সড়ক দুর্ঘটনা রোধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে, বাড়াতে হবে নজরদারি

| শুক্রবার , ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ at ৬:৩৭ পূর্বাহ্ণ

গত জানুয়ারি মাসে বাংলাদেশে ৬২১টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৬০৮ জন নিহত হয়েছেন। তাদের প্রায় অর্ধেকের প্রাণ গেছে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায়। নয়টি জাতীয় দৈনিক, সাতটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল, বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া এবং নিজেদের তথ্যের ওপর ভিত্তি করে এই প্রতিবেদন তৈরি করেছে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন। ৫ ফেব্রুয়ারি দৈনিক আজাদীতে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জানুয়ারি মাসে সারাদেশে ২৭১টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় পড়েছে, যা মোট দুর্ঘটনার ৪৩ দশমিক ৬৩ শতাংশ। ওইসব দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ২৬৪ জন, যা মোট নিহতের ৪৩ দশমিক ৪২ শতাংশ। জানুয়ারি মাসের দুর্ঘটনায় ১৪৩ জন পথচারীর প্রাণ গেছে। এ সময় ৭৩ জন যানবাহনের চালক ও সহকারী নিহত হয়েছেন।

রোড সেফটি ফাউন্ডেশন তাদের পর্যবেক্ষণে জানিয়েছে, দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে ২১৪টি জাতীয় মহাসড়কে, ২৬৫টি আঞ্চলিক সড়কে, ৯৬টি গ্রামীণ সড়কে, ৪২টি শহরের সড়কে এবং ৪টি দুর্ঘটনা অন্যান্য স্থানে হয়েছে। দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে ২৫৮টি হয়েছে যানবাহনের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে। এছাড়া ১৩৩টি মুখোমুখি সংঘর্ষ, ১৪১টি পথচারীকে চাপা বা ধাক্কা দেওয়ার কারণে, ৭৫টি যানবাহনের পেছনে আঘাত করায় এবং ১৪টি অন্যান্য কারণে ঘটেছে। জানুয়ারি মাসের দুর্ঘটনায় ৯৭১টি যানবাহন জড়িত ছিল। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি ২৭৯টি মোটরসাইকেল। এছাড়া ১৯১ টি ট্রাক, ১৪২টি বাস, ১৩৭টি তিন চাকার বাহন, ২৪টি কাভার্ডভ্যান, ২৬টি পিকআপ, ১২টি ট্রাক্টর, ১৭টি ট্রলি, ৬টি ট্যাংক লরি, ১১টি ডাম্প ট্রাক, ১৯টি মাইক্রোবাস, ১৫টি প্রাইভেটকার, ২টি অ্যাম্বুলেন্স এবং নসিমনকরিমনসহ স্থানীয়ভাবে তৈরি ৪২ যানবাহন দুর্ঘটনায় পড়েছে।

আসলে নানা রকম পদক্ষেপ গ্রহণ করার পরও সড়কে থামানো যাচ্ছে না মৃত্যুর মিছিল। গবেষণায় দেখা গেছে, ৯০ শতাংশ সড়ক দুর্ঘটনার জন্য দায়ী যানবাহনের অতিরিক্ত গতি এবং চালকের বেপরোয়া মনোভাব। মহাসড়কে যান চলাচলের সর্বোচ্চ গতি বেঁধে দিয়ে এবং গতি পরিমাপক যন্ত্র ব্যবহার করে চালকদের ওই নির্দিষ্ট গতি মেনে চলতে বাধ্য করা হলে দুর্ঘটনা অনেক কমে আসবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। তাছাড়া চালকের দক্ষতার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে লাইসেন্স প্রদানের ক্ষেত্রে। মহাসড়ক নির্মাণ ও সংস্কারের কাজ করতে হবে সঠিক পরিকল্পনা অনুযায়ী।

সড়ক দুর্ঘটনার কারণ ও প্রতিকার সম্পর্কে বিশেষজ্ঞদের পক্ষ থেকে ইতোপূর্বে নানা ধরনের পরামর্শ ও সুপারিশ করা হয়। কিন্তু কেউ তাতে কর্ণপাত করেন বলে মনে হয় না। কর্তৃপক্ষও যেন নির্বিকার। ফলে একের পর এক ঘটে চলেছে দুর্ঘটনা। সড়ক দুর্ঘটনা রোধে ২০১৯ সালে একটি আইন কার্যকর করা হলেও এর যথাযথ বাস্তবায়ন আজও নিশ্চিত করা হয়নি। ফলে দুর্ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তিরা পার পেয়ে যাচ্ছেন সহজেই। দেশে সড়ক দুর্ঘটনা উদ্বেগজনক মাত্রায় বৃদ্ধি পাওয়ায় এ আইনের যথাযথ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা জরুরি হয়ে পড়েছে।

যাত্রী কল্যাণ সমিতির মতে, সড়ক দুর্ঘটনার কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে জাতীয় মহাসড়কে রোড সাইন বা রোড মার্কিং, সড়কবাতি না থাকা। অতি বৃষ্টিতে সড়কে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হওয়ায় যানবাহন চলাচলে ঝুঁকি বেড়েছে। জাতীয়, আঞ্চলিক ও ফিডার রোডে টার্নিং চিহ্ন না থাকার ফলে নতুন চালকরা এসব সড়কে দুর্ঘটনায় পড়েছেন। উল্টোপথে চলাচল, অদক্ষ চালক, ফিটনেসবিহীন যানবাহন, অতিরিক্ত যাত্রী বহন, বেপরোয়া যানবাহন চালানো এবং অতিরিক্ত সময় ধরে চালকের আসনে একজন থাকায় দুর্ঘটনার সংখ্যা কমছে না। ধীর ও দ্রুতগতির বাহনের জন্য পৃথক লেনের ব্যবস্থা করতে সুপারিশ করেছে সংস্থাটি।

বিশ্বব্যাংকের পরিসংখ্যান মতে ১০,০০০ যানবাহনের মধ্যে ৮৫.৬ শতাংশ মারাত্মক ভাবে সড়ক দুর্ঘটনায় দৃশ্যমান। সুতরাং বাংলাদেশের সড়ক সমূহের অবস্থা ভীষণ জীবন বিধ্বংসী বললেও অত্যুক্তি হবে না। রাস্তা বা সড়কগুলোতে যানবাহনের অনিয়ন্ত্রিত উপচে পড়া ভিড় এবং চালকের বেপরোয়া যানবাহন চালানো সড়ক দুর্ঘটনার মূল কারণ। অধিকন্তু পথচারী এবং পশুদের রাস্তা বা সড়ক দখল করে চলাচলও সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ। সড়ক নিরাপত্তা একটি সমন্বিত দায়িত্ব। নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ব্যাপারে প্রত্যেক নাগরিককে স্ব স্ব অবস্থান থেকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। সড়ক অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনায় সরকার এবং সংশ্লিষ্ট সংস্থাসমূহকে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নিয়ে নজরদারি বাড়াতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধকমলকুমার মজুমদার : স্বাতন্ত্র্যের সন্ধানী ঔপন্যাসিক