জান্নাত লাভের অধিকারী সৌভাগ্যবানরা

ডা. মোহাম্মদ ওমর ফারুক | শুক্রবার , ২৪ জানুয়ারি, ২০২৫ at ৯:০৯ পূর্বাহ্ণ

জান্নাত পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা একজন মুমিন বান্দাকে আল্লাহর বিধানগুলো যথাযথভাবে পালনে উৎসুক করে তুলে। সার্বিক পাপপঙ্কিল পরিবেশ থেকে নিজেকে বাঁচানোর জন্য দিনরাত মেহনত করে থাকেন মুমিন ব্যক্তিরা। আল্লাহর রাসূল (সাঃ) এর সুন্নত অনুযায়ী মেনে চলার চেষ্টা করেন তারা। ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলার মধ্যেই আত্নতৃপ্তি খুঁজে পায় একজন সাচ্চা ঈমানদার ব্যক্তি। জীবনে চলার পথে মানুষদের অনেক ঘাতপ্রতিঘাতের সম্মুখীন হতে হয়। এই শ্বাপদ সংকুল পরিবেশকে এগিয়ে নিয়ে কঠিন থেকে কঠিনতর হক পথে চলার মধ্যেই নিহিত রয়েছে একজন মুমিন ব্যক্তির জিন্দেগীর সফলতা। জীবনের বাঁকে বাঁেক যে কঠিন পথ রয়েছে তা দূরীভূত করা একবারেই সম্ভব নয়। এই দুর্গম পথ পাড়ি দেওয়ার জন্যে প্রয়োজন পড়ে সাহস আর নির্ভরতা। সত্য ও হক কথার উপর টিকে থাকা বর্তমান সময়ের জন্য সবচেয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জ। আর এই চ্যালেঞ্জকে মোকাবেলা করা অত্যন্ত কষ্টসাধ্য বিষয়। এ সত্ত্বেও অনেক আল্লাহর বান্দা রয়েছেন যারা এই কঠিন পরিস্থিতিকে মোকাবেলা করার জন্য সমস্ত কায়িক পরিশ্রম, মেহনত, প্রচেষ্টা বিলিয়ে দেয় অবলীলাক্রমে। সূরা ফুসসিলাতে আল্লাহতায়ালা বলছেন, ‘যারা বলে, আল্লাহতায়ালাই হচ্ছেন আমাদের রব, অতঃপর (ঈমানের উপর) তারা অবিচল থাকে, (মৃত্যুর সময় যখন) তাদের কাছে ফেরেশতারা নাযিল হবে এবং তাদেরকে বলবেন, তোমরা ভয় পেয়ো না, তোমরা চিন্তিত হয়ো না; তোমাদের কাছে যে জান্নাতের ওয়াদা করা হয়েছিল তোমরা তারই সুসংবাদ গ্রহণ কর’সূরা ফুসসিলাত৩০। এই আয়াত থেকে স্পষ্টভাবে বুঝা যায়, যারা আল্লাহর উপর বিশ্বাস করে এবং তাদের দৃঢ়তাকে বন্ধন করে তাদের জন্য রয়েছে মহা সুসংবাদ। আল্লাহতায়ালার একত্ববাদে যারা বিশ্বাসী এবং তাঁর উপর অটল থেকেছে জিন্দেগীভর এবং আল্লাহর আদেশ অনুযায়ী নিজের জীবনকে পরিচালিত করেছে তাদের কোন ভয় নেই, তাদের কোন চিন্তা নেই। হযরত সাইয়্যেদ ইবনে ইমরান (রঃ) বলেন, ‘এই আয়াতটি হযরত আবু বক্কর (রঃ) এর সামনে তেলওয়াত করা হলে তিনি বলতেন, যেমন: এর দ্বারা ঐ লোকদেরকে বুঝানো হয়েছে যারা কালেমা পাঠ করার পর আর কোন শিরক করে না’-(তাবারী ২১/৪৬৪)। অতঃপর তিনি আসওয়াদ ইবনে হিলার (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেন, ‘হযরত আবু বক্কর (রঃ) বলেন, ‘যারা বলে: আমাদের রব আল্লাহ। অতঃপর অবিচল থাকে। এই আয়াত সম্পর্কে তোমাদের ধারণা কি? তারা বললো; আমাদের রব আল্লাহ, অতঃপর ওতে তারা দৃঢ় থাকে এবং পাপ থেকে নিজেদেরকে সরিয়ে রাখে। হযরত আবু বক্কর (রঃ) বললেন, তোমরা এই আয়াতের সঠিক ব্যাখ্যা করতে পারলে না। তা হবে : আমাদের রব আল্লাহ। অতঃপর ওতে দৃঢ় থাকে এবং আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন মিথ্যা মাবুদের প্রতি তারা ঝুঁকে পড়ে না -(তাবারী ২১/৪৬৪)। হযরত সুফিয়ান ইবনে আবদুল্লাহ আস সাকাফি (রঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেন, একটি লোক বলে, ‘হে আল্লাহর রাসূল (সাঃ) আমাকে ইসলামের এমন একটি বিষয় বলে দিন যা সব সময় আমল করব। রাসূল (সাঃ) তখন তাকে বললেন, তুমি বল; আমার রব হল আল্লাহ, অতঃপর ওর উপর তুমি অটল থাক। আমি বললাম: এতো আমল হল। আমি বেঁচে থাকব কি হতে তা আমাকে বলে দিন। তখন রাসূল (সাঃ) তার জিহ্বা ধরলেন এবং বললেন; এটা হতে। তাদের উপর অবতীর্ণ হয় ফেরেশতারা এবং বলে; তোমরা ভীত হয়ো না, চিন্তিত হয়ো না এবং তোমাদেরকে যে জান্নাতের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল এবং তার জন্যে আনন্দিত হও। ইমাম মুসলিম (রহঃ) তাঁর সহীহ গ্রন্থে এবং ইমাম নাসাঈ (রহঃ) তাঁর সুনান গ্রন্থে হযরত সুফিয়ান ইবনে আবদুল্লাহ, আস সাকাফি (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি বললাম; হে আল্লাহর রাসূল (সাঃ) ইসলাম সম্পর্কে কিছু নসিহত করুন; যে সম্পর্কে আপনার উপরে আর কাউকে যেন আমার জিজ্ঞাসা করতে না হয়। তখন তিনি বললেন: বল, ‘আমি ঈমান এনেছি আল্লাহর উপর’ অতঃপর এর উপর দৃঢ় থেকো। তাদের উপর অবতীর্ণ হয় মালাইকা/ফেরেশতা। হযরত মুজাহিদ (রহঃ), হযরত জায়েদ ইবনে আসলাম (রহঃ) এবং তার ছেলে আবদুর রহমান বলেন, ‘ইহা হল মৃত্যুর সময়’। অতঃপর তারা বলবে; তোমরা ভীত হয়ো না। এর অর্থ হচ্ছে পরকালে তুমি যার সম্মুখীন হবে সেজন্য ভয় কর না। ‘তোমাদেরকে যে জান্নাতের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। তার জন্য আনন্দিত হও’ অর্থাৎ তোমার মৃত্যুর সময় তুমি তোমার পেছনে পৃথিবীতে যে স্ত্রী, সন্তান, সম্পদ এবং ঋণ রেখে যাচ্ছতার দায়িত্ব আমরা গ্রহণ করব তোমার পক্ষ থেকে। আল্লাহর রাসূল (সাঃ) বলেছেন, ‘মুমিনের রূহকে সন্বোধন করে ফেরেশতারা বলেন: হে পবিত্র রূহ, যে পবিত্র দেহে আছ, বের হয়ে আস, আল্লাহর ক্ষমা, ইনাম এবং নেয়ামতের দিকে, ঐ আল্লাহর দিকে চল যিনি তোমার প্রতি রাগান্বিত নন-(আহমেদ ৪/২৮৭)। মুমিনরা যখন তাদের কবর থেকে উঠবে তখনই ফেরেশতারা তাদের কাছে আসবেন এবং সুসংবাদ শুনাবেন। হযরত যায়েদ ইবনে আসলাম (রহঃ) বলেন: সে যখন মারা যায় তখন তারা তাকে সুসংবাদ দেন এবং আরো সুসংবাদ প্রাপ্ত হবে কেয়ামত দিবসে যখন উত্থিত হবে। মৃত্যুর সময় ফেরেশতারা মুমিনদেরকে একথাও বলবেন, পার্থিব জীবনেও আমরা তোমাদের সাথে তোমাদের বন্ধু হিসাবে ছিলাম, আল্লাহর আদেশে তোমাদেরকে সওয়াবের পথে পরিচালিত করতাম, কল্যাণের পথ দেখাতাম এবং তোমাদের রক্ষণাবেক্ষণ করতাম। অনুরূপভাবে আখেরাতেও তোমাদের সাথে থাকব। তোমাদের ভয়ভীতি দূর করে দিব, কবরে, হাশরে, কেয়ামতের মাঠে, পুলসিরাতের উপর মোট কথা সব জায়গায় তোমাদের বন্ধু ও সঙ্গী হিসাবে থাকব। এরপরে আল্লাহতায়ালা বলেন, জান্নাতে পৌঁছে তোমরা যা কিছু চাইবে, তাই পাবে। তোমাদের মনোবাঞ্চনা পূর্ণ হয়ে যাবে। এটা হবে ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু আল্লাহর পক্ষ থেকে আপ্যায়ন। তাঁর স্নেহ, মেহেরবাণী, ক্ষমা, দান সীমাহীন ও খুবই প্রশস্ত। অতএব জান্নাত পাওয়ার জন্যে সমস্ত মুসলমানদেরকে কঠিন মেহনত করতে হবে। এমনি এমনি আল্লাহতায়ালা জান্নাতে প্রবেশ করাবেন না। তাদেরকে কঠিন ধৈর্যের পরীক্ষা দিতে হবে। আল্লাহর পথে জানমাল দিয়ে জিহাদ করতে হবে। আর এই জান্নাত পাওয়ার পথ কন্টকাকীর্ণ, কুসুমাস্তীর্ণ নয়, এই পথে রয়েছে অসংখ্য কাঁটাযুক্ত বৃক্ষ। সেগুলোকে সরিয়ে কিংবা মাড়িয়ে ঈমানদৃপ্ত সাহস নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে মঞ্জিলে মকছুদের দিকে। তবেই কাঙ্ক্ষিত জান্নাত পাওয়ার সম্ভাবনা হয়তো কিছুটা পাওয়া যেতে পারে।

লেখক: সভাপতিরাউজান ক্লাব, সিনিয়র কনসালটেন্ট (ইএনটি), রাঙ্গামাটি জেনারেল হাসপাতাল

পূর্ববর্তী নিবন্ধঅনেক কথা বলার ছিলো বাবা
পরবর্তী নিবন্ধবিশ্বমানবতার কল্যাণে গাউসুল আযম মাইজভাণ্ডারীর (ক.) অবদান