আবারো আহ্বায়ক কমিটিতেই সীমাবদ্ধ দক্ষিণ জেলা বিএনপি

৫ মাস পর ৫ সদস্যের কমিটি

মোরশেদ তালুকদার | সোমবার , ৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ at ৬:২৪ পূর্বাহ্ণ

দীর্ঘ পাঁচ মাস পর নেতৃত্বের শূন্যতা কেটেছে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির। গতকাল রোববার আলহাজ্ব ইদ্রীস মিয়াকে আহ্বায়ক ও লায়ন মো. হেলাল উদ্দিনকে সদস্য সচিব করে দক্ষিণ জেলা বিএনপির পাঁচ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্র। এর আগে সংগঠনটিতে ২০১৯ সালের ১ অক্টোবর থেকে ২০২৪ সালের ১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দায়িত্বপালন করে আহ্বায়ক কমিটি। অর্থাৎ ঘুরেফিরে আবারো আহ্বায়ক কমিটিতেই সীমাবদ্ধ থাকল দক্ষিণ জেলা বিএনপি। অথচ দীর্ঘদিন ধরে কাউন্সিলের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের দাবি ছিল তৃণমূলের নেতাকর্মীদের। দক্ষিণ জেলায় সর্বশেষ পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয় ২০১১ সালে। এদিকে গতকাল বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত চিঠিতে দক্ষিণ জেলা বিএনপির পাঁচ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। এতে এস আলমের গাড়ি সরানো কাণ্ডে জড়িত হিসেবে যাদের নাম আসে তাদের কাউকে রাখা হয়নি।

এতে আলহাজ্ব আলী আব্বাসকে সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক এবং লেয়াকত আলী ও মিশকাতুল ইসলাম চৌধুরী পাপ্পাকে যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয়। কমিটির ইদ্রিস মিয়া দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি এবং লায়ন হেলাল উদ্দিন আনোয়ারা উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব ছিলেন। এছাড়া আলী আব্বাস ও লেয়াকত আলী অতীতেও যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন। পাপ্পা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি প্রয়াত জাফরুল ইসলাম চৌধুীর ছেলে।

এদিকে নবগঠিত কমিটি নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন দক্ষিণ জেলা বিএনপির সিনিয়র ও তৃণমূল কর্মীরা। এদের কেউ নতুন নেতৃত্বকে স্বাগত জানিয়েছেন। অনেকে আবারও আহ্বায়ক কমিটি গঠন করায় সমালোচনা করেছেন। তবে কমিটির আকার বৃদ্ধি করলে বাদ পড়ার শঙ্কায় সমালোচনাকারীদের কেউ নাম প্রকাশ করতে রাজি হননি। সবার প্রত্যাশা দ্বন্দ্ব ভুলে নতুন নেতৃত্ব সবাইকে নিয়ে কাজ করবে। অবশ্য অনেকে ফেসবুকে পোস্ট করে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহসাংগঠনিক সম্পাদক (চট্টগ্রাম বিভাগ) মীর মো. হেলাল উদ্দিন আজাদীকে বলেন, যারা কমিটিতে এসেছেন অধিকাংশই নিরপেক্ষ, তারা কোনো গ্রুপিংয়ে নেই। তাদেরকে এই জন্য দায়িত্ব দেয়া হয়েছে যেন সবাইকে নিয়ে দ্রুততম সময়ের মধ্যে সংগঠনকে গুছাতে পারেন।

নবগঠিত কমিটির সদস্য সচিব লায়ন মো. হেলাল উদ্দিন আজাদীকে বলেন, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন তারেক রহমান দায়িত্ব দিয়েছেন, আস্থা রেখেছেন এবং বিশ্বাস করেছেন তার জন্য কৃতজ্ঞ। তিনি (তারেক রহমান) যে আস্থা এবং বিশ্বাস রেখেছেন তার মর্যাদা দেয়ার জন্য দলের তৃণমূল কর্মীদের নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে আগামীতে সংগঠনকে পুনর্গঠন করে ৩১ দফা কর্মসূচি বাস্তবায়নে ভূমিকা রাখব।

নবগঠিত কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক মিশকাতুল ইসলাম চৌধুরী পাপ্পা আজাদীকে বলেন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন আমার উপর আস্থা রেখেছেন। সেই আস্থার মর্যাদা রাখবো, দলকে সংঘটিত করার জন্য কাজ করবো।

চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বদরুল খায়ের চৌধুরী আজাদীকে বলেন, দীর্ঘদিন পর চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণায় পটিয়াসহ দক্ষিণ চট্টগ্রামের তৃণমূল নেতাকর্মীদের মাঝে আনন্দউল্লাসে আশার সঞ্চার হয়েছে। কমিটিতে যারা নেতৃত্বে এসেছেন সবাইকে আন্তরিক অভিনন্দন জানাচ্ছি। আশা করি নতুন নেতৃত্ব তৃণমূলের যেসব নেতাকর্মী অবহেলিত কিন্তু সৎ, সাহসী, মেধাবী, সমাজে গ্রহণযোগ্যতা আছে এবং সাংগঠনিক দক্ষতা আছে এমন নেতাকর্মীদের মূল্যায়নের মাধ্যমে প্রত্যাশা অনুযায়ী দলীয় সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করবেন।

দক্ষিণ জেলা বিএনপি নেতা ও আরাফাত রহমান কোকো স্মৃতি সংসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম রাহী আজাদীকে বলেন, দলের হাইকমান্ড যাদের ওপর আস্থা রেখেছেন তাদেরকে অভিনন্দন। আশা করছি সবাইকে সাথে নিয়ে দলকে শক্তিশালী করতে কাজ করবেন তারা।

কমিটি ঘোষণা হওয়ার পর পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করে নবগঠিত কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক লেয়াকত আলী লিখেন, ‘দল আমাকে যথেষ্ট মূল্যায়ন করার চেষ্টা করেছে। আমাকে দেয়া যাকাতি পদটি অন্য কাউকে দিয়ে খুশি করুন।’ তবে এর কিছুক্ষণ পরেই পোস্টটি ডিলিট করে লিখেন, ‘দক্ষিণ জেলা কমিটিতে যে লিয়াকত দেখা যাচ্ছে সেটি আমি নই।’ এরপরে আবার লিখেন, ‘আমি ২০০৯ সালে যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলাম, ১৬ বছর পর কি আমাকে প্রমোশন দেয়া হলো? না অপমান করা হলো’? এরপর আরেকটি পোস্টে তিনি লিখেন, ‘লিয়াকত হোসেন দেখে আমার মনের অবস্থা ভালো ছিল না। তাই আমার স্ট্যাটাস দেখে মনক্ষুণ্ন হবেন না। দলের সিদ্ধান্ত মেনে নিলাম এবং পদত্যাগ প্রত্যাহার করলাম।’

উল্লেখ্য, ঘোষিত কমিটিতে লেয়াকত আলীর নাম ‘লিয়াকত হোসেন’ লেখা হয়। এটাকে টাইপিং মিসটেক বলে আজাদীকে জানিয়েছেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহসাংগঠনিক সম্পাদক (চট্টগ্রাম বিভাগ) মীর মো. হেলাল উদ্দিন।

উল্লেখ্য, দলের তিন নেতার বিরুদ্ধে রাতের আঁধারে এস আলম গ্রুপের গাড়ি সরিয়ে নেয়ার অভিযোগ ওঠার পর গত ১ সেপ্টেম্বর বিলুপ্ত করা হয় জেলা বিএনপির ওই সময়ের আহ্বায়ক কমিটি। এর আগে ২০০৯ সালে সম্মেলনের মাধ্যমে গঠন করা হয়েছিল চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির কমিটি। ওইসময় জাফরুল ইসলাম চৌধুরীকে সভাপতি ও শেখ মোহাম্মদ মহিউদ্দীনকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। যা দলটির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া অনুমোদন দেন। পরবর্তীতে ২০১১ সালের এপ্রিলে আবারো পুর্নগঠন করা হয়। সেবার জাফরুল ইসলাম চৌধুরীকে সভাপতি ও গাজী শাজাহান জুয়েলকে করা হয় সাধারণ সম্পাদক ও শেখ মোহাম্মদ মহিউদ্দীনকে সহসভাপতি করা হয়। তিন বছরের জন্য গঠিত এ কমিটি আট বছর পাঁচ মাস দায়িত্ব পালন করার পর ২০১৯ সালের অক্টোবরে ভেঙে দেয়া হয়। একইবছরের ২ অক্টোবর মহানগর বিএনপির তৎকালীন সিনিয়র সহসভাপতি আবু সুফিয়ানকে আহ্বায়ক এবং বোয়ালখালী উপজেলা বিএনপির তৎকালীন সভাপতি মোস্তাক আহমেদ খানকে সদস্য সচিব করে দক্ষিণ জেলা বিএনপির কমিটি গঠন করা হয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধলামায় অস্ত্রের মুখে সাত শ্রমিককে অপহরণ
পরবর্তী নিবন্ধফটিকছড়িতে যুবককে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ