খাগড়াছড়িতে দিনে-রাতে কাটা হচ্ছে পাহাড়

পরিবেশের ক্ষতি, বর্ষায় ধসের শঙ্কা

সমির মল্লিক, খাগড়াছড়ি | রবিবার , ২৬ জানুয়ারি, ২০২৫ at ৮:১০ পূর্বাহ্ণ

খাগড়াছড়ির জেলা সদর দীঘিনালা, মাটিরাঙাসহ বিভিন্ন উপজেলায় চলছে পাহাড় কাটা। প্রকাশ্যে বা রাতের আঁধারে পাহাড়ের মাটি কেটে অন্যত্র বিক্রি করা হচ্ছে। শুষ্ক মৌসুম এলেই খাগড়াছড়িতে শুরু হয় পাহাড় কাটা। জমি ভরাটসহ বিভিন্ন বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহারের জন্য পাহাড় কাটা হচ্ছে। প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিতে রাতের আঁধারের কাটা হয় পাহাড়। বেআইনিভাবে পাহাড় কাটার কারণে আসন্ন বর্ষায় তা ভেঙে পড়ার শঙ্কা স্থানীয়দের। প্রচলিত আইন অমান্য করে পাহাড় কাটায় ক্ষোভ জানিয়েছে তারা। সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, খাগড়াছড়ি পৌর শহরের সবুজবাগ, উত্তর সবুজবাগ, শালবন, কুমিল্লা টিলা, মাইসছড়ি, দীঘিনালার বোয়ালখালী, বন বিহার সংলগ্ন এলাকা, মাটিরাঙা, গুইমারা, মানিকছড়ির বিভিন্ন এলাকায় পাহাড় কাটা হচ্ছে। মূলত পাহাড় কেটে বাড়ি নির্মাণের পাশাপাশি বিভিন্ন বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। দীঘিনালার বোয়ালখালী মৌজার হেডম্যান ত্রিদীপ রায় পোমাং জানান, একটি চক্র আইনের তোয়াক্কা না করে দেদারছে পাহাড় কেটে জমির শ্রেণী পরিবর্তন করে ফেলছে। বর্ষা মৌসুম এলে কর্তন করা পাহাড় ধসে পরার একটা আশঙ্কা রয়েছে। প্রকাশ্যে পাহাড় কাটার পাশাপাশি অনেকে প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিতে রাতের আঁধারে পাহাড় কাটছে।

মেরুং ইউনিয়নের সাবেক সদস্য গণেশ ত্রিপুরা বলেন, এখন যেভাবে পাহাড় কাটা হচ্ছে তা বর্ষা এলে ভেঙে পড়বে। আমাদের ভোগান্তি বাড়বে। বিভিন্ন চক্র পাহাড় কাটার সাথে জড়িত। অবিলম্বে পাহাড় কাটা বন্ধ করতে হবে।

পাহাড় কাটার দায়ে ইতোমধ্যে একাধিকবার অভিযান চালিয়ে জরিমানা ও জেল দিয়েছে প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তর। ঘন ঘন বন্যার জন্য অনিয়ন্ত্রিতভাবে পাহাড় কর্তনকে দায়ী করেছেন পরিবেশবাদীরা। ইতোমধ্যে পাহাড় কর্তনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে জরিমানা করেছে প্রশাসন। ভবিষ্যতেও এমন অভিযান চলমান থাকবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

দীঘিনালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মামুনুর রশীদ বলেন, পাহাড় কাটার খবর পেলেই আমরা অভিযান পরিচালনা করছি। ইতোমধ্যে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এছাড়া পরিবেশ অধিদপ্তরের মাধ্যমে আইনগত ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে। যারা পাহাড় কাটবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পাহাড় কাটা বন্ধ না হলে পরিবেশগত বিপর্যয়ের শঙ্কা পরিবেশবাদীদের। উন্নয়নের জন্য পাহাড় না কেটে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের অনুরোধ করেছেন পিটাছড়া বন ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ উদ্যোগের প্রতিষ্ঠাতা মাহফুজ রাসেল। তিনি বলেন, আধুনিক এই যুগে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে পাহাড় না কেটে উন্নয়ন করা যায়। পাহাড় কাটার কারণে ঘন ঘন বন্যা হচ্ছে। পাহাড় কাটার কারণে নদী, খাল ভরাট হয়ে যাচ্ছে। পাহাড় কাটা বন্ধ না হলে পরিবেশগত বিপর্যয় হচ্ছে।

পাহাড় কাটা বন্ধে জেলা প্রশাসনের পাশাপাশি কাজ শুরু করেছে পরিবেশ অধিদপ্তর। সম্প্রতি পাহাড় কাটার অভিযোগে একজনকে জেলও দিয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর। পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড় কাটা বন্ধে অধিকতর গুরত্ব দেওয়া হবে জানিয়েছেন পরিবেশ অধিদপ্তর খাগড়াছড়ি জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক হাসান আহমদ। তিনি বলেন, এটা যেহেতু পার্বত্য এলাকা, সেক্ষেত্রে আমরা পাহাড় কাটা বন্ধে সব ধরনের পদক্ষেপ নেব। পাহাড়খেকোদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা রুজু করা হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকৌতুক কণিকা
পরবর্তী নিবন্ধনতুন দুই আন্তঃনগরের টিকেট বিক্রি শুরু, চলবে ১ ফেব্রুয়ারি থেকে