প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক পদটার গুরুত্ব অনেক বেশি এবং শুধু অর্থমূল্যে এর বিবেচনা না করার পরামর্শ দিয়েছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা প্রফেসর ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার। এ সময় বেতন–ভাতা, পদোন্নতিতে না পোষালে শিক্ষকদের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চাকরি থেকে চলে যাওয়ার পরামর্শও দিয়েছেন তিনি। গতকাল রোববার দুপুরে নগরীর চট্টগ্রামে প্রাইমারি টিচার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউট (পিটিআই) পরিদর্শনে গিয়ে এক মতবিনিময় সভায় উপদেষ্টা এসব কথা বলেন। এর আগে সকালে তিনি সার্কিট হাউজের সভাকক্ষে মাঠপ্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে ‘প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়নে করণীয়’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন। প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপদেষ্টা বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার শিক্ষকদের উদ্দেশে বলেন, শিক্ষকতায় এসে আমি কী পেয়েছি, কী পাইনি সেটার জন্য আফসোস করে আমি আমার পেশায় ফাঁকি দিচ্ছি কিনা, ক্লাসে ফাঁকি দিচ্ছি কিনা, সেটা ভাবতে হবে। প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষকের পদটার গুরুত্ব কিন্তু অনেক বেশি। অর্থমূল্যে এটার বিচার হবে না। কারণ, একটি শিশুর মানুষ হয়ে ওঠার প্রাথমিক পাঠটুকু সে পাচ্ছে প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষকের কাছ থেকে। তিনি বলেন, নতুন শিক্ষা পরিবারে যুক্তদের বলব, যদি সমাজে আপনাদের জন্য যে শ্রদ্ধার আসন আছে, সেটা অটুট রাখতে হয় বা ফিরিয়ে আনতে হয়, তাহলে শিক্ষকতা পেশাকে অর্থমূল্যে বিবেচনা করা যাবে না। অবশ্যই আপনাদের আর্থিক উন্নয়নের জন্য সরকারের উদ্যোগ আছে। কিন্তু যারা মনে করবেন যে, না আমার তো পোষাচ্ছে না, খুব ভালো, তাহলে আপনি প্রাথমিকে থাকবেন না, প্রাথমিক ছেড়ে চলে যান, প্রচুর লোক আছে প্রাথমিকে যুক্ত হওয়ার জন্য। আর যদি মনে করেন আপনি থাকবেন, তাহলে আপনি এভাবে ভাবতে পারেন যে, আপনি সামাজিকভাবে একজন মূল্যবান মানুষ হয়ে উঠবেন। সেটা সম্ভব আপনার কর্তব্যপরায়ণতার মাধ্যমে। কিন্তু আপনি অবশ্যই আপনার পদোন্নতির চেষ্টা করবেন।
উপদেষ্টা বলেন, প্রাইমারি এডুকেশন সেক্টরে আমরা অনেক ভালো ভালো শিক্ষক পাচ্ছি। তাদের সুন্দরভাবে ট্রেনিং দেওয়া হচ্ছে। সরকারি নানা উদ্যোগ তাদের জন্য আছে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, শ্রেণিকক্ষে আমরা সেটার ফলাফল পাচ্ছি না। তাহলে এত যে ভালো, মেধাবী লোকজন প্রাইমারি লেভেলে শিক্ষকতা পেশায় আসছেন, তারা কী শুধু কর্মসংস্থানের অভাবে আসছেন কি না, এ আলোচনাটা চলে আসে।
এখানে একটা বিষয় হচ্ছে শিক্ষকদের বেতন–ভাতার বিষয়টা। এটা নিয়ে অসন্তুষ্টি আছে। আবার সহকারী শিক্ষক হিসেবে যিনি জয়েন করছেন, অনেকসময় দেখা যাচ্ছে তিনি এই পদ থেকেই অবসরে যাচ্ছেন। এটা কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। পদোন্নতি হবে না, বেতন–ভাতা বাড়বে না, এটা হতে পারে না। এখন এক্ষেত্রে বিগত সরকার কি করেছে? প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষকদের চাকরিটাকে সেকেন্ড ক্লাস ঘোষণা করল। কিন্তু ফাঁকটা রেখে দিল কোথায়– তাদের গ্রেডটা বাড়ানো হলো না। ফলে তারা সেকেন্ড ক্লাস অনুযায়ী যে বেতন–ভাতা পেতেন সেটা থেকে তারা বঞ্চিত হলেন। এসময় জানুয়ারি মাসের মধ্যেই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শতভাগ শিক্ষার্থী নতুন বই হাতে পাবেন বলে জানান প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা ডা. বিধান রঞ্জান রায় পোদ্দার।
চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার ড. মো. জিয়াউদ্দীনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সচিব আবু তাহের মো. মাসুদ রানা, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো. আব্দুল হাকিম, বিভাগীয় পরিচালক আতাউর রহমান।
এদিন সকালে সার্কিট হাউজে উপদেষ্টা বলেছেন, অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়েছে, শিক্ষকদের মানোন্নয়ন হয়েছে। কিন্তু সাক্ষরতার ক্ষেত্রে উন্নয়ন হয়নি। যেটা মূল লক্ষ্য সেটা অর্জিত হয়নি। আমাদের এখনও কাগজেপত্রে মাত্র ৭৮ শতাংশ স্বাক্ষর। এর মধ্যেও গলদ রয়ে গেছে। যারা প্রকৃতপক্ষে স্বাক্ষর হয়ে ওঠে না, হাইস্কুলে পিছিয়ে থাকে, তারা উচ্চশিক্ষায় কখনও ভালো করতে পারে না। আমাদের প্রকৃত স্বাক্ষর ৫০ শতাংশেরও নিচে। নিরক্ষর জাতি দিয়ে আমরা উন্নতি করতে পারবো না। বিভিন্ন জাতির বিভিন্ন ধরনের সম্পদ থাকে কিন্তু আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ জনসম্পদ। এই সম্পদকে যদি কাজে লাগাতে না পারি তাহলে আমাদের কোনো ভবিষ্যৎ নেই।












