প্রধান উপদেষ্টার আন্তরিক নির্দেশনা বাস্তবায়িত হোক

সিটি মেয়রের উদ্যোগে সহযোগিতার আশ্বাস

| বৃহস্পতিবার , ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ at ৭:৪০ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম শহরের অন্যতম প্রধান সমস্যা জলাবদ্ধতা দূরীকরণ এবং অবকাঠামোগত উন্নয়নে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অনন্য ভূমিকায় চট্টগ্রামবাসী কৃতার্থ হয়েছেন। চট্টগ্রামের উন্নয়নে তিনি যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করছেন, তা বাস্তবায়ন করা গেলে আন্তর্জাতিকভাবে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বলসহ সারাদেশের অর্থনৈতিক কার্যক্রম আরো গতিশীল হবে। চট্টগ্রামের উন্নয়ন মানে দেশের উন্নয়ন। এই উন্নয়নের ধারায় দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। কোনো অপশক্তি উন্নয়নের ধারাকে নস্যাৎ করতে পারবে না। চট্টগ্রামকে ঘিরে অন্তর্বর্তী সরকারের যে মহাপরিকল্পনা তা বাস্তবায়িত হলে এতদঞ্চলের জীবনযাত্রা থেকে শুরু করে সবকিছুতেই বড় ধরনের ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে।

গত ৪ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন সাক্ষাৎ করতে গেলে ড. ইউনূস চট্টগ্রামের উন্নয়নে তাঁর পরিকল্পনার কথা পুনঃব্যক্ত করেন। জলাবদ্ধতা ও নগর উন্নয়নের বিষয়ে তিনি যাবতীয় পদক্ষেপের সহযোগিতারও আশ্বাস দেন মেয়রকে। একইসঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ১ শতাংশ মাশুল আদায় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রস্তাবনা ‘লজিক্যালি’ (যৌক্তিক) হলে তা বাস্তবায়নেরও আশ্বাস দেন মেয়রকে। এছাড়া বর্জ্যকে সম্পদে রূপান্তরসহ চসিকের গৃহীত বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নেও সহযোগিতার আশ্বাস দেন প্রধান উপদেষ্টা।

প্রধান উপদেষ্টা ও সিটি মেয়রদুজনই চট্টগ্রামের মানুষ। সে হিসেবে দুজনের আলোচনা চলে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায়।

দৈনিক আজাদীতে প্রকাশিত খবরে বলা হয়, সাক্ষাতে মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন প্রধান উপদেষ্টাকে বেশ কিছু বিষয়ে অবগত করেন। তিনি জানান, নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে সিডিএ বর্তমানে ৩৬টি খালে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে, তবে এ প্রকল্পের আওতার বাইরে আরও ২১টি খাল রয়েছে, যা জলাবদ্ধতা সমস্যার অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মেয়র এসব খালেরও উন্নয়ন ও সংস্কারের জন্য নতুন প্রকল্প গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন। বলেন, নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে নদী, খাল, ও নালাগুলোকে সচল রাখতে হবে এবং দখল ও দূষণ রোধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। এই সমস্যার দীর্ঘস্থায়ী সমাধানে কেন্দ্রীয় সরকারের অর্থায়ন ও কারিগরি সহায়তা প্রয়োজন বলে তিনি মত প্রকাশ করেন। বৈঠকে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে আদায়ের জন্য ১ শতাংশ মাসুল নিয়েও আলোচনা হয়। মেয়র বলেন, এই মাসুলের একটি অংশ চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যয় করা হবে। চট্টগ্রাম দেশের প্রধান বন্দরনগরী হওয়ায় এখানকার রাস্তাঘাট, অবকাঠামো ও পরিষেবার ওপর অতিরিক্ত চাপ থাকে। তাই বন্দরের রাজস্ব থেকে নগর উন্নয়নে বরাদ্দ দেওয়া হলে পরিষ্কারপরিচ্ছন্নতা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও সড়ক উন্নয়ন আরও সহজ হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন। মেয়র মনে করেন, শুধু অবকাঠামো উন্নয়ন করলেই জলাবদ্ধতার সমাধান হবে না। নগরবাসীর মধ্যেও যথাযথ সচেতনতা তৈরি করতে হবে যাতে তারা খাল ও ড্রেনে ময়লা না ফেলে, প্লাস্টিকের ব্যবহার কমায় এবং পরিবেশবান্ধব জীবনযাপন চর্চা করে। এ জন্য সিটি করপোরেশন নিয়মিত সচেতনতামূলক প্রচারাভিযান চালানোর পরিকল্পনা করছে।

আসলে দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়া জনসংখ্যা আর জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবের চাপে পিষ্ট চট্টগ্রামকে বসবাসের উপযোগী রাখতে প্রয়োজন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনকে সহযোগিতা করা। এজন্য সব সরকারি সংস্থার সমন্বয়ও দরকার। চট্টগ্রামের উন্নয়নে সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে। অন্য সরকারি সংস্থাগুলোকে সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন এলাকায় প্রকল্প গ্রহণ করতে হলে অনাপত্তিপত্রও নিতে হবে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, নগরীর বেনিফিশিয়ারি সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর নিজস্ব আয় ও তহবিলের একটি অংশ বরাদ্দ নিশ্চিত হলে এই নগরীকে আন্তর্জাতিক মানের উন্নীত করার সমস্ত প্রতিবন্ধকতা দূর হবে। সর্বোপরি নাগরিক সুযোগসুবিধা এবং বিভিন্ন সেবাখাতগুলোর কার্যক্রম যথাযথভাবে নিশ্চিত করা সম্ভব হয়ে উঠবে। মনে রাখা দরকার, জাতীয় অর্থনীতির ৮০ শতাংশের বেশি আয় চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে অর্জিত হয়। এ কারণেই চট্টগ্রামকে বলা হয় জাতীয় অর্থনীতির হৃদপিণ্ড। আমদানিরফতানির ক্ষেত্রেও ৮০ শতাংশ কার্যক্রম পরিচালিত হয় চট্টগ্রাম থেকেই। এই চট্টগ্রাম থেকে সরকার যে ট্যাক্স নিয়ে যাচ্ছে, সেখান থেকে শতকরা ১ শতাংশ দিলে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের আর্থিক সক্ষমতার ভিত্তি সুদৃঢ় হয় এবং চট্টগ্রামের উন্নয়নে অন্য কারোর উপর নির্ভরশীলতা আর দরকার পড়ে না। সিটি মেয়রের উদ্যোগে প্রধান উপদেষ্টা যেভাবে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন, সেটা নগরবাসীর জন্য বড় পাওয়া। আশা করি, প্রধান উপদেষ্টার আন্তরিক নির্দেশনা বাস্তবায়িত হবে অচিরেই।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে