খাল খননের নামে দুর্নীতি ও লুটপাট করেছে আ. লীগ

নগরে ২১ খাল পরিষ্কারে ১০ কোটি টাকা বরাদ্দ চট্টগ্রামে শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান

আজাদী প্রতিবেদন | শনিবার , ১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ at ৮:০২ পূর্বাহ্ণ

আওয়ামী লীগ সরকারের সময় চট্টগ্রামে খাল খননের নামে দুর্নীতি ও বিপুল অর্থ লুটপাট করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের শিল্প এবং গৃহায়ণ ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান। তিনি বলেছেন, শহরের ভেতরের খালগুলোর দিকে নজর দেওয়া হয়নি। অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ করে দেওয়া হয়েছে। আমরা সেখান থেকে উত্তরণের চেষ্টা করছি। চলতি বছর চট্টগ্রাম নগরের ২১টি খাল পরিষ্কারের জন্য সরকার ১০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। গতকাল শুক্রবার চট্টগ্রাম নগরীর বহদ্দারহাটের বারইপাড়া ও ষোলশহরের সুন্নিয়া মাদরাসা খাল খনন কার্যক্রম পরিদর্শন শেষে এক কিলোমিটার এলাকায় খালনালা খনন ও পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমের উদ্বোধনীতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব বলেন উপদেষ্টা। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। এ সময় তিনি উপদেষ্টাকে খাল খনন কাজের অগ্রগতি তুলে ধরেন। উপদেষ্টা বলেন, আমরা জলাবদ্ধতা নিরসনের কাজটা শুরু করেছি এবং এ কাজ এগিয়ে যাবে। এইবারের বর্ষায় আমরা যতদূর জলাবদ্ধতা কমিয়ে আনতে পারি এবং সেটার মধ্য দিয়ে আগামী বর্ষার আগে জলাবদ্ধতা দূর হবে। তিনি বলেন, এখানে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সাহেব এবং সিডিএ এর চেয়ারম্যান আছেন। সকলের সাথে সমন্বয় করে বিশেষ করে কয়েকজন উপদেষ্টা মহোদয়ের তত্ত্বাবধানে এই কাজগুলো হচ্ছে। এর আগে তিনজন উপদেষ্টা চট্টগ্রামের খাল পরিদর্শন করেন। এরপর সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক বাকলিয়া কৃষিখাল খনন কার্যক্রম ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের অগ্রগতি পরিদর্শন করেন উপদেষ্টা।

অতীতে জলাবদ্ধতা নিয়ে কাজ করা হয়নি বলে মন্তব্য করে আদিলুর রহমান খান বলেন, গত অনেক বছর নদী, নালা, খাল ও শহরের ভেতর যে জলাবদ্ধতা, এসবের কোনো খোঁজ করা হয়নি। ব্যাপক অভিযোগ ছিল। জনগণের জন্য যেসব কাজ করা দরকার ছিল সেসব হয়নি। প্রতি বছর চট্টগ্রাম পানিতে তলিয়ে যায়। আমরা চেষ্টা করছি শহরের ভেতরে যতগুলো নালাখাল, সমুদ্র ও নদীতে পানি যাওয়ার প্রবাহ সেগুলো চালু করার। তিনি বলেন, এগুলো কিন্তু রাতারাতি করা যাবে না। কাজটি আমরা শুরু করলাম। সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, অন্যান্য বছরের মতো এবার পানি উঠবে না, তবে জলাবদ্ধতা হবে। বিগত বছরে নগরীর ৩ সেবা সংস্থা; সিডিএ, সিটি কর্পোরেশন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের সমন্বয়হীনতার কারণে প্রতিবছর নগরবাসীকে জলাবদ্ধতার কবলে পড়তে হয়েছে। আমরা সবাই সমন্বিতভাবে কাজ করলে নগরবাসীকে জলাবদ্ধতা থেকে রেহাই দিতে পারব বলে আশা করছি। আগে সমন্বয় ছিল না, এখন আমরা সব সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে কাজ করছি। ডা. শাহাদাত হোসেন আরও বলেন, এরআগে তিনজন উপদেষ্টা জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের কাজ পরিদর্শনে এসেছিলেন। আশা করছি একটি রেজাল্ট পাব। হয়তো এ মৌসুমে ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ ফলাফল পাব। ১০০ শতাংশ রেজাল্ট পেতে আরো এক বছর সময় লাগবে।

জানা গেছে, এর আগে গত ১৯ জানুয়ারি জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের অগ্রগতি দেখতে চট্টগ্রাম এসেছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের গঠিত উচ্চপর্যায়ের মনিটরিং টিমের তিন উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ও ফারুকআজম বীর প্রতীক। পরিদর্শন শেষে চট্টগ্রাম নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলোকে আগামী বর্ষার আগে করণীয় হিসেবে ১১ দফা কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণ করে দিয়েছিলেন তারা। কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলোকে আগামী মে পর্যন্ত চার মাস সময় বেঁধে দিয়েছিলেন তিন উপদেষ্টা। এ সময়ের মধ্যে কর্মপরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়নে ব্যর্থ হলে সংস্থাগুলোকে শাস্তির আওতায় আনা হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টারা। চট্টগ্রাম নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে সিডিএ দুটি, সিটি কর্পোরেশন একটি এবং পানি উন্নয়ন বোর্ড একটি করে প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। চার প্রকল্পে মোট ব্যয় প্রায় ১৪ হাজার ৩৫১ কোটি টাকা। এরমধ্যে ২০১৭ সালে শুরু হওয়া ‘চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল পুনঃখনন, সমপ্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন’ শীর্ষক ৮ হাজার ৬২৬ কোটি টাকা ব্যয়ে সবচেয়ে বড় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে সিডিএ। প্রকল্পের অগ্রগতি প্রায় ৭৫ শতাংশ।

এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার ড. মো. জিয়াউদ্দীন, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম, সচিব মোহাম্মদ আশরাফুল আমিনসহ বিভিন্ন দপ্তর সংস্থার প্রতিনিধিবৃন্দ। এরপরে উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. হামিদুর রহমান খান, বিভাগীয় কমিশনার ড. মো. জিয়াউদ্দীন, সিডিএ চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. নুরুল করিমসহ জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাবৃন্দ চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল পুনঃখনন, সমপ্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন প্রকল্পের কার্যক্রম পরিদর্শন করেন।

এদিকে গতকাল সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তাদের সাথে মতবিনিময় করেছেন শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান। নগরীর সার্কিট হাউসে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় এ সময় উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হেসেন, চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার ড. মোহাম্মদ জিয়াউদ্দীন, অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) ও চট্টগ্রাম চেম্বারের প্রশাসক মুহাম্মদ আনোয়ার পাশা ও চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম।

সভা শেষে চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার ড. মোহাম্মদ জিয়াউদ্দীন বলেন, শিল্প উপদেষ্টা মহোদায় যেসব দপ্তরের সাথে জলাবদ্ধতা প্রকল্পের সংশ্লিষ্টতা রয়েছেসেসব দপ্তরের প্রতিনিধিদের সাথে তিনি মতবিনিময় করেছেন। প্রত্যেকের লক্ষ্যমাত্রা তিনি জানলেন। কাজের ক্ষেত্রে কোনো চ্যালেঞ্জ আছে কিনা তা তিনি শুনলেন। এছাড়া চ্যালেঞ্জগুলো যে যে পর্যায়ে রয়েছে, সেগুলো সমাধানে তিনি দায়িত্ব নিয়েছেন। আমরা যে সূদুরপ্রসারী সিদ্ধান্ত নিয়েছি তা না, অন্তত সামনে বর্ষা মৌসুমে নগরবাসীকে স্বস্তি দেয়ার লক্ষ্য নেয়া হয়েছে। এছাড়া যে লক্ষ্যমাত্রাগুলো নির্ধারণ করা হয়েছে, আগামী চার মাসের মধ্যে সেগুলো ঠিক মতো পালন করা হচ্ছে কি না, সেগুলোর ফলোআপটা উপদেষ্টা মহোদয় নিবেন। লক্ষ্যমাত্রাগুলো কী এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আসলে আমাদের যে নালাগুলো আছে, সেগুলো বিভিন্ন কারণে বন্ধ হয়ে আছে। নাব্যতা দেয়ার জন্য যে প্রকল্পগুলো চলছে, সেগুলো তদারকি করাটা একটা বড় কাজ। এছাড়া জনসচেতনতার বিষয়টা কতদূর নিয়ে যেতে পেরেছি, কারণ পরিষ্কার করলে তো হবে না, ভবিষ্যতে যাতে পুনরায় ভরাট হয়ে না যায়, সেগুলো তদারকি করার বিষয়ে কথা হয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআল্লাহর আদেশ নিষেধ মেনে চললে সুখী সমৃদ্ধ সমাজ গড়ে তোলা সম্ভব
পরবর্তী নিবন্ধআজ অমর একুশে বইমেলা উদ্বোধন করবেন প্রধান উপদেষ্টা