নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যকারিতা বিগত ছয়মাসে অনেক বেড়েছে। আশা করি আগামীতে আরও বাড়বে। সেজন্য আমাদের জায়গা দরকার। আপনারা দেখেছেন, বন্দরে কি রকম কন্টেনার জট হয়ে গেছে। নিলামে সেগুলো চলে গেলে কিছু জায়গা হবে। আমাদের বন্দর কেন্দ্রিক প্রচুর বিনিয়োগ আসছে। বিশেষ করে বে টার্মিনাল ও লালদিয়ায়। লালদিয়ার পাশে আরেকটি টার্মিনাল নেওয়ার জন্যও ডেনমার্ক আলাপ আলোচনা করছে। আশা করি আগামী চার–পাঁচ মাসের মধ্যে ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের সাথে একটি চুক্তি হবে। বিশ্বব্যাংকের ৬৫০ মিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ আছে এখানে। আমার কাছে মনে হয় এর মধ্যে এটাই সবচেয়ে বড় বিনিয়োগ। বন্দরে বিনিয়োগ হওয়া মানে এ অঞ্চলের উন্নতি এবং লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হওয়া।
গতকাল দুপুরে চট্টগ্রাম বন্দরের কার শেডসহ বিভিন্ন স্থাপনা পরিদর্শনের পর এক নম্বর জেটিতে উপস্থিত সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে তিনি এসব কথা বলেন।
নৌ পরিবহন উপদেষ্টা আরো বলেন, ইতিমধ্যে মংলা পোর্টকে আপগ্রেড করার চেষ্টা চলছে। ওই বন্দরকে আমরা একটি উন্নত মানের পোর্টে আনতে যাচ্ছি। সেটার জন্য আমাদের একটি চীনা প্রকল্প পাস হয়েছে। আশা করি, সেটির কাজ দ্রুতই শুরু হবে। সে প্রকল্পে প্রায়ই ৬০০ কোটি টাকা কমানো হয়েছে। বাংলাদেশে এর আগে কখনও এরকম হয়েছে কি না আমার জানা নেই। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে মাতারবাড়ি, বে টার্মিনালসহ বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ থমকে গেছে এক সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আপনার প্রশ্নের সঙ্গে আমি একমত হতে পারলাম না। থমকে যায়নি। মাতারবাড়ি পোর্ট তো চলছে। আপনারা সেটা গিয়ে দেখেন। মাতারবাড়ি পোর্ট জাপান করছে। আর জাপানিরা জানেন আমাদের মতো না। ওরা কোনো কাজ থমকে রাখে না। মাতারবাড়ি পোর্ট ২০৩০ সালের মধ্যে পূর্ণাঙ্গভাবে কাজ শুরু করবে। বাকিগুলোর (বে টার্মিনাল– লালদিয়া) ব্যাপারে আপনারা আগস্টের মধ্যে ভালো খবর শুনতে পারবেন।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, চট্টগ্রাম কাস্টমসের নিলাম কার্যক্রম দ্রুত করার জন্য কিছু আইনি পরিবর্তন আনা হচ্ছে। তবে এখন কাস্টমসের নিলামের অগ্রগতি যথেষ্ট ভালো। ইতোমধ্যে তারা বেশ কিছু নিলাম করেছে। কিছু প্রসেসে আছে। গতবার এসে যেগুলো সরাতে বলেছিলাম। আজ থেকে তারা সেগুলো সরিয়ে ফেলবে। আগামী রোববারের মধ্যে তারা সেগুলো সব সরিয়ে ফেলবেন। বেশকিছু আইনি পরিবর্তন আনতে হচ্ছে, যাতে এসব জঞ্জাল বছরের পর বছর বন্দরে পড়ে না থাকে। সে আইনি পরিবর্তনের প্রক্রিয়াগুলো এখন প্রক্রিয়াধীন আছে। এটা হয়ে গেলে আমরা দেখব পণ্য ১০–১৫ বছর পড়ে থাকবে না। অতিসত্ত্বর এগুলো নিলাম হবে। আইনি জটিলতার কারণে কাস্টমস নিলাম করতে পারছিল না। মূল কথা হচ্ছে–চট্টগ্রাম বন্দর ক্লিয়ার রাখতে হবে।
নৌ উপদেষ্টা বলেন, কিছুদিন আগে আমি বেশকিছু সীমান্ত এলাকার বন্দরে গিয়েছি, যেগুলো চট্টগ্রাম বন্দরের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার কথা। সেখানে আমি একটি কমিটিও করেছি যে আমাদের লাভ কী হচ্ছে সেটা জানার জন্য। লাভ দেখে আমি সেগুলো রেকর্ডে রাখতে চাই। আমি আটটি স্থল বন্দরকে শনাক্ত করেছি। ১০ বছর হয়ে গেছে, কিন্তু এক পয়সারও আমদানি নেই। আমরা রাজস্ব থেকে সেখানে খরচ করছি। এগুলো যাতে কিছু করা যায় বা বন্ধ করার কী প্রক্রিয়া হবে সেটা ফিরে গিয়ে শুরু করব। এরকম আরও বিষয় আছে সেগুলো বলতে গেলে অনেক সময় লাগবে।
নৌ উপদেষ্টা আরো বলেন, আমি আগামীকাল (আজ) কঙবাজার যাব, পরশু (কাল) টেকনাফে যাব। টেকনাফে মিয়ানমারের সঙ্গে আমাদের একটা বন্দর আছে, সে জায়গাটি দেখব। ওখানে কিছু ইনপুট হয়, সেটি দেখব। একইসঙ্গে ঘুমধুম বলে একটা জায়গা আছে, যেটা আরাকান বা রাখাইনের সঙ্গে আমাদের ল্যান্ড কানেকশন। ভবিষ্যতের দিকে নজর রেখে দেখব, সেখানে একটা ল্যান্ডপোর্ট করা যায় কি না। কারণ আগামীতে মিয়ানমারে যাই থাকুক না কেন, আমাদের সঙ্গে রাখাইন রাজ্যের একটা সম্পর্ক আগে ছিল এবং থাকবে। যেহেতু সেখানে রোহিঙ্গারা ওই এলাকার। কাজেই ওটাও দেখব, ভবিষ্যতের জন্য প্ল্যান করে রাখব, যাতে ওখানে একটা পোর্ট করা যা। এছাড়া টেকনাফ বন্দরটা আমরা স্থলবন্দর বলি, আসলে এটা স্থলবন্দর না। এটা হয়তো নৌবন্দরে পরিণত হবে অথবা আন্তর্জাতিক কোনো বিষয় থাকলে দেখা যাবে, এটা সিপিএ’র (চট্টগ্রাম পোর্ট অথরিটি) অধীনে হতে পারে।
এদিকে গতকাল সকালে চট্টগ্রাম বন্দরের কার শেড পরিদর্শন শেষে ফেরার পথে শ্রমিক দলের বিক্ষোভের মুখে পড়েন নৌ পরিবহন উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম সাখাওয়াত হোসেন। বন্দরের সিসিটি ও এনসিটি ইয়ার্ডকে বেসরকারিকরণ না করার বিষয়ে তার সঙ্গে বসতে চেয়েছিলেন শ্রমিক দলের নেতারা। পরে তিনি গাড়ি থেকে নেমে শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে কথা বলেন। শ্রমিক নেতারা তখন বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরের সিসিটি ও এনসিটি ইয়ার্ড দুটি তৈরি করা ইয়ার্ড। এ দুটি দিয়ে চট্টগ্রাম বন্দর আরও লাভজনক প্রতিষ্ঠান হতে পারে। পাশাপাশি বন্দরের নিজস্ব পরিচালনায় এ দুটি ইয়ার্ড থাকলে প্রায় চার হাজারের মতো কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। তাই আমরা এ দুটি ইয়ার্ডকে বেসরকারিকরণ না করার জন্য উপদেষ্টা মহোদয়ের সাথে দেখা করতে চেয়েছিলাম। বন্দর চেয়ারম্যান বরাবর ৪ ফেব্রুয়ারি চিঠিও দিয়েছি। কিন্তু বন্দর কর্তৃপক্ষের কিছু কর্মকর্তার অসহযোগিতার কারণে আমরা আজ বাধ্য হয়ে বিক্ষোভ করছি। নৌপরিবহন উপদেষ্টা সাংবাদিকদের বলেন, আমি যেহেতু নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি শ্রম মন্ত্রণালয়ও দেখি, সেহেতু তাদের কথাগুলো আমি শুনেছি। দেশের কোনো ক্ষতি হয়, এমন কিছু করতে আমি রাজি নই। এখানে শ্রমিকের কল্যাণ হয় না, এমন কিছু করতেও আমি রাজি না। আমরা যা করব, দেশের ভালোর জন্য, দেশের উন্নতির জন্য। শ্রমিকদের যাতে কল্যাণ হয়, সেটিই আমাদের লক্ষ্য। এসময় চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এস এম মনিরুজ্জামান ও বন্দর সচিব ওমর ফারুক উপস্থিত ছিলেন।
