ছো হয়। যা হোক, আবারো বলছি ‘পেনিক ডিসঅর্ডার’ মারাত্মক কিছু নয়। এটি হলে শেয়ার করতে হবে। ভোরের দিকে স্রষ্টার নাম একনিষ্ঠভাবে স্মরণ করতে হবে। মনের জোর বাড়াতে হবে। এই জীববৈচিত্র্যে ঔষধ, চিকিৎসক, বৈদ্য সবই আছে। তবে স্রষ্টার আনুকূল্য ছাড়া কিছুই সম্ভব নয়। আমার ব্যক্তিগত ক্ষুদ্র অনুভূতির বাইরে হয়তো চিকিৎসা শাস্ত্রে অনেক কিছুই আছে। তাই আমায় ক্ষমাসুলভ দৃষ্টিতে দেখবেন। অনেকেই জানতেন না বলে আমায় ফোন করেননি। আমি এখন অনেকটা সুস্থ ও ভালো আছি। সকলেই ভালো ও সুস্থ থাকুন। সকলের মানসিক ও শারীরিক সুস্থতা প্রার্থনা করি।