একুশ আমাদের মূল সত্তার পরিচয়

বইমেলা উদ্বোধনে প্রধান উপদেষ্টা

| রবিবার , ২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ at ৭:৩৩ পূর্বাহ্ণ

একুশে বইমেলার উদ্বোধনে গিয়ে বায়ান্নর ভাষা অন্দোলনে শহীদদের শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, বরকত, সালাম, রফিক, জব্বারের বুকের রক্তে যে অঙ্গীকার মাখা ছিল তাতে ছিল জুলাই অভ্যুত্থানকে নিশ্চিত করার মহাবিস্ফোরক শক্তি। অর্ধশতাব্দী পর এই মহবিস্ফোরণ গণঅভ্যুত্থান হয়ে দেশ পাল্টে দিল। এই বিস্ফোরণ আমাদের মধ্যে নতুন বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় গ্রোথিত করে দিয়ে গেল। ১৭ কোটি মানুষের প্রতিজনের সত্তায়। অমর একুশের এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আমরা এই প্রত্যয়ে শপথ নিতে এসেছি। গতকাল শনিবার বিকালে বাংলা একাডেমির একুশে বইমেলার উদ্বোধনী বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এর আগে বইমেলার উদ্বোধন মঞ্চে প্রধান উপদেষ্টা সাত লেখকের হাতে তুলে দেন বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার।

প্রধান উপদেষ্টা তার ভাষণে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ছাত্রজনতার আত্মত্যাগের কথা স্মরণ করে বলেন, গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্রজনতার ঐতিহাসিক অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে জাতির ঘাড়ে দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে চেপে থাকা স্বৈরাচারী সরকারের পতন ঘটেছে। আমাদের সাহসী তরুণদের এই অভূতপূর্ব আত্মত্যাগ বিশ্বকে চমকে দিয়েছে। এই বিজয়ের মাধ্যমে এসেছে নতুন বাংলাদেশ গড়ার ইস্পাত কঠোর প্রতিজ্ঞা। আমি আজ গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি জুলাইয়ের ছাত্রদের নেতৃত্বে গণঅভ্যুত্থানে যে সকল দুঃসাহসী ছাত্রজনতাশ্রমিক প্রাণ দিয়েছেন এবং নির্মমভাবে আহত হয়েছেন তাদের সকলকে।

তিনি বলেন, বরাবরই একুশে মানে জেগে উঠা। একুশে মানে আত্মপরিচয়ের সাথে মুখোমুখি হওয়া। একুশে মানে অবিরাম সংগ্রাম। নিজের পরিধিকে আরো অনেক বাড়িয়ে নেওয়া। এবারের একুশের প্রেক্ষিত আমাদেরকে নতুন দিগন্তে প্রতিস্থাপন করেছে। একুশ আমাদের মূল সত্তার পরিচয়। একুশ আমাদের ঐক্যের দৃঢ় বন্ধন। এই বন্ধন ছোটবড়, যৌক্তিকঅযৌক্তিক, ক্ষণস্থায়ীদীর্ঘস্থায়ী সকল দূরত্বের ঊর্ধ্বে। এজন্য সকল প্রকার জাতীয় উৎসবে, সংকটে, দুর্যোগে আমরা শহীদ মিনারে ছুটে যাই। সেখানে আমরা শান্তি পাই, স্বস্তি পাই, সমাধান পাই। সাময়িকভাবে অদৃশ্য ঐক্যকে আবার খুঁজে পাই। একুশ আমাদের মানসকে এভাবে তৈরি করে দিয়েছে। একুশ আমাদের পথ দেখায়। একুশ আমাদের জাগিয়ে তোলে।

একুশের টান বাংলাদেশের মানুষকে দুঃসাহসী করেছে উল্লেখ করে ইউনূস বলেন, ছাত্রজনতার অভ্যুত্থান তারই জ্বলন্ত প্রমাণ। দুঃস্বপ্নের বাংলাদেশকে ছাত্রজনতা নতুন বাংলাদেশে রূপান্তরিত করার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েছে। তারা অসম্ভবকে সম্ভব করে দেখিয়েছে। আমাদের তরুণতরুণী, কিশোরকিশোরীরা রাস্তার দেয়ালে দেয়ালে তাদের স্বপ্নগুলো, তাদের আকাঙ্ক্ষাগুলো, তাদের দাবিগুলো অবিশ্বাস্য দৃঢ়তায় এঁকে দিয়েছে। আমাদের রাস্তার দেয়াল এখন ঐতিহাসিক দলিলে রূপান্তরিত হয়ে গেছে। এগুলোর স্থান এখন জাদুঘরে হওয়া ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই।

বাংলা একাডেমির বইমেলা জাতীয় জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত হয়েছে বলে উল্লেখ করেন প্রধান উপদেষ্টা। ক্রমে ক্রমে এর গুণগত ও আয়োজনগত বিবর্তন হতেই থাকবে। বইমেলায় হাজির করার জন্য লেখকলেখিকারা সারা বছর প্রস্তুতি নিতে থাকেন যথাসময়ে নিজ নিজ বই সমাপ্ত করার জন্য। প্রকাশকরা অনেক আয়োজন করেন নিজেদের বইগুলো যথাসময়ে হাজির করার জন্য। গুণগত প্রতিযোগিতা সৃষ্টি করার জন্য এবং আগ্রহ বাড়ানোর জন্য প্রতি বছর বিষয়ভিত্তিক সেরা লেখক স্বীকৃতির আয়োজন করলে লেখকরা এই স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য এবং সেরা লেখকদের সেরা প্রকাশক পাওয়ার ব্যাপারে অনেক সহায়ক হবে।

এর আগে জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে বইমেলা উদ্বোধনের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। বরাবরের মতো এবারও রেওয়াজ মেনে বইমেলার সূচনা সংগীত হিসেবে পরিবেশন করা হয় ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ গানটি। সুরসপ্তকের শিল্পীরা জাতীয় সংগীত ও সূচনা সংগীত পরিবেশন করেন।

শুরুতে ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ ও জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মোহাম্মদ আজম। সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির সভাপতি আবুল কাসেম ফজলুল হক। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাংলা একাডেমির প্রকাশিত বিভিন্ন বই প্রধান উপাদেষ্টাকে উপহার দেওয়া হয়। প্রধান উপদেষ্টা বইমেলার উদ্বোধনী স্মারকে স্বাক্ষর করেন।

আমাদের

পূর্ববর্তী নিবন্ধবরিশালকে হারিয়ে কোয়ালিফায়ারে চিটাগাং
পরবর্তী নিবন্ধঅনেক টাকা নয়, মানুষের পাশে দাঁড়াতে দরকার সুন্দর একটি মন