এবচারের বিপিএলের শুরু থেকেই একেবারে অপ্রতিরোধ্য ছিল লংপুর রাইডার্স। কোন দলই থামাতে পারছিলনা তাদের জয়রথ। একে একে টানা আট জয় তুলে নিয়ে সবার আগে প্লে অফও নিশ্চিত করেছিল রংপুর। এরপর ঘটতে থাকে ছন্দপতন। চট্টগ্রামে দুর্বল রাজশাহী প্রথম হারের স্বাদ দেয় রংপুরকে। এরপর টানা পাঁচ ম্যাচে হেরেছে রংপুর। ফলে শুরু থেকেই পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে থাকা দলটি নেমে আসে তৃতীয় স্থানে। গতকাল প্রথম কোয়ালিফায়ারে নামার আগে টি–টোয়েন্টর মাস্টার ক্রিকেটার আন্দ্রে রাসেল সহ জেমস ভিন্স, টিম ডেভিডের মতো তারকাদের দলে ভেড়ায় রংপুর। কিন্তু সে সব কোন কাজে আসলনা। টানা আট জয়ের পর টানা পাঁচ হারে শেষ পর্যন্ত ফাইনালের আগেই বিদায় ঘণ্টা বেজে গেল রংপুর রাইডার্সের। গতকাল প্রথম কোয়ালিফায়ারে রংপুরকে উড়িয়ে দিয়ে ফাইনালের আশা জিইয়ে রাখল খুলনা টাইগার্স। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে রংপুরকে ৯ উইকেটে উড়িয়ে দিয়েছে খুলনা। যদিও গতকালের ম্যাচের আগে খুলনাও দলে যোগ করেছিল শিমরন হেটমায়ার ও জেসন হোল্ডারকে। কিন্তু তাদের ভূমিকার প্রয়োজনই হলো না। মেহেদী হাসান মিরাজ, নাসুম আহমেদ, মোহাম্মদ নাঈম শেখের মতো দেশের ক্রিকেটারদের দুর্দান্ত পারফরম্যান্সেই দারুণ জয়ে তারা এক ধাপ এগিয়ে গেল ফাইনালের দিকে। টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা রংপুর গুটিয়ে যায় ৮৫ রানেই। উইকেট একটু মন্থর ছিল বটে, তবে বেশ ভালো ব্যাটিং উইকেটই ছিল। সেখানেই খুলনার স্পিনারদের সামনে ধসে পড়ে রংপুরের ব্যাটিং। রংপুরের বিপদের শুরু প্রথম ওভার থেকেই। ম্যাচের দ্বিতীয় বলেই জেমস ভিন্সের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে রান আউট হয়ে যান কোনো বল না খেলা সৌম্য সরকার। এরপর কেবলই ব্যাটসমানের আসা–যাওয়া চলতে থাকে। ৭ বলে ১ রান করে বিদায় নেন ভিন্স। নিজের বলে ডানদিকে ঝাঁপিয়ে এক হাতে দুর্দান্ত ক্যাচ নেন নাসুম। এই বাঁহাতি স্পিনারকেই জায়গা বানিয়ে খেলার চেষ্টায় বোল্ড শেখ মেহেদি হাসান। মিরাজকে স্লগ সুইপ করে সীমানায় ধরা পড়েন সাইফ হাসান। প্রথমবার পেস আক্রমণে আনা হয় পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে। দ্বিতীয় বলেই হাসান মাহমুদ এলবিডব্লিউ করে ফেরান সাইফ উদ্দিনকে। পাওয়ার প্লের ৬ ওভারে তাদের রান ছিল ৫ উইকেটে ১৯। নাসুমের বলে ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে শট খেলে আউট হন টিম ডেভিড । করেন ৯ বলে ৭ রান। এরপর নাওয়াজকে স্লগ করার চেষ্টায় আন্দ্রে রাসেল বোল্ড হন ৯ বলে ৪ রান করে। সোহান কিছুটা সময় আগলে রেখেছিলেন এক প্রান্ত। কিন্তু মিরাজ আক্রমণে ফিরে তিন বলের মধ্যে ফিরিয়ে দেন রকিবুল হাসান ও সোহানকে । রংপুর অধিনায়ক করেন ২৫ বলে ২৩ রান। শেষ জুটিতে দারুণ পাল্টা আক্রমণে কিছু রান বাড়ান আকিফ জাভেদ। চারটি চার ও দুটি ছক্কায় ১৮ বলে ৩২ রান করেন পাকিস্তানি এই ক্রিকেটার। তাকে সঙ্গ দিয়ে উইকেট আগলে রাখেন নাহিদ রানা। শেষ জুটিতে আসে ২৬ বলে ৩৩ রান। তাতে ৩১ রানই করেন আকিফ। নাহিদ অপরাজিত থাকেন ৯ বলে শূন্য করে। খুলনার পক্ষে ৩টি করে উইকেট নেন নাসুম এবং মিরাজ। মাত্র ৮৬ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে খুলনা প্রথম ওভারে আকিফকে স্লগ করতে গিয়ে বোল্ড হয়ে যান মিরাজ। তবে এরপর আর নাটকীয় কিছু করতে পারেনি রংপুর । বলা যায় করতে দেননি মোহাম্মদ নাঈম শেখ। ফর্মে থাকা ব্যাটসম্যান আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে দ্রুতই দলকে এগিয়ে নেন জয়ের দিকে। তাকে সঙ্গ দেন অ্যালেঙ রস। ছক্কায় ম্যাচ শেষ করে নাঈম অপরাজিত থাকেন ৩৩ বলে ৪৮ রান করে। ২৭ বলে ২৯ রানে অপরাজিত থাকেন রস। তখনো ৫৮ বল বাকি। এই ইনিংসের পথেই তানজিদ হাসানের ৪৮৫ রান টপকে চলতি বিপিএলে রানের তালিকায় শীর্ষে উঠে যান নাঈম । তার সংগ্রহ ৪৯২ রান। ম্যাচ সেরা হয়েছেন নাসুম আহমেদ।