বাংলা একাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত লেখক অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান বলেছেন, বাংলা একাডেমি যদি আদব–কায়দা না জানে, তাদের কী করার আছে? শনিবার বিকালে অমর একুশে বইমেলা উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সাতজনের হাতে এবারের বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার তুলে দেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। সে সময় উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির সভাপতি অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক। স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম। এরপর অতিথিদের পেছনে পুরস্কারপ্রাপ্তদের দাঁড় করিয়ে সারা হয় পুরস্কারের ফটোসেশন পর্ব। এবার প্রবন্ধ/গদ্যে পুরস্কার পাওয়া সলিমুল্লাহ খানও ছিলেন পেছনে দাঁড়ানো পুরস্কারপ্রাপ্তদের কাতারে। ওই ছবি নিয়ে নতুন করে সমালোচনা শুরু হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। পুরস্কার নেওয়ার পরদিন গতকাল রোববার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাকিম চত্বরে জাতীয় কবিতা পরিষদের এক অনুষ্ঠানে এসে ক্ষোভ ঝেড়েছেন সলিমুল্লাহ খান। খবর বিডিনিউজের।
তিনি বলেন, গতকাল বাংলা একাডেমির পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠান নিয়ে অনেকে ট্রল করছে। আমাকে জিজ্ঞেস করছে, ছাত্রদের সামনে বসিয়ে আপনারা পেছনে দাঁড়িয়েছিলেন কেন। আমি বলেছি, তারা ক্ষমতার প্রতীক হিসেবে বসেছে। বাংলা একাডেমি যদি মানুষকে সম্মান প্রদর্শন করতে না জানে, আমরা তাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করব নাকি? তাদের আদব–কায়দা যদি না থাকে আমরা কী করব?
সমালোচনার জবাবে অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান বলেন, লোকজন বলছে, আপনি পুরস্কার নিলেন কেন? আরে, পুরস্কার নেওয়ার পরেই তো বেইজ্জতটা করছে। বাংলা একাডেমি এবং আয়োজকদের সমালোচনা করে লেখক বলেন, এখানেও দাসত্বের অবসান করতে হবে। দাসত্বের অবসান করতে হলে সবাইকে এক করতে হবে। সকলেই যদি আমরা সমান না হই, তাহলে আমরা এক হব না। ২৪–এর আন্দোলনের মূল বৈশিষ্ট্য ছিল বৈষম্যবিরোধী, এটা সাম্য কথাটারই একটি অনুবাদ। ‘স্বাধীনতা, সাম্য ও সম্প্রীতি : বাংলাদেশের কবিতা’ শীর্ষক আলোচনার মূল বক্তব্যে সলিমুল্লাহ খান সাহিত্যের নানা বিষয়েও কথা বলেন।
জাতীয় কবিতা পরিষদের এ আয়োজনে তিনি বলেন, কবিতা হলো পুরনো পরিচিত কথার নব রূপায়ণ ও নব নির্মাণ। আমাদের কবিরা অতীতেও অনেক কবিতা লিখেছেন, এর দীর্ঘ ইতিহাস আছে। তবে সম্প্রতি জুলাই আন্দোলনে আমাদের কবিতা মঞ্চ থেকে দেয়ালে চলে গেছে।
সলিমুল্লাহ খানের বক্তব্যে উঠে আসে সমাজ ও রাজনৈতিক কাঠামোর নানা সমালোচনাও। তিনি বলেন, গত স্বৈরাচারী আওয়ামী সরকারের স্লোগান ছিল ‘উন্নয়ন না গণতন্ত্র’। তারা বলেছিল গণতন্ত্র নয়, উন্নয়ন। একে তারা বিকল্পে পরিণত করেছিল। তারা বলেছিল, শেখ হাসিনার কোনো বিকল্প নেই। ছেলেমেয়েরা জবাব দিয়েছে বিকল্প ‘আমি, তুমি ও আমরা’। এটিই নতুন একটি কবিতা হয়ে উঠেছে। যদি সেন্স থাকে তাহলে বুঝতে পারব, কবিতাটা কোথায়। একটা জবাবের মধ্যে কবিতা রচিত হয়েছে।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বক্তব্যে অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক। তিনি বলেন, গোটা দক্ষিণ বিশ্বে বাংলা ভাষা তুলনামূলকভাবে অনেক উন্নত।